somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন কি আর মানুষ কেন দেখে?স্বপ্নের যতকথা...

২১ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ কেন স্বপ্নও দেখে? স্বপ্নের রঙ ই বা কি? কি অর্থ এই স্বপ্নের? ফেলে আসা ধূসর অতীত নাকি অনাগত কোনো ভবিষ্যৎ এই স্বপ্ন?

স্বপ্নে মানুষ কি না পারে! পঙ্খীরাজের ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে আপাত অসম্ভব প্রতীয়মান সব কিছুই সম্ভব এই স্বপ্নে। তাহলে স্বপ্ন কি মানুষের প্রাত্যাহিক লৌকিকতার বাইরের অসাধারণ কিছু ক্ষমতা নাকি কয়েকটি নিউরণের শৃংখলিত কিছু অনুরণন মাত্র?

সেই আদিমকাল থেকেই মানুষের মনের অগোচরে লুকিয়ে ছিল এইসব প্রশ্ন। সভ্যতার গোড়ার দিকে মানুষের বিশ্বাস ছিল স্বপ্ন বুঝি লৌকিক পৃথিবী আর আধ্যাতিক ঐশ্বরিয় পৃথিবীর যোগাযোগের একটা মাধ্যম। এমনকি প্রাচীন রোমান আর গ্রীকরা স্বপ্নকে মনে করতো নবীদের নবুওয়্যাত লাভের একমাত্র মাধ্যম। মাত্র কিছুদিন আগে উনিশ শতকের শেষের দিকে সিগমাণ্ড ফ্রেড আর কার্ল জাং এর হাত ধরেই আমরা পাই স্বপ্নের প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা। তাদের তত্ত্ব যে ধারনার উপর তা ছিল অনেকটা এরকম- মানুষের অবদমিত ইচ্ছাগুলোর পুনরায় সাজানো আর সমাধানের একটা অনিয়ন্ত্রিত ঘটনাই হল স্বপ্ন।

এরপর থেকে যতই উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি ততই আমাদের সামনে স্বপ্ন আরও পরিস্কার হতে শুরু করল। আসতে থাকলো কিছু নতুন তত্ব। এরকম একটি হল এক্টিভেশন সিন্থেসিস হাইপোথেসিস। এই হাইপোথেসিস অনুসারে স্বপ্ন বা এর অর্থ বলতে আসলে কিছুই নেই কারণ স্বপ্ন হল মস্তিষ্কের এলোমেলো কিছু তড়িৎ স্পন্দন যা কিনা আমাদের স্মৃতি থকে তুলে নিয়ে আসে এলোমেলো অসজ্জিত কিছু চিন্তা,অনুভুতি আর কল্পনা। একদিকে যেমন এরকম আরও অনেক তত্বের আবির্ভাব হতে লাগলো তেমনি অন্য দিকে প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদাভাবে প্রাণান্ত চেষ্টা চলতে থাকলো ঘুম থেকে জাগার পর স্বপ্নকে মনে করে বাস্তবের সাথে তার মিল খুঁজে বের করায়। পরীক্ষা নিরিক্ষা করে এখন আমরা জানি কিছু কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণি যেমন বিড়ালরাও স্বপ্ন দেখে । আবার বিবর্তনবাদী মনস্তাত্ত্বিকদের মতে প্রত্যেকটি স্বপ্নেরই একটা তাৎপর্য থাকে। Threat Simulation Theory অনুসারে স্বপ্ন নাকি মানুষের বিপদ আপদের প্রতি আদিম জৈবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটা কৌশল যা কিনা বারবার একই বিপদাপন্ন পরিবেশ আর পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্বপ্নজগতে তুলে ধরে আর মানুষকে প্রদান করে বিবর্তনীয় কিছু সুযোগ সুবিধার এবং যা মানুষ পরবর্তীতে সেই সকল বিপদের মুখামুখী হয়ে কাজে লাগায় পূর্ব-স্বপ্নালব্ধ অভিজ্ঞতার।

এরকম আরও হাজারো ধারণা আর তত্ত্বের দেখা পাওয়া যায় ইতিহাসে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় অধুনা একটি গবেষণায়। নিউরোসাইন্স জার্নালে প্রকাশিত ক্রিস্টিনা মারযানো আর তার সহযোগিদের একটি সফল গবেষণায় তারা প্রথমবারের মত বের করতে পারেন মানুষ কিভাবে স্বপ্ন দেখা ঘটনা পরে স্মরণ করতে পারে। ৬৫ জন স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র নিয়ে দুই রাতের গবেষনায় তারা মস্তিষ্কের কিছু সুনির্দিষ্ট তরঙ্গের সিগনেচার সজ্জা দেখে ভবিষ্যৎবাণী করতে পারেন কে কে স্বপ্নকে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মনে রাখতে পারবে।

এই গবেষণায় ছাত্রদের প্রথম রাতে শব্দহীন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক একটা কক্ষে ঘুমাতে দেওয়া হয় যাতে তারা এরকম পরিবেশের সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারে। এবং দ্বিতীয় রাতে গবেষকরা ঘুমন্ত ছাত্রদের মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যল তরঙ্গগুলো মাপা শুরু করেন। সাধারণত আমাদের মস্তিষ্ক মোটামুটি চার ধরনের তড়িৎ তরঙ্গের সম্মুখীন হয়। এরা যথাক্রমে আলফা,বিটা,ডেলটা আর থিটা। এদের প্রত্যেকেরই আছে ভিন্ন ভিন্ন তড়িৎ বিভিব সজ্জা আর একসাথে এরা সবাই মিলে তৈরি করে electroencephalography (EEG)। এই যন্ত্রের সাহায্যে তারা স্বপ্নের বিভিন্ন ধাপে এইসকল ইলেকট্রিক্যাল তরঙ্গের তারতম্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিমাপ করেন। আর আমরাতো সবাই জাই আমাদের স্বপ্নের থাকে ৫টি ধাপ। এর মধ্যে REM নামক ধাপে আমরা সবচেয়ে গভীর এবং পরিস্কার স্বপ্ন দেখি। এবং এই গবেষনা থেকে আমরা এখন জানি এই REM ধাপের ঠিক পরপরই যদি কেউ জেগে উঠে তবে সে স্বপ্নের ঘটনা প্রায় হুবুহু মনে রাখতে পারে। শুধু তাই নয় এই গবেষনা থেকে এর কারনটাও উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল ছাত্রের সম্মুখ লোব থেকে বেশি পরিমাণ কম কম্পাংকের থিটা তরঙ্গ নিঃসৃত হয়েছে তারাই বেশি নির্ভুলভাবে স্বপ্ন মনে রাখতে সক্ষম হয়। মজার ব্যপার হল ঠিক মাথার এই অংশ থেকেই আমরা আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অতীত স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে তুলে নিয়ে আসি। এর মানে হল যে উপায়ে আমরা স্মৃতিচারন করি ঠিক সেই উপায়েই দেখি স্বপ্ন।

আরেকটা গবেষনায় সম্প্রতি বের হয়েছে গভীর স্বপ্ন আর Amygdala এবং Hippocampus এর মধ্যে আছে একটা আন্তঃসম্পর্ক। যেখানে Amygdala-র কাজ হল মানুষের আবেগিক অনুভূতির সংরক্ষণ আর প্রক্রিয়াজাতকরণ সেখানে Hippocampus-র কাজ হল মানুষের তাতক্ষণিক স্মৃতি থেকে তার স্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তর।

ম্যাথিউ ওয়াকার আর তার সহযোগিরাও প্রায় একই মতামত প্রকাশ করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া,বার্কলে-তে Neuroimaging ল্যাবে। তাদের মতে মানুষের সামাজিক কার্যাবিদির একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ হল এই স্বপ্ন দেখা যা মানুষকে তার ও আশপাশের জটিল মানবিক আবেগগুলোকে সহজে বুঝতে সাহায্য করে।

কিছুদিন আগে আরও একটি গবেষণায় দেখা যায় “Charcot-Wilbrand Syndrome” নামক এক প্রকার ক্লিনিক্যাল নিউরোলজিক্যাল উপসর্গ কমিয়ে দিতে পারে আমাদের স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা।

এভাবে আমরা বর্তমানে জানি স্বপ্ন তৈরি হয় মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে যার সাথে আরও জড়িত আছে দৃশ্যনীয় কার্যকলাপ,আবেগ আর সংরক্ষিত স্মৃতির। আসলে স্বপ্ন নিজে সত্যি না হলেও এর সাথে জড়িত প্রত্যেকটি আবেগ আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতির ফালি অনেকাংশেই সত্যি। স্বপ্নের গল্পগুলো আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে বের করে নিয়ে আসে আবেগ আর নিজের জন্য তৈরি করে আলাদা এক ধরনের স্মৃতি যাও কিনা ক্ষুদ্রে লেভেলে বাস্তব হলেও ভিন্ন রকম কম্বিনেশনের জন্য বৃহৎ লেভেলে মোটেও এক মনে হয় না। এইভাবে আবেগগুলো নিজেরা সক্রিয় না হলেও সচেতন অবস্থার রুদ্ধ আবেগ স্বপ্নের মাধ্যমে পরিত্রাণের বা মুক্তির একটা পথ পায় যা কিনা মানুষকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করে আমাদের অজান্তেই…
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৫৫
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×