ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লগিং আসলে কী এবং ব্লগারদের মধ্যে নাস্তিকতার এত প্রসার কেন?
মূলতঃ ইংরেজী শব্দ ‘ব্লগ’ হল ওয়েবলগ-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এমন একটি ওয়েবসাইট যাকে তুলনা করা যায় ব্যক্তিগত ডায়েরীর সাথে। অন্যভাবে এগুলিকে উন্মুক্ত অনলাইন ম্যাগাজিনও বলা যায়। ইন্টারনেটে নিজস্ব ব্লগসাইট বানিয়ে দৈনন্দিন ডায়েরী লেখার মত অনেকেই লেখালেখি করে থাকেন। এরূপ ব্যক্তিগত লেখালেখিকে একক ওয়েবসাইটে সমন্বিত করে একটি ভার্চুয়াল কম্যুনিটি সৃষ্টি করা এবং সেখানে পারস্পরিক মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরী করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় কম্যুনিটি ব্লগ। যিনি ব্লগে লেখালেখি করেন বা বিবিধ কন্টেন্ট পোস্ট করেন তাকে ‘ব্লগার’ বলে। এ সকল ব্লগে একাউন্ট খুলে লেখালেখির মাধ্যমে ব্লগের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মতের আদান-প্রদান করা যায় খুব নির্বিঘ্নে। এ কারণে কম্যুনিটি ব্লগগুলো খুব দ্রুতই তরুণ সমাজের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এমনকি ২০১০ সালে দেশে ইন্টারনেটে সর্বাধিক ব্যবহৃত শীর্ষ ১০টি ওয়েবসাইটের তালিকায় ৭টিই ছিল এই সকল ব্লগসাইট।
বাংলাভাষায় সামাজিক ব্লগ হিসাবে ২০০৫ সালে সর্বপ্রথম ‘সামহয়্যার ইন ব্লগ’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ইন্টারনেটের প্রসার লাভ করার সাথে সাথে ব্লগিং-এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে একে একে সৃষ্টি হয় নাগরিক ব্লগ, আমার ব্লগ, প্রথম আলো ব্লগ, সোনারবাংলা ব্লগের মত জনপ্রিয় ব্লগগুলো। কখনো লেখালেখির অভ্যাস ছিল না, এমন বহু তরুণের লেখার হাতেখড়ি হয়েছে ব্লগের মাধ্যমে। যদিও ইদানিং ফেসবুক-টুইটারের দাপটে ব্লগসাইটের জনপ্রিয়তা বেশ কমে এসেছে। ব্লগগুলোর জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল, ব্লগ মডারেটরদের বেঁধে দেয়া সাধারণ কিছু নীতি মেনে স্বাধীনভাবে যে কোন বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করা এবং অন্যের কাছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পৌঁছে দেয়ার অনন্য সুযোগ পাওয়া। নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ব্লগের এই অভূতপূর্ব স্বাধীনতার কোন জুড়ি নেই। ফলে সরকারী বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে অবাধ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের এই উন্মুক্ত অঙ্গনটি ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিকদের জন্য মহা সুযোগ হয়ে উঠে।
যেহেতু এ দেশে সামাজিকভাবে ধর্মবিরোধী নাস্তিকদের কোন ঠাঁই নেই, তাই এই নিরাপদ (!) স্থানে এসে তারা কখনও স্বনামে কিংবা বেশীরভাগই বেনামে মনের সুখে নাস্তিকতার প্রচার ও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর মওকা পেয়ে যায়। অন্যদিকে ‘উদারমনা’ নাস্তিক্যবাদী বিভিন্ন ব্লগ মডারেটররাও ‘মুক্তচিন্তা’ প্রকাশের নামে এদেরকে সাদরে ঠাঁই দিতে থাকে। এভাবেই ব্লগ হয়ে উঠে নাস্তিকদের জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ অভয়ারণ্য। স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগ ‘মুক্তমনা’র মডারেটর তা স্বীকার করে বলেছে, ‘গত কয়েক বছরে স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনা সম্পন্ন মুক্তমনা যুক্তিবাদীদের বিশাল উত্থান ঘটেছে বিভিন্ন ফোরামে এবং আলোচনাচক্রে, যা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমে সম্ভব ছিল না মোটেই’।
উল্লেখ্য যে, ব্লগিং মানেই কিন্তু নাস্তিকতা নয়। কেননা ব্লগীয় পরিমন্ডলে স্বল্পসংখ্যক নাস্তিক গোষ্ঠীর বিপরীতে সুস্থ ও মননশীল চিন্তাধারার প্রচুর সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লেখকও রয়েছেন। বরং তাদের বিপরীতে নাস্তিকদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বলা যায়। যারা নিজেদের মূল্যবান সময় ও মেধা ব্যয় করে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যেমন তৎপর রয়েছেন, তেমনি নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ভার্চুয়াল লড়াইয়ে তথা তাদের যুক্তি-কুযুক্তির শিকড় উপড়ে ফেলার যুদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ় ভূমিকা রেখে চলেছেন।
(কারটেসি: আমিন বেগ ভাই)