সে এক সময় ছিল। আমাদের কথা হত যত, হাসি হত ততোধিক। আমাদের কথা-কথির আড়ালে , আদতে হত দেখাদেখি। মাঝ দিয়ে খুনসুটি আর মাখামাখি। সময়ে সময়ে সেসব দিনে ছিল আহ্লাদের হাতাহাতি।
আজ স্মৃতির মণিকোঠায় পেছনের শহীদ মিনার যেন সেইসব দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
একটা ক্যাম্পাস চোখে চোখ রেখে কত কিছু বলে যায়। বহুদিন পর এখানে এসে তাই নিজের প্রথম যৌবনে ফিরে যাই। হায় সেই সময়। আমাকে অন্ধকারে তলিয়ে দেয়ার ক্ষণ। আমার জীবন থেকে জান কেড়ে নেয়ার নিরব সাক্ষী।
একদিন ন্যুহ্য না হয়ে নতজানু হয়েছিলাম। বলেছিলাম বড্ড ভালোবাসি। দেড়শ বছর আগেও আমি
তোমায় খুঁজে পথের ধারে
ক্লান্ত হয়ে শুয়ে ছিলাম
আজও আছি।
দেড়শ বছর পরেও আমি।
ভালোবাসার সেই কাল ছিল হেলাফেলা ছেলে-খেলার দিন। কারো কারো ভালোবাসা ছিল কেবল হাত বদলে রঙিন। সেদিন তারা মন ভেঙে বড় মানুষের সাথে সুখী হতে চেয়েছিল। তারা বড় হয়েছে বটে সুখ আর ছোঁয়া হয়নি। আত্মা পায়নি প্রশান্তি। তাদের কারণে স্থির হওয়া হয়নি কারো কারো। হয়নি ঘর নেওয়া। সেই তারা ভালোবেসে ভালোবাসা পায়নি বলে পৃথিবীর প্রতি বিরাগ হয়ে পথের বিবাগী হলো। কূলে না ফেরা পাখির মতো কাটিয়ে দিল কতশত বছর। তারপর একদিন বড্ড ক্লান্ত হয়ে বনে উড়ে যাওয়া পাখি ফিরে এলো বটে। আবার এলো লোকালয়ে, মানব সমাজে। কিন্তু হৃদয়টা, ভালোবাসার সেই বিশাল হৃদয় রেখে এলো বনে।
যেখানে এখনও ফুল ফোটে। পাখি গান গায়। এখনো মিতালী সূর্য সন্ধ্যায় কাঁদতে কাঁদতে অস্ত যায়। আধারের বুক চিড়ে বিশাল পাহাড় সটান দাঁড়িয়ে থাকে। সাবাহ আসে বখতিয়ারের ঘোড়ার খুড়ের তালে তালে। সেখানে আজও ভালোবাসা আছে। মানবসমাজে তাই দেহটা ঘুরাঘুরি করলেও মন পড়ে থাকে বনে। বনজ সমাজই তার অধিক প্রিয়।
এতকিছু দেখেও
তবু মানুষ বুঝেনা ভালোবাসা চলে গেলে আর কিছু থাকে না। যা থাকে তা কেবল ভুল জীবনের জীবন নামের উচ্ছিষ্ট।
তবে আত্মা রেখে আসা বিবাগী সে পুরুষ ঠিকই বুঝে নেয়, কেন মানুষ বেঁচে থেকেও মরে যায়। কেউ কেউ চারপাশে থেকেও হয় সমাজ বিচ্ছিন্ন। কিভাবে মানুষ নিজের কাছেই হয়ে যায় বড্ড অচেনা ও একা। এভাবেই সে তার চিরচেনা চারপাশ থেকে হারিয়ে যায়। আর সেসব থেকেই জন্ম নেয় দুঃখ বেদনার কাব্য। শত বছর পর হয়ে যায় কোনো এক অমর এলিজি।
হায় প্রেমিকের হৃদয়। দুঃখ নীরবে সহো। প্রেম তুমি দুখি বলেই তোমাকে নিয়ে সাত পৃথিবীর মোহ।
গল্প: এলিজি
ছবির স্থান-কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০২২ রাত ১১:৫৪