*
কংক্রিটের দেয়াল উঠছে। ভাললাগা থেকে যাবে ওখানে। কতগুলো স্বপ্ন উঁকি দেবে। শিশু গড়াবে মেঝেতে। মায়ের হাতে বকুনির ইশারা ঠেলতে ঠেলতে একদিন বড় হবে ছোট ছোট হাত পা। ঘুমাবে এবং মশারী সরিয়ে উঠে আসবে আর একটি স্বপ্ন ও একগুচ্ছ স্বপ্ন। শহরের হৃদপিন্ড এবং মানুষের হৃদপিন্ড একই সূত্রে গাঁথা।
**
উঠি উঠি করে উঠা হয় না। শুরু করবো করবো করে করা হয় না। ফেরীওয়ালার হাঁক ডাকে সচকিত হই। একজন যায় অন্য জন আসে। উদ্যম নেই, পুরনো তৈলচিত্র মলিনতর হয়। চোখ যেতে চায় নতুন চিত্রে। উঠা হয় না। ময়লার গাড়ী এলো বলে। এখনি উঠাতে হবে বাসী ময়লা। সময় যে যায়, গড়ায়।
***
পুরনো প্লটে নতুন গল্প। গোলাপটা ফুটলেই ভালবাসা হবে। বাগানটা সাজাতে পারলেই গোলাপ ফুটবে। জল ঢাললেই সজীব হবে মৃত্তিকা। চোখের পাতায় জলের ঝাপটা। রিসাইকেল বিনে জমছে ড্রাফট। ড্রাফটে ঘুমের আড়ত। ঘুমজাগা রাতের নসিহত।
****
দৃশ্যান্তর
এখন তারা বের হয়ে আসে জলঝাপি নিঙড়ে। বৃষ্টির ছাটে। টিপটিপ বর্ষায়। অঝরধারায়। তারা বের হয় অরণ্যের রাত্রি নির্ঘুমে। বিরানভূমে।
সূর্যের লাল টিপ ঝরানো সন্তান। যে সন্তান একদিন শোকানল এনে দিয়েছিল। সে আজ হাতের মুঠোয়। সান্তনা নেই। ভাষা নেই। দৃশ্যস্থিত বৃষ্টিতে। দৃশ্যান্তর সূর্যের ঠোঁটে। মায়ের হাসিতে।
*****
অবুঝ পাখি
ভালবাসা হারিয়ে গেলে এক ক্ষণজন্মা বৃক্ষরোপণ হয়
সেই বৃক্ষের ডালে ডালে পাতায় পাতায় জমে ধূলোবালি
কিছু কান্না বৃষ্টি আকারে ধূয়ে দেয় বৃক্ষ
দুটি মন খারাপের পাখি বেদনার গান গায়
বৃক্ষের কোটরে থেকে অন্ধ পাখি অবুঝ ডানা ঝাপটায়।
******
ধূসর গল্প
টবের নির্জীব লাল সাদা ফুল দেখলেই একটা অদৃশ্য পাচিল তৈরী হয়। দেয়ালের এ পাড়ে কালো কালির গল্প। ফাঁসিতে ঝুলন্ত একটা অদৃশ্য ছায়ামানব। দেয়ালের ও পাশে সাদা গল্প। জীবন্ত কতগুলো প্রাণ। সারি সারি গাছ। ফুল বাগান। নেচে গেয়ে বেড়ায় কৃষ্ণভ্রমর। ফুলপ্রেমী পতঙ্গ। জীবনের একটা ছন্দ ঝুলে থাকে এপাশে। কখনো একটি। কখনো দুটি। কখনো বা কয়েকটি মানুষ মিলে অসংখ্য গল্প চলে দিনভর। রাতভর জুয়ার আসরে নেচে চলে এক জোড়া চপল পা।
*******
কিসের অন্বেষায় জীবন
গৃহত্যাগী মন কখনো অন্নের অন্বেষায় দিন গত করে না। পৃথিবী দ্যাখে উপুড় চোখে। আকাশটা হয় ঘরের ছাদ। পৃথিবীটা পেয়ারা। সে পেয়ারার পোকা বেছে বেছে গিলে। সময় হলে জিরিয়ে নেয়। মাটির জলচৌকিতে।
এরকম এক গৃহত্যাগী সন্ন্যাসের দেখা পেয়েছিলাম গোলাপপুর চরে। চরের মাঝখানে হাঁটু ডুবিয়ে দাঁত বের হিলহিল করে হাসছে। জিজ্ঞেস করলাম, নদী থাকতে কাদা বালিতে সাদা করছিস ক্যান জীবন। সে ইশারায় আমাকে এক দিকে পাঠালো। যেখানে কিছুক্ষণ পরপর একটা দু'টা শুশুক ভুস করে জলের উপর উঠছে আর ডুবছে। ফিরে আসলে আর এক দিকে ইশারা করলো। দেখলাম কয়েকটা খুঁটির উপর চক্রাকারে কিছু পানকৌড়ি বসে আছে। গোলটেবিল বৈঠক শেষে একজন করে নদীতে ডুব দিয়ে মাছ ধরে আনছে। একটু পর সন্ন্যাসের কাছে ফিরে আসলে আর দিকে ইশারা করে। চেয়ে দ্যাখি কিছু জলজ অতিথি পাখি সাঁতার কাটছে, উড়ছে, ডুবছে একে একে, ভেসে উঠছে, খেলছে। চোখ ফিরিয়ে বললাম, এসব দেখে দেখে আমার সময় নষ্ট করার সময় নেই। সন্ন্যাসী এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, তাহলে আমার সাথে এখানে খেলাধূলা কর। বিরবির করে বলতে থাকলো, সারাজীবন তো শুধু পথেই দৌঁড়াইলি। পথ কি খুঁজে পেয়েছিস? আমি বললাম, না! সঠিক পথ এখনো পাইনি। সন্ন্যাস বললো আমিও সারাজীবন পৃথিবীব্যাপী চষে বেড়িয়েছি। কিন্তু কোথাও এক ফোঁটা শান্তি বা স্বস্তি পাইনি। কিসের ব্যথায় জানি মন কাদে সারাক্ষণ। শেষে বাড়ির কাছেই চেনা নদীর ধারে এসে ঘর বাঁধি। যা যা দেখলি ও সব দৃশ্যই আমার বেঁচে থাকার পথ। কখনো কখনো বিন্দু থেকে পথের সৃষ্টি। তোকে বিন্দু খুঁজতে হবে না। তোর মনটাকে সুস্থির কর। সেখানেই এক সময় বিন্দুর সৃষ্টি হবে। চাইলে এই বিন্দু থেকে বৃত্তাকারে মহাসিন্ধু সৃষ্টি করতে পারবি। তোর বেঁচে থাকার পথের পাথেয় পাবি।
ছবিঃ নিজস্ব এ্যালবাম।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩