somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"অটিস্টিক শিশু" ওরাতো আমাদেরই সন্তান কিংবা আমাদেরই ভাই অথবা বোন

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন, আমেরিকা সহ কয়েকটি দেশে অটিস্টিক শিশুর নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান জানা থাকলেও বাংলাদেশ সহ অন্যান্য অনুন্নত এমনকি বেশ কিছু উন্নত দেশেও এর যথার্থ পরিসংখ্যান নেই।'অটিজম' আজকের পৃথিবীর অনেক আলোচিত বিষয়। আমরা হয়তো অনেকেই 'অটিজম' সম্পর্কে জানিনা। শব্দটি আমাদের কাছে অপরিচিত। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অটিস্টিক বলে। উইকিপিডিয়াতে বলে হয়েছে "Autism is a disorder of neural development characterized by impaired social interaction and communication, and by restricted and repetitive behavior."



অত্মসংবৃতি বা অটিজম (ইংরেজি Autism )নিউরোডেভেলপমেণ্টাল ডিজঅর্ডার যা বয়স তিন বছর হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়। অত্মসংবৃতির শিশুরা সামাজিক অচরণে দূর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারবার করার প্রবণতা থেকে তাদের সনাক্ত করা যায়।এই রোগের কারণ সর্ম্পকে এখনও কোনও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে জেনেটিক কারণে এটি হয় বলে প্রমাণ আছে। কিন্তু আমাদের মতো অনুন্নত এবং সল্প শিক্ষিত সমাজে অটিস্টিক শিশুর জন্ম গ্রহনকে ভুল ভাবে ব্যখ্যা করা হয়। আর এর ফলে সেই শিশুটি হয়ে পড়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। পায় না সমাজের আদর, স্নেহ , মমতা কিংবা ভালোবাসা। অজ্ঞতা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্ঘি এইসব শিশুকে ঠেলে দেয় চরম অবজ্ঞা আর কঠিন কষ্টের এক অন্ধকার নিয়তির দিকে। কিন্তু আধুনিক সময়ে এসে আমরা আজ জানি কেন শিশুরা অটিজম রোগে আক্রান্ত হয়।



বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের ঘরের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হয়। তাদের সমাজের স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দেয়া হয় না। আমাদের সমাজের অধিকাংশ পরিবারগুলো মনে করে নিজেদের পাপের ফলের কারনে এরকম শিশুর জন্ম হয় যার সাথে আসলে বাস্তবতার কোন মিল খুজে পাওয়া যায় না।তথাকথিত ধর্মীয় সম্প্রদায় একে সমাজে পাপ বৃদ্ধি ও মহিলাদের পর্দাহীন অবস্থায় চলাফেরা করার ফসল বলে আখ্যায়িত করে থাকে যা সম্পুর্ন অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক। অন্ধ আর শিক্ষার অভাব আমাদেরকে অন্ধকার করে রেখেছে। সংকোচ আর সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরাও দগ্ধ হতে থাকেন প্রতিদিন এবং প্রতিনিয়ত। অত্মসংবৃতির প্রকাশ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন হারে ঘটে। আধুনিক গবেষণা মতে, প্রতি হাজারে ১-২ জন অত্মসংবৃতিতে এবং এক হাজারে ৬ জন এএসডি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের পর থেকে আক্রান্ত হয়েছে জানা গেছে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে এর পিছনে উন্নত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই মূল কারণ বলে বিবেচিত হয়। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের প্রতি ১১০ জনে ১ জন অটিজমে ভুগছে। ভারতে প্রতি ৫০০ জনে ১ জন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০০০০ জনে ৫ জন, অটিস্টিক শিশুদের ঢালাওভাবে প্রতিবন্ধী বলা হয় ।



বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুদের যেমন সঠিক কোন পরিসংখ্যান এখনো পর্যন্ত নেই, তেমনি নেই শিশুদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠানও। সূত্র : Click This Link

আমাদের দেশে অটিস্টিক শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় রয়েছে অনেক ধরনের ঝামেলা আর অসঙ্গতি। অটিস্টিক শিশুদের জন্য পরিচালিত বেশির ভাগ স্কুল ও প্রতিষ্ঠান মাসে এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন নিচ্ছে। তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে সন্তানের লেখাপড়া, আচার-ব্যবহারে কোনো উন্নতি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকেন অভিভাবকেরা।জানা যায়, নীতিমালা ছাড়াই সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বেসরকারি সংস্থা বা সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নিবন্ধন নিয়েই চলছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কতজন ছাত্র ও শিক্ষক আছেন, তার কোনো হিসাব নেই। অন্যদিকে এ ধরনের শিশুদের অগ্রগতি মাপার ব্যবস্থা নেই। ফলে অভিভাবকদের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহি করতে হয় না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বেশির ভাগ স্কুল পরিচালিত হচ্ছে বলে একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। সূত্র : http://www.prothom-alo.com/detail/news/172540

বিশ্বজুড়ে অটিস্টিক মানুষ ঘিরে ভ্রান্তি ও বৈষম্যের জাল বেড়েই চলছে। প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ এই মৃদু থেকে গুরুতর অটিস্টিক সমস্যায় আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন গত এপ্রিলে প্রকাশিত রিপোর্টে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া প্রতি ১১০টি শিশুর মধ্যে একটি শিশু অটিস্টিক সমস্যায় আক্রান্ত। অথচ এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১৫০ জনে একজন। সূত্র : Click This Link

অটিস্টিক শিশু নিয়ে বাবা-মা ও অভিভাবকরা কি যে দুর্দশার শিকার হন, তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। অটিজম শিশুদের বিকাশজনিত সমস্যাগুলো যদি শুরুতে শনাক্ত করা যায়, তাহলে অভিভাবকদের দুর্দশা যথেষ্ট লাঘব হবে বলে শিশু নিউরোলজিস্টগণ জানিয়েছেন। তারা জানান, শিশু বিশেষজ্ঞরা শিশু নিউরোলজি সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দেবেন, সাইকোলজিস্ট বাবা-মাকে কাউন্সিল করবেন ও ব্যবহারগত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবেন, স্পিচ থেরাপিস্ট শিশুকে কথা বলতে সাহায্য করবেন, ব্যক্তিগত ও সামাজিক আচরণ শিক্ষা দেবেন অকুপেশনাল থেরাপিস্ট ও স্পেশাল স্কুলে প্রশিক্ষণ দেবেন অটিস্টিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক।

বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে এখনো সচেতনতা গড়ে উঠেনি | এ কারণে হয়ত অটিজমের রোগী সঠিকভাবে চিহ্নিত হচ্ছে না | শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা যাদের আছে তাদের মধ্য থেকে মূলত অটিজমের রোগী চিহ্নিত হচ্ছে | এখনো বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে এ রোগ সম্পর্কে কোনো সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি | অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে প্রথম চিকিৎসাই হলো তার রোগ শনাক্ত করা | কোনো রকম ওষুধ দিয়ে অটিজমের শিশুকে সারিয়ে তোলা সম্ভব নয় | বরং তাকে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে | এই শিক্ষা ছাড়া তার চিকিৎসার আর কোনো বিকল্প নেই | এই শিক্ষার মাধ্যমে তাকে স্বাধীনভাবে চলার উপযোগী করা সম্ভব |



এই সব শিশুদের সমাজের সচেতনতার অভাবে পাগল বলে গালি দেয়া হয়। এ রকম আচরন নিতান্তই অমানবীয় এবং অসামাজিক বলে বিবেচিত | তাই সবার কাছে বিনীত অনুরোধ রইলো আসুন আমরা অটিস্টিক শিশুদের পাগল না বলে তাদের সম্পর্কে আরো জানি। তাদের এইরকম পরিস্থিতির কারন সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করে তুলি। কোন ঐশ্বরিক শক্তি এদের পরিবর্তন ঘটাবে না। আমাদের মানবীয় আচরন এবং তাদের প্রতি আদর এবং ভালোবাসা এই ধারনার পরিবর্তন আনতে সক্ষম। অবহেলা না করে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়াটাই আমাদের মানুষ হিসেবে সামাজিক এবং নৈতিক দায়িত্ব | সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×