somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনভেস্টিগেটর

২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এখানে যে স্টেশনের কথা বলা হচ্ছে তা ঢাকার অদূরে কোন এক স্টেশন। সে স্টেশনে রেলমন্ত্রী আসবেন। রেলমন্ত্রীর সাথে গল্পের কোন সম্পর্ক নেই, তাই কোন আমলের কোন মন্ত্রী আর কোন স্টেশন সেটা উল্লেখ করারও বাধ্যবাধকতা নেই। )


স্টেশনে রেলমন্ত্রী আসবেন। চারদিকে সাজ সাজ রব। অনেক ডিজিটাল প্রিন্টেড ব্যানারে মন্ত্রীকে নিয়ে স্তুতিতে ভর্তি। "হে মাননীয়", "হে বন্ধু প্রতিম" ওমুক ট্রেন সার্ভিস, তমুক ট্রেন চালু করায় প্রাণভরা শুভেচ্ছা। মন্ত্রী এসব দেখবেন। দেখে মনে মনে বেশ ভালোই লাগবে। সামনের নির্বাচনে পাড়ার কাউন্সিলরকে আরো গুরু দায়িত্ব দিবেন। চলে যাওয়ার সময় এমপির বাড়িতে নাস্তাও করবেন। পুরো বিয়ে বাড়ির আয়োজনের মতো। বর মন্ত্রী, কনে ট্রেন। বরের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।

রকি সিল্কসিটি এক্সপ্রেস থেকে নেমে এসব আয়োজন দেখে চমকে গেল। পুরনো বস্তির মতো স্টেশনটাকে হঠাৎ এই রূপে দেখে তার মনেই হল না যে এখানে গত পরশুও বস্তি ছিল। চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে আশেপাশের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করল, "ভাই কাহিনী কি?" কেউ কিছুই জানে না, তবুও সবাই আগ্রহ ভরে সব কাজ দেখছে। কে ফ্যান লাগাচ্ছে, কে লাইট লাগাচ্ছে, কে রঙ করছে সব। হুমায়ূন আহমেদ হিমুর একটা বইয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ব্যস্ত কোন রাস্তার ধারে কেউ যদি অকারণেই কোন গর্ত খুড়ে, সেটা দেখার জন্যও মানুষ জড়ো হয়ে যায়। এখানে তো রীতিমত পার্লারে বৌ কে সুন্দরী করে সাজানোর মতো কাজ চলছে। হঠাৎ চোখে পড়লো একজন মধ্যবয়স্ক লোক সব কাজের তদারকি করছে। একে বললে হয়তো বা কিছু জানা যাবে।

-ভাই মন্ত্রী কি আসবেন নাকি?
-হ
-কবে?
-কাইলকা
-কখন?
-বিয়ানে।
-ট্রেনে চড়ে আসবেন?
-ফাইজলামি হরুইন?
-না ভাই ফাইযলামি করব কেন? কখনো কোন মন্ত্রীকে দেখি নাই তো ট্রেনে চড়ে আসতে, ভাবলাম উনি নাকি আবার পরিবর্তনে বিশ্বাসী, তাই প্রথার বাইরেই ট্রেনে চড়ে আসবেন।
-ভাই ডিসটাব(ডিস্টার্ব) কইরেন না তো রাস্তা মাফুইন।
-ভাই আরেকটু।
-ভাই ফেইন(পেইন) দিইন না যে। যাইন না, দেহুইন না কাম করতাছি।
-আচ্ছা উনার কি টিকিট কাটা লাগবে? নাকি বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
-ঐ ফাইজলামি করস? ওই ধর তো শালারে, বাইন্ধ্যা জেলে ভইরা রাখ।

রকি হতভম্ব হয়ে গেল। ক্ষমতাবানেরা ক্ষমতা দেখাতে পছন্দ করে। সরকারি চাকরীর একেকজন লোক হলেন সেসব ক্ষমতাবানদের একেকজন। তারা ক্ষমতা দেখাবেনই। তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে রকির ধারণা আছে। কিন্তু তারা যে রকির ট্যাক্সের টাকায় বেতন পাওয়া কর্মচারী সেটা রকির মাথায় আসছে না। জাতি হিসেবে আমরা আসলেই খুব দুর্বল চিত্তের। এ মুহুর্তে রকির ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু রকির ভয় লাগছে না।

-আরে ভাই উত্তেজিত হন কেন? আমি কে আপনি জানেন?
-কোন বাহের ফুতরে তুই?
-আমি বাপেরই পুত, তবে বাপের পরিচয় দিলে তুই থেকে স্যার স্যার করবেন।

লোকটা একটু ভড়কে গেল। গলার স্বরে আগের মতো আর বিরক্তি বা উত্তেজনা নেই। হঠাত করেই যেন সব চুপসে গেল। আগের মতো আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারটাও অনেক কমে গেছে।

-আইনহে ক্যাডা?
-আমি ইনভেস্টিগেশনের লোক, মন্ত্রীর খাস লোক।

এবারে লোকটার চেহারায় দেখার মতো পরিবর্তন আসলো।
-স্যার আসসালামুয়ালাইকুম।
-হুমম। নাম কি?
-সুলায়মান। স্যার।
-বলেন।
-আসলে স্যার আইনহেরে চিনতে পারি নাই। সব অফিসারের তো কালা কোট থাকে, আইনহের নাই, তাই চিনতে পারি নাই।
-না চিনলে কিভাবে হবে? ইনভেস্টিগেটররা তো আর মাইক বাজাতে বাজাতে আসবে না, "তাড়াতাড়ি সব ঠিকঠাক করুন, আমি আসছি।" আমার অফিসার যদি এসে দেখেন আপনি এভাবে কথা বলছেন, চাকরি আর থাকবে?
-স্যার বড় স্যাররে কিছু কইয়েন না স্যার, পায়ে ধরি।
-আচ্ছা ঠিক আছে। ব্যাপার না।
-স্যার বসেন চা খান। ওই স্যাররে চা আনায় দে।
-না চা খাবো না। পুরো স্টেশনে ইনভেস্টিগেট করতে হবে। কে কি করছে দেখতে হবে।
-এরপরেও একটু খান, পাঁচ মিনিটে কিচ্ছু হবো না।
-আচ্ছা একটা বেনসনও সাথে নিয়ে আসতে বলেন।
-স্যার সময়টা একটু বাড়ানো যায় না। পরশু থেইকা খাটতেছি।
-এক সপ্তাহ আগে থেকে আপনাদের জানানো আছে, আপনারা পরশু থেকে ধরলেন কেন? দাঁড়ান নোট করে রাখছি।
-স্যার একটু যদি আড়ালে আসতেন।
-কি ঘুষ দিবেন?
-ছি ছি স্যার। কি বলেন? আইনহের মতো লোকেরে আমার মতো গুরীবে আর কি ঘুষ দিব?
-আচ্ছা এখানেই বলুন।
-আপনার সঙ্গে দাঁড়ায় একটা ছবি তুলতাম স্যার। আমি আবার সামনের শ্রমিক নির্বাচনে দাড়ামু তো আপনের ছবি একটা থাকলে ভালো লাগতো।
-ছবি তোলা গুনাহর কাজ। আমি ছবি তুলি না।

কথা বলতে বলতেই হঠাত ডানদিকে রকি দেখতে পেলো স্টেশন মাস্টার আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে তদারকি করার জন্য। সাথে একজন হোমড়া-চোমড়া লোকও আছে। সত্যিকারের ইনভেস্টিগেশন অফিসারই নয় তো? ঐ তো কালো কোট পড়া। তাড়াতাড়ি এখান থেকে কেটে পড়া দরকার,

-আচ্ছা ঠিক মতো কাজ করেন। ভিআইপি ওয়েটিং রুমের এসিটা খুলে শোভন চেয়ারের এসি রুমে লাগিয়ে দেন। শোভন আর সুলভের চেয়ারগুলো সব পাল্টান। পুরাতন চেয়ার কি মন্ত্রীকে দেখাবেন নাকি?
-জ্বি আচ্ছা স্যার সব করতেছি। আর শুনুন, আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।
-স্যার কি?
-ঐ যে কালো কোট পড়া লোকটাকে দেখছেন না, স্টেশন মাস্টারের সাথে, সে আমার নিচের পোস্টে, তাঁকে দেখা মাত্রই বলবেন, “কত টাকার ধান্দা করতে এসেছেন? ধান্দা করেন ভাল কথা, কোন কথা বলবেন না। চুপচাপ কাজ দেখে যান। ধান্দা শেষে মাল নিয়ে চলে যাবেন"

সুলায়মানের মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে গেল। ঢোক গিলতে গিলতে সে বলল,
-স্যার চাকরী যাবো গা তো।
-আহ আমি তো আছি।
-হাছাই কইতাছুইন?
-আচ্ছা উনি আসছেন, আমি ওদিকটায় গেলাম। আর এই যে কাপটা রাখুন।

স্টেশনমাস্টারের সাথে ইনভেস্টিগেটর কাছে আসা মাত্রই রকি হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল। একবার মনে হল দৌড় দেওয়া যাক। হাঁটতে হাটতেই অনেক দূর চলে গেল। হঠাত পেছন থেকে কড়া গলায় কেউ কাউকে কিছু একটা বাজে গালি দিচ্ছে। পিছনে তাকিয়ে রকি দেখে সুলায়মানের সাথে ইনভেস্টিগেটর হাতাহাতি শুরু করে দিয়েছে, আর রকিকে চিৎকার করে সুলায়মান ডাকছে,

-ও স্যার আহুইন। দেহুইনা না ব্যাডায় কি কয়, আইনহেরে কয় চিনবারই পারতাছে। গাড়ানি দিয়া থুইয়া যাইন।”

রকি পেছনে না তাকিয়ে আরো জোরে হাটা দিল। এখন সে স্টেশনের বাইরে। খুব জলদি একটা অটো রিক্সায় চড়তে হবে। আপাতত ১ মাস এদিকে আর আসা যাবে না। মানুষ খুব দ্রুত অতীত ভুলে যায়।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩০
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×