খাবার পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় সাত সকালে পানি আনতে বের হলাম।
আমি যে মেশিন থেকে পানি সংগ্রহ করি ওটার খরচ বেশ কম অথচ পানিটা ভালো। খেতে খুব ভালো।
খরচ অবিশ্বাস্য রকম কম। 50 পয়সায় 10 লিটার পানি সংগ্রহ করা যায়।
আমি চারটা কন্টেইনার সাথে নেই প্রতিটা প্রায় 6 লিটার পানি ধরে।
আমি পানি আনতে রওনা দিলাম সকাল সাড়ে আটটার দিকে। বাসা থেকে গাড়ী নিয়ে গেলে 3/4 মিনিট লাগে।
সে যাই হোক । সকাল বেলায় ওখানে পার্কিং পাওয়া যায় সহজেই। আমি গাড়ি পার্ক করে দুটি পানি ভরার কন্টেনার নিয়ে পানির মেশিন এর কাছে গেলাম। যথারীতি দুটি বোতল পানি দিয়ে পূর্ণ করে ফেললাম।
পিছনে তাকিয়ে দেখি এক মালয়েশিয়ান ভদ্রলোক হোন্ডা অর্থাৎ মোটরসাইকেল নিয়ে পানি নিতে এসেছেন। তার সাথে পানি ভরার দুইটা কন্টেইনার আছে। 10 লিটার করে পানি ধরে।
আমি আমার পানি ভরা দুটি কন্টেনার নিয়ে গাড়িতে রেখে বের হলাম। বাকি দুটি বোতল পানিতে ভরব বলে। এমন সময়ে শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। আমি কোন বুদ্ধি না পেয়ে গাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে এসি অন করলাম।
বাইরে তাকিয়ে দেখি ওই ভদ্রলোক পানি ভরে বোতল রেখে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
আমি বসে বসে ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেকচার শুনতে লাগলাম।। 10 মিনিট পরে মনে হলো বৃষ্টি মনে হয় জীবনেও থামবে না।
আমি ঠিক করলাম ছাতা নিয়ে বাকি দুটি বোতল ভরে ফেলি। সেই অনুযায়ী ছাতা আর বোতল নিয়ে বের হলাম
পানি ভরতে শুরু করলাম।
বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখি মালয় ভদ্রলোকটি আমাকে মালয় ভাষায় ডাকছেন। বুঝতে পারলাম উনি আমার সহযোগিতা চেয়েছেন। যেন আমি আমার ছাতা দিয়ে উনাকে উনার মোটরসাইকেল এর কাছে নিয়ে যাই।
আমি দ্রুত উনাকে মোটরসাইকেলের কাছে নিয়ে গেলাম । তিনি মোটরসাইকেলের ভেতর থেকে কি যেন হাবিজাবি টাকা-পয়সা বের করে আবার আমার সাথে বারান্দায় চলে গেলেন। চলে যাবার সময় মালয় ভাষায় ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন। যেন তিনি খুবই খুশি।
আমি আমার বাকি বোতলটা পানি ভরতে শুরু করলাম। এই সময় বৃষ্টি খুবই কমে গেল। তাকিয়ে দেখি উনি বারান্দা থেকে নেমে আসছেন। এসে আমার কাছে দাঁড়িয়ে মালয় ভাষায় কৃতজ্ঞতা সূচক কিছু কথা বললেন। এবং সেই সাথে ধুম করে 20 পয়সার চারটি কয়েন মেশিন এর উপর রেখে চলে গেলেন। আমি বললাম আমি মেশিনে অলরেডি প্রচুর পরিমাণে কয়েন ঢুকিয়ে দিয়েছি। কোন সমস্যা নাই। তিনি ধন্যবাদ ধন্যবাদ বলতে বলতেই যেয়ে মোটরসাইকেলে চেপে বসে বসলেন।
আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দ্রুত পয়সা চারটি নিয়ে উনার কাছে চলে গেলাম। বললাম, আমি আপনার সামান্য উপকার করতে পেরে খুবই আনন্দিত। আর পানি নেওয়ার মতো যথেষ্ট পয়সা আমি অলরেডি মেশিনে ঢুকিয়ে দিয়েছি ।
আপনি ভালো থাকবেন। বলে পয়সাগুলো মোটরসাইকেলের সামনের জিনিসপত্র রাখার যে জায়গা আছে সেখানে রেখে দিলাম।
তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজততে ভদ্রলোক মোটরসাইকেলে 20 লিটার পানি নিয়ে বাসার দিকে ছুটলেন।
আমিও আমার পানির বোতল গুলো নিয়ে বাসার দিকে ছুটলাম।