বিধাতার মত নির্ভয় কথাটা কবি কাহাকে উদ্দেশ্য করিয়া লিখিয়াছেন, এখন বোঝা যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী তরুণ শিক্ষার্থীদের হাব-ভাব আচার-আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, যেন উনারা দেশের মালিক।স্কুলে কি কেউ ইনাদের সংবিধান পড়াইসিলেন? বিরাট ভুল করছেন!সংবিধানে লেখা ছিল, পরিষ্কার লেখা ছিল, "ক্ষমতার মালিক জনসাধারণ"। তো হয়েই গেল, বেশ পড়ুয়া লক্ষ্মী ছেলে-মেয়ের মত ওইটা মুখস্ত করে ফেলসেন।আর গোটা দেশকেও সবক দিতেছেন। বাধ্য হইয়া আমিও সংবিধানখানি খুইলা দেখলাম, কথা সত্য।
২০১৮ এর সড়ক আন্দোলনের বাচ্চাদের মুখে এই কথা শুনছিলাম।পুলিস, আমলা, আদালত- সবাই রাষ্ট্রের কর্মচারী।মালিক জনগণ।
দেখা যাচ্ছে, "সংবিধানের প্রাধান্য" অনুচ্ছেদের ৭ এর ১ অ ২ ধারাকে বাস্তবে পরিণত করতে এনারা বদ্ধপরিকর।
৭৷ (১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷
(২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷
এখন কি বিপদ দেখেন, যারে পছন্দ করতেসেন না, সেই প্রধানমন্ত্রীরে পার্মানেন্ট সরকারী চাকরী থেকে এক কথায় বরখাস্ত করে দিল।প্যারিস অলিম্পিক থেকে ধরে নিয়ে অনিচ্ছুক অধ্যাপক ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা পদে বহাল করলেন।এঁরা কিভাবে চিন্তা করে সেইটা জুলাইয়ের ১৬ তারিখ আবু সাঈদদের মৃত্যুকে দুই হাত প্রসার করে অনায়াসে বরণ করার দৃশ্য থেকেই বোঝার চেষ্টা করতে পারেন, কোন কূল কিনারা পাবেন না।মৃত্যুকে কে বা কাহারা এইভাবে বরন করতে পারে? এঁদের আত্মমর্যাদা বোধ এতটাই প্রখর যে আমাদের প্রজন্মের মত বছরের বছর জ্বি হুজুর দাসত্বের জীবনকে আর এক মুহূর্তও বরদাস্ত করতে রাজী না।তারা যে দেশের মালিক, সেটা তারা পরিষ্কারভাবে জানে। আর যারা জানে না, বা জেনেও না জানার ভান করে প্রতারণা করে যাচ্ছিল, তাদের খোলাখুলি জানায়ে দিসে!
ইউনুসকে মেধা কোটায় তারা নিয়োগ দিলেন। ইউনুস কেন শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ, তার পেছনে ভীষণ রকম প্রখর বাস্তব বুদ্ধি দেখা জাইতেসে।উনারা ইন্টারন্যাশনাল গেইমে ইউনুসকে নিয়ে নামছেন, যাতে তাঁরা একজন সেই রকম প্রোফাইলওয়ালা এক মেধারে সামনে রাইখা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতির পুনরুদ্ধার কাজ চালাইতে পারেন।উনার কয়েক মাইল লম্বা সিভি গেঞ্জিদের বড়ই পছন্দ হইছে।আন্তর্জাতিক পরিচয়, যোগাযোগ, নোবেল প্রাইজ - সব কিছু নিজের মনে কইরা দুনিয়ার সামনে হাজির করলেন, যে, হ্যাঁ, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের অন্তরবর্তীকালীন সময়ে যোগ্য মেধার হাতে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ দিসি। বাদবাকি উপদেষ্টাদের হায়ার এবং ফায়ার প্রক্রিয়াও চলমান দেখা যাচ্ছে।পার্লামেন্ট বন্ধ, পুলিশ বাহিনী বরখাস্ত, বিচারপতি নিয়োগ দিসেন, একটার পর একটা নষ্ট প্রতিষ্ঠান ধরতেসেন আর বিদ্যুৎ গতিতে চাকরী নট কইরা দিসেন।গেঞ্জিদের সামান্য সরকারী চাকরী কৈরে খাওয়ার "পেটি বুর্জোয়া" আশা-আকাঙ্ক্ষা যে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া কাঁপায়ে দিবে, তা আপনার- আমার কল্পনা শক্তিতেও কুলায় নাই রে, ভাই।পাশের বৃহৎ প্রতিবেশী রাইজিং সুপার পাওয়ারও অগাস্টের ৫ তারিখ থেকে এত বেশী বাংলাদেশ নিয়া মুখে ফেনা তুইলা মূর্ছা জাইতেসে, যে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা কি ছিল ভুইলা যাওয়ার উপক্রম।জুলাই গণহত্যা এবং অগাস্টের অভুত্থ্যানের এই মাত্র তিন সপ্তাহ সময়টা আমাদের বহু যুগ ধরে পড়তে হবে। আমারদের জীবদ্দশায় এমন একটা বৈপ্লবিক সময় দেখতে পাবো, স্বপ্নেও ভাবি নাই। গেঞ্জিরা আমাদের দেশের মালিক হইতে শিখাইতেসে!
আমরা সবাই এখন গেঞ্জিদের ছাত্রছাত্রী!
মঙ্গলবার
অগাস্ট ১৩, ২০২৪
উইস্কন্সিন, যুক্তরাষ্ট্র
#Gen-Z #QuotaReformMovement #secondindependencebangladesh
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৩৩