১
মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। সে জাগরনে হোক আর ঘুমঘোরে হোক। আজীবন ভাল স্বপ্নকে লালন করেই বেঁচে থাকা। বোধ করি এই অলৌলিক বিষয়টা না থাকলে মানুষের বেঁচে থাকাটা দুস্কর হয়ে উঠত। তেমনি জীবনের লক্ষ্যটাকেও স্বপ্নের সাথে তুলনা চলে। যেন দিবস রজনী স্বপ্ন বুনে কাটে প্রহর। কিন্তু মাঝেমাঝে কিছু ঘটনা জীবনের মোরটা ঘুরিয়ে দেয়।
২
খুব ছোটকালে কথা বলা যখন শিখেছি। তখন থেকেই গান শোনা শুরু হয়ে গেছে। ঠিক যেন গানই জীবন--গানই মরণ। সেই সাথে মাটিতে আঁকা-আঁকি করা একটা অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যখন যা ইচ্ছে হতো এঁকে ফেলতাম। কখনও বর্ণমালা আঁকতাম, কখনও হাঁড়ি-পাতিল, কখনও গাছপালা আবার ইচ্ছে হলে ঘুড়ি। যদিও ঘুড়ি জিনিসটা কোন দিনই বানাতে পারতাম না। তারপরও চেষ্ঠা থাকতো বানানোর। ইয়া বড় একটা লেজ জুড়ে দিতাম ঘুড়ি বানিয়ে। দেখা যেত ঘুড়ি এক পাক দিয়ে কাত হয়ে ধপাশ করে পড়ে গেছে। তখন ডানেবামে লতা-পাতা, ঘাস দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতাম। সেই ঘুড়ির আয়ুও খুব বেশী হতো না। দেখা যেত দুই দিনেই ধ্বংস হয়ে গেছে।
বাবা ব্যস্ত মানুষ ছিলেন। তার কাছে প্রায়ই বায়না ধরতাম একটা সুন্দর ঘুড়ি কিনে দেয়ার জন্য। তিনি আবদার মেটাতেন। সেই ঘুড়িগুলোর একেকটার রঙ একেক রকম হতো। দেখতেও বিভিন্ন জীব-জন্তুর আকার। ঘুড়ি নিয়ে বন্ধুদের সামনে বেশ গর্ব করতাম। আমার ঘুড়ি উড়ানোর সঙ্গী-সাথীরা খুব আগ্রহ ভরে আমার ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতো।
৩
অনেক বাল্য বন্ধুর সাথে বাল্য বান্ধবীও জুটেছিল। কারণ মেয়েদের খেলাধূলায়ও সঙ্গী হতাম। ঐ বয়সে কোন বাচ বিচার ছিল না। একটা খেলা হলেই হয়েছে। এদের মধ্যে সালমা যেন আমার চোখের বালি হয়ে গেল। তার সাথে কোন খেলায় পেরে উঠছিলাম না। দৌঁড় খেলাতে, কি দাঁড়িয়াবান্দা সব কিছুতেই সে হার মানাচ্ছে। অনেক কাজের মাঝে একটা কাজ ছিল। তারা বেশ ঘটা করে কোন মৌসুমী ফল বা অন্য কোন খাদ্য-দ্রব্য খাওয়ার আয়োজন করলে টমের মত জেরীদের হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে যেতাম। আরাম করে তাদের খাবার তাদেরকে দেখিয়েই খেতাম। বেশীর ভাগ সময় সালমা উল্টো ছোঁ মেরে নিয়ে যেত। এই নিয়ে তার সাথে মারামারি লেগে যেত। গরু, ছাগল, হাঁস মুরগী যে গালি মুখে আসতো কোন অপেক্ষা না করে দিয়ে দিতো। তার সাথে সবসময় একটা অঘোষিত বিরোধ লেগেই থাকতো।
শখের কথা বলছিলাম। সব শখ ছাপিয়ে গান গাওয়ার শখ জেকে ধরলো আমাকে। চেষ্ঠা করলাম অনেক। কিন্তু হলোনা। ঐ দিকে স্কুলে সালমা আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম। সে ক্লাসে সব সময় ফার্স্ট হতে থাকলো। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সালমা’র ডাক পড়লো। অনুষ্ঠানগুলোতে সে যেন মধ্যমনী হয়ে উঠলো। প্রতিটা অনুষ্ঠানে তার পাঁচটা গান থাকবেই। হিংসায় জ্বলতে থাকলাম আমি। একটা ছেলে হয়ে একটা মেয়েকে ঘায়েল করতে পারছি না।
৪
ক্লাস টেনের কথা। সেদিন রেডিওতে একটা গান শুনলাম। মনে মনে সেই গানটি গুনগুনাচ্ছিলাম সারাদিন। স্কুলে গেলাম গানটি মাথায় নিয়েই। স্কুলের দ্বিতীয় তলায় জীববিজ্ঞান ক্লাস শুরু হলো। জীববিজ্ঞান ক্লাস নেন আলিম স্যার। স্যার ক্লাস শেষ করে চলে গেলেন। তখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বারান্দায় বের হয়ে সোহেল নামের এক বন্ধুর কাঁধে হেলান দিয়ে গাওয়া শুরু করলাম...
যেয়ো না সাথী
চলেছো একেলা কোথায়
পথ খুঁজে পাবে না তো
শুধু একা-----
হুট করে সোহেল হয়ে গেল আলিম স্যার। আমার কান চেপে ধরে বলতে থাকলেন ”কিরে তোর সাথী আবার কোথায় চলে যাচ্ছে? স্যার কান ছেড়ে দিলে দৌঁড়ে ক্লাস রুমে চলে গেলাম। লজ্জায় অবস্থা বেগতিক। এতগুলো মেয়ের সামনে অপমান। নিজের উপর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বৃষ্টিতে স্যার এবং মেয়েরা বারান্দায় আটকা পড়েছে, অথচ খেয়াল করলাম না? অবশ্য এই একটা বিষয়ে এখনো বেখেয়াল। কখন কোথায় গান গেয়ে ফেলি তার ঠিক নাই।
এরপর থেকে স্যারদের রুমে গেলেই, আলিম স্যার আমাকে দেখিয়ে অন্যান্য স্যারদের বলতেন। ও কিন্তু ভাল গান জানে। রীতিমত বেকুব বানিয়ে ফেলা। আমি মনে মনে বলি গান ঠিকই জানি। কিন্তু কন্ঠের কোন কারুকার্জ নেই। যাকে বলে কাককর্কশ কন্ঠ।
ওদিকে সালমা এবং অন্যান্য মেয়েরা সেদিন থেকেই আমাকে দেখলে মুখ টিপে হাসে। কি বাড়িতে, কি স্কুলে সব জায়গায় সালমার টিপ্পনি। মনে মনে পণ করলাম ”যেভাবে হোক সালমাকে হারাতে হবে”। অন্তত একটি বিষয়ে হারাতে পারলেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষনা করা যেতে পারে।
স্কুল থেকে ফিরে এসে নিয়মিত খেলাধূলা করার অভ্যাস। সেটা কমিয়ে দিলাম। দিনে দিনে এমন অবস্থা দাঁড়াল বইয়ের পোকা হয়ে গেলাম। খেলাধূলা একপ্রকার ছেড়েই দিলাম। সোহেল, আরমান, রিয়াদ’রা আমাকে দেখিয়ে বিকেল বেলা বল দাপিয়ে মাঠে যায় আর আমি বইয়ের মধ্যে ঝিম মেরে পরে থাকি। আমার অবস্থা দেখে সালমা কেন জানি উদাসীন হয়ে গেল। আগের মত আর টিপ্পনী কাটে না। সে পড়াশুনাও কমিয়ে দিল। মনে মনে ভাবছি ”হয়ত আমাকে করুণা দেখাচ্ছে। সামনে এসএসসি টেষ্ট পরীক্ষা। ফার্স্ট হওয়ার সুযোগ দিতে চায়”। সে উল্টো গানের দিকে জোড় দিল। দিন দিন তার কন্ঠ যেন শানিত হয়ে উঠতে থাকলো। বিকেল বেলা হেরে গলায় গান গাওয়া শুরু করে। আমার মনোযোগে হালকা ব্যঘাত সৃষ্টি করলো। আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম। পড়াশুনা আরও বাড়িয়ে দিলাম। বিকেল বেলা গলা চড়িয়ে পড়া শুরু করতাম। রেডিও, গান বাজনা ভুলে গেলাম। নিজেকে প্রবোধ দিলাম ”গান বাজনা, সেতো সালমার বিষয়।”
৫
টেষ্ট পরীক্ষার পর রেজাল্ট বের হলো। কিন্তু পারলাম না। সালমা আগে যেখানে পঞ্চাশ থেকে ষাট মার্কস এগিয়ে থাকতো সেখানে কুড়ি মার্কস এগিয়ে থাকলো। স্যারদের উপর স্বজনপ্রীতির দোষারোপ করে আবারও পড়া শুরু করলাম। চেহারা যেন কদাকার হয়ে গেছে। কতদিন চুল আচড়াই না ভুলে গেছি। শুধু মনে আছে সামনে এসএসসি পরীক্ষা। খাওয়া দাওয়ায় তেমন রুচি নেই। আমার অবস্থা দেখে মা বেশ হতাশ হয়ে পড়লেন। আর আমার উদ্দেশ্য যেভাবে হোক সালমাকে দেখিয়ে দিতে হবে।
ফলাফল প্রকাশের দিন এসে গেল। স্কুল মাঠে যেন পিনপতন শব্দ বিরাজ করছিল। স্যারদের মধ্যে আলিম স্যারের কন্ঠটা বাজখাই। কোন অনুষ্ঠানে চড়া গলার প্রয়োজন হলে তার উপরেই দায়িত্ব অর্পিত হয়। নির্ধারিতভাবে আলিম স্যারের উপরেই রেজাল্ট ঘোষনার দায়িত্ব অর্পিত হলো। শুরু করলেন রোলের ক্রমানুসারে রেজাল্ট ঘোষনা। আমার আর সালমার রোল পাশাপাশি। সালমার রেজাল্ট পাওয়া গেল। সে চারটি বিষয়ে লেটারসহ (শতকরা আশি) ষ্টার মার্কস (এক হাজারে সাতশত পঞ্চাশ)। শুনে মনটা কেমন জানি হয়ে গেল। আমি পারবো তো!। অত:পর আলিম স্যার যেন সুরেলা কন্ঠে বললেন ”পাঁচ বিষয়ে লেটারসহ ষ্টার মার্কস পেয়েছে।” খুশীতে মন যেন নেচে উঠলো। এক ঘন্টার মধ্যে কয়েকজন সিনেমাপ্রেমী বন্ধুসহ শহরমূখী হলাম। শহরের সিনেমা হলগুলোর সব সিনেমা দেখা শেষে রাতে বাড়িতে ফিরে আসলাম।
পরের দিন সকাল বেলা সালমার সাথে দেখা হলো। আমার চেয়ে তাকেই খুশী খুশী লাগছে। ঘটনা কি জিজ্ঞেস করলাম। সালমা: তুই পাঁচ বিষয়ে লেটার সহ ষ্টার মার্কস পেলি। খুশী হবো না তো কাঁদবো?
তোর তো কাঁদারই কথা
সালমা: কেন? কাঁদার কথা কেন?
বারে আমি পাঁচ বিষয়ে আর তুই চার বিষয়ে!
সালমা: শোন সুবিদ। এইগুলা কোন ব্যাপার না। কে কত বিষয়ে লেটার পেল। কে ফাষ্ট হলো। কে সেকেন্ড হলো। এই চিন্তা আমি কখনও করিনা। পড়াশুনা করতে হয় তাই করি। তা না হলে সব সময় গান নিয়েই থাকতাম।
তাকে কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তবে মনে মনে খুশীই হয়েছি। জীবনে অন্তত একটিবার সালমাকে হারালাম।
কিছুক্ষণ পর-
সালমা: সুবিদ তুই ফাষ্ট হয়েছিস তাতে আমার মত কেউ খুশী হয়নি বোধয়। যদি পারতাম তোকে অন্তর টা চিরে দেখাতাম। তবে মনে রাখিস জীবনের পথ এখনও শেষ হয়নি। অনেক বাকী রয়েছে কিন্তু।
সালমার চোখে যেন অন্য সালমাকে দেখতে পাচ্ছি। এই সালমাকে যেন আমি চিনতে পারছিনা। বেশ গুরুগম্ভীর ভাব। এমনিতে সে যথেষ্ট সুন্দরী। যে সৌন্দর্য আমার চোখে কোন দিন ধরা দেয়নি। সে সৌন্দর্য কেন জানি একদম সদ্যজাত মনে হচ্ছে।
সেইদিন রাতের বেলা হরেক পদের রান্না করে আমাকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ালো।
আমি: কিরে আজকে আবার কি হলো? এত পদের রান্না করে খাওয়াচ্ছিস?
সালমা: এই জীবনে তোকে আর কোন দিন রান্না করে খাওয়াতে পারি কি না?
আমি: কেন? জীবনে আর রান্না করে খাওয়াতে পারবি না কেন?
সালমা: তা জানিনা। তবে মন বলছে। তোকে আর হয়ত খাওয়াতে পারবো না।
কয়েকদিন পর মার্কস শিট হাতে পেলাম। তাতে দেখা গেল সালমা আমার চাইতে দুই মার্কস এগিয়ে আছে। এরপর সালমাকে ফাষ্ট, সেকেন্ড, লেটার এই ব্যাপারগুলো কোন দিনই আর বলা হয়নি।
৬
অনেক দিন তো হলো। সালমাদের বাড়ির রেডিওটা শুনছি। এখন তাদের বাড়িতে যাওয়াটা সমীচিন হবে না। পাড়া-পড়শীরা কেন জানি আর চোখে চায়। তাই ভাবলাম একটা রেডিও কেনা দরকার। বাড়ীতে তো গান-বাজনা শোনার বা দেশ বিদেশের খবরাখবর রাখার লোক নাই। তাই কেউ এই বস্তুতির দিকে নজর দেয়নি। এই সময় গ্রামের এক পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার্থীকে এক মাস পড়ানোর সুযোগ পেলাম। মাস শেষে তিনশো টাকা হাতে পেলাম। অপেক্ষা না করে শহরে দৌঁড়লাম প্রিয় বস্তুটির খোঁজে। কিন্তু তিনশ টাকায় মনমত রেডিও পেলাম না। সালমাদের রেডিও থ্রি ব্যান্ড হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সেন্টার ধরে। কি আর করা! হরেক দেশের হরেক সুরের মন মাতানো গান শোনা থেকে বঞ্চিত হলাম।
৭
আমি শহরে এক কলেজে ভর্তি হলাম। সালমা ভর্তি হলো মহিলা কলেজে। সালমা আর আগের মত আমাদের বাড়িতে আসেনা। আমিও একান্ত প্রয়োজন না পড়লে যাই না। বেশ কিছুদিন পর একদিন বিকেল বেলা হুট করে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলো।
এসেই বলা শুরু করলো,
”কিরে রেডিও কিনলি নাকি?”
হ্যা কিনে ফেললাম আরকি।
আমাকে জানাইসনি কেন?
এইটা জানানোর ব্যাপার।
জানানোর ব্যাপার মানে! তুই জানাইসনি ক্যান তাই বল। আর তোর রেডিও দেখি। কয়েকদিন গান শুনবো।
কেন তোদের রেডিওর আবার কি হয়েছে?
আমাদের রেডিওর নব নষ্ট হয়ে গেছে।
এই বলে আমার হাত থেকে একপ্রকার কেড়েই নিল। কেড়ে নিয়েই রেডিওর ফিতা ধরে ঘুড়ানো শুরু করলো।
সালমা: আমাদের রেডিওর নব নষ্ট হয়নি।
নষ্ট হয়নি ভাল কথা। তাই বলে এই দূর্বল ফিতাটা ধরে ঘুরাচ্ছিস। আর ঘুরাইস না। ছিড়ে পড়ে যাবে।
সালমা: ছিড়ে পড়লে পড়বে। বেশী কিছু হলে রেডিও নষ্ট হবে। এর বেশী তো হবেনা।
বলে হাসা শুরু করলো। ইশ হাসিতেও তাকে অসাধারণ লাগছে।
এরই মধ্যে যা হওয়ার তাই হলো। রেডিওর ফিতা খুলে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। টনক নড়ল সালমা’র। যাবার সময় বললো। চিন্তা করিস না একদিন ঠিকই সুন্দর একটা রেডিও কিনে দিবো।
৮
হেমন্তের প্রকৃতি পাকা ধানের রঙ্গে সোনালী হয়ে উঠেছে। শীতের প্রকোপ এখনও যথেষ্ট রয়েছে। এরকম একদিন সকালবেলা হৈহৈ রবে গ্রামের ঘুমটা যেন অতি তাড়াতাড়িতে ভেঙ্গে গেল। ঘটনা কি জানার জন্য বের হলাম। ঘটনার উৎস গ্রাম থেকে দূরে একটা পাকা ধানক্ষেত। সন্নিকটে গিয়ে দেখি সালমা অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। তার নিম্নাঙ্গ রক্তাক্ত প্রায়। গ্রামের লোকজনের সহায়তায় অতিদ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
৯
সালমার পাঁচ বছর বয়সে পিতা স্ট্রোক করে মারা যান। তিনি আমাদেরই স্কুলের নাম করা টিচার ছিলেন। একমাত্র সন্তান সালমাকে নিয়ে মাতা আশা বেগম দুর্দশার মধ্যে পতিত হন। সালমার মা এইচএসসি পাশ। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ আশা বেগমের জন্য ক্লার্কের চাকুরী নির্ধারিত করে দেন। তাদের সংসারে সালমা, মা আর দাদী এই তিন ব্যক্তি ছাড়া কোন পুরুষ মানুষ নাই। সেদিন রাতের বেলা সালমার মা দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বৃদ্ধ দাদী এক ঘরে ছিলেন। পাশের ঘরে সালমা পড়াশুনা করছিল। রাত আনুমানিক নয়টার দিকে আজমল চেয়ারম্যানের ছেলে পয়মল কুমতলব নিয়ে আসে। বিয়ের প্রলোভন দেখায়। সালমা রাজী না হওয়ায় সাঙ্গপাঙ্গদের সহায়তায় উঠিয়ে নিয়ে যায়।
১০
গত তের বছর ধরে আছি এই কেন্দ্রীয় জেলখানাটিতে। আর একটি মাত্র বছর। আশা করি, দেখতে দেখতে কেটে যাবে। গত পাঁচ বছর আগে সালমা একটি সুন্দর থ্রি ব্যান্ড রেডিও উপহার দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের সেন্টার ধরে চমৎকার রেডিওটাতে। নিয়মিত খবর শুনে, দেশী-বিদেশী গান শুনে মুক্তির প্রহর গুনি। খবরে যখন শুনি অমুক জায়গায় তমুক কর্তৃক গৃহবধূ, কিশোরী, নাবালিকা ধর্ষিত, ইচ্ছে করে পয়মলের মত সবগুলারে রাম’দা দিয়ে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করি। নরপশুদের হাত থেকে মুক্ত করি প্রিয় মাতৃভূমিকে।
আর সকাল নয়টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট আমার জন্য স্পেশাল সময়। কারণ ঐ সময় টাতেইতো মুক্তি রেডিও সেন্টার সালমার গান সরাসরি সম্প্রচার করে। আমরা ঠিক করেছি আমাদের সন্তান যদি মেয়ে হয় তার নাম রাখবো মুক্তি।
ছবিসূত্র: আন্ত:জাল।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৩৬