নিরস্ত্র অকুতোভয় শিশু-কিশোর-যুবাদের মহাতরঙ্গ ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের ৯ টি সশস্ত্র বাহিনীর সাথে ৩৬ দিন ধরে রাজপথে অবিস্মরণীয় যুদ্ধ, আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে একটা ভয়ংকর জালেম শক্তিকে বিতাড়িত করার কোন নজীর দুনিয়ার স্মরণকালের ইতিহাসে নাই।এটা কোন অতিশয়োক্তি নয়, নিরেট বাস্তবতা। আমরা আমাদের জীবদ্দশায়ই প্রত্যক্ষ করলাম, সম্পূর্ণ অভাবনীয় এক আশ্চর্য রূপকথা, যা যে কোন সুপার হিরোর গল্পের চেয়ে বিস্ময়কর।সাদামাটা ব্যাগ-প্যাক কাঁধে লাঠি হাতে তারা খুনী হাসিনা শাহীর কবর রচনা করেই বাড়ি ফিরেছে।এই কাজটি আমরা, মানে আগের প্রজন্মেরা করতে পারি নাই।অক্লান্তভাবে অবিরাম চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হই নাই।ডান-বাম-মধ্য-ইসলামী-সেকুলার কোন রাজনীতি, কারো নেতৃত্ব, সংগঠন, পরিকল্পনা, রোডম্যাপ, রূপরেখা - কোন কিছুই এই দানববধ করতে সফল হয় নি। জেন জি সকলের কল্পনাকে হার মানিয়ে যখন পথে নেমেছে, কারো নেতৃত্ব, কাণ্ডারিগিরি, বুদ্ধিজীবীগিরি, কোন রাজনৈতিক দল, কোন বিপ্লবী তত্ত্ব, সমাজবাদ-উত্তর-উপনিবেশবাদ-ইসলামীবিপ্লববাদ - কোন নারেটিভ, কোন তত্ত্বকাঠামোর পরোয়া করে নাই।তারা যেন কিভাবে জেনেছিল কি ভয়ংকর শক্তিশালী ক্ষমতার অধিকারী তাদের ঐক্যবদ্ধ যুবশক্তির সংহতি।তারা আমাদের মত করে তাদের যৌবনকে ফ্যাসিবাদের অধীনে খরচ করতে চায় নাই, আমাদের মত মরেও বেঁচে থাকতে চায় নাই।তাদের লুণ্ঠিত মনুষ্যত্ব তারা যুদ্ধ করে অর্জন করে নিয়েছে।আমরা যেভাবে মানবিক মর্যাদাবিহীন দাসত্বের দিন-গুজরানকে ভবিতব্য বলে মেনে চলছিলাম, বুদ্ধি, সাহস ও কৌশলের অভাবে হতাশায়, দ্বিধায় ও কালক্ষেপণ করে জীবনের মূল্যবান মুহূর্তকে নষ্ট করে যাচ্ছিলাম, তারা সেভাবে বেঁচে থাকতে রাজী হয় নি। তারা বেছে নিয়েছিল, মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু!আমরা যাদের ঘরবন্দী ফার্মের মুর্গি ভেবেছিলাম, মোবাইল ফোন-কম্পিউটার অ্যাডিকট ভেবেছিলাম, ইনফ্যাণ্টালাইজ করে রাখতে চেয়েছিলাম, নিষ্ক্রিয় কঞ্জিউমার ভেবেছিলাম, খেলার মাঠ হারানো একা একা বড় হওয়া অসামাজিক বাচ্চা ভেবেছিলাম, তারা আসলে সত্যিকারের রয়েল বেঙ্গল! বাংলার বাঘের হুংকার সারা দুনিয়া শুনেছে। আমরা যাদের ভেবেছি অরাজনৈতিক, তারা ছিল আসলে রাজনীতির ওস্তাদ কারিগর!যাদের বলা হয়েছিলো, পেটি-বুর্জোয়া সুবিধাবাদী - কেরিয়ার, চাকরী ছাড়া দেশের কথা ভাবার সময় নাই, লাইব্রেরীর সামনে বিসিএস পরীক্ষার্থীর লম্বা লাইন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছিলো যে, এদের দিয়ে দেশের কি পরিবর্তন করা সম্ভব, তারাই সবচেয়ে বেশী গভীরভাবে দেশের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করেছে।যখন অন্ধকারে কোন আলোর দেখা মিলছিল না, কোন নেতা ছিল না, তারা নিজেরাই নেতা হয়েছে, বিকল্প হয়েছে নিজেরাই, ৬ থেকে ১৭ বছরের শিশুরাও রাস্তায় নেমেছে, অন্তত ৬৭ জন জীবন উৎসর্গ করেছে।তারা সময়ের ডাকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সাড়া দিয়েছে।আগেও না, পরেও না।ঠিক যখন লোহা গরম হয়েছে, ঠিক সেই সময়ে, অব্যর্থ কৌশলে, অকল্পনীয় বুদ্ধিমত্তায় জাতির অন্ধকার সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে ফ্যাসিবাদী একনায়ক জালেমশাহীর পতন ঘটিয়েছে শুধু লাঠি হাতে লড়াই করে। প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের "মিটিকুলাসটি প্ল্যান করা" কথাটা নিয়ে তোলপাড় তুলে ফেলা গোষ্ঠী একে অপরিকল্পিত একটা অ্যানারকি হিসাবে দেখতে চায়, উইনিং স্ত্রাটেজি হিসাবে স্বীকার করতে চায় না।যেন স্বতঃস্ফূর্ত অপরিকল্পিত অভুত্থ্যান হলে ঠিক ছিল, আর "মিটিকুলাসলি প্ল্যান করা" হলে সেটা উড়িয়ে দেয়া যাবে।জালেমের বিরুদ্ধে লড়াই কেন মিটিকুলাসলি প্ল্যান করা হবে না? বেইন্সাফির বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ করবার জন্যে কারো অনুমতি বা অনুমোদনের প্রয়োজন নাই।তারা জীবনের এক মহান পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ ও বিজয়ী বীর।আমাদের সকল ক্যালকুলেশন ভুল প্রমাণ করে জাতির চরম সংকটকালে বিপুল প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে, জাতিকে মুক্ত করেছে।এইটা এখনও সবাই যেন বুঝে উঠে নাই, কিম্বা, বুঝে না বোঝার ভান করে যাচ্ছে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভুক্তাবশেষ গোষ্ঠীটি।রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ, সমর কৌশল, গোয়েন্দাবিজ্ঞানের সব প্রি-এগজিস্টিং তত্ত্বকাঠামো, বিশেষজ্ঞতা, বুদ্ধিজীবীগিরি, তচনচ করে দিয়ে সুপার হিরো বাচ্চারা এমন এক শূন্যস্থান তৈরি করে দিয়েছে, যে সেখানে পত্তন হতে যাচ্ছে এক নতুন রাষ্ট্রপ্রকল্প, নতুন সভ্যতা।যত তাড়াতাড়ি এটা আপনি বুঝতে পারবেন, ফ্যাসিবাদী হ্যালুসিনেশন কাটিয়ে উঠবেন, ততই আপনার মঙ্গল।
অক্টোবর ২০, ২০২৪
রবিবার
#সায়েমারলেখা
#secondindependencebangladesh
#JulyMassacre
#julyuprising

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


