ঢাকা শহরের অজস্র স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীদেরকে খুব সকালে দিয়ে আসতে হয়। বেশীর ভাগ স্কুলেই সকাল ৮টা কিংবা সাড়ে আটটার মধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। ঢাকা শহরের বেশীর ভাগ মহিলার কাঁধে অবধারিতভাবে এই দায়িত্বটি এসে পরে। খুব সকালে বাচ্চাকে রেডি করে স্কুলে দিয়ে আসা। যাদের বাসা একটু দূরে তাদের আবার অন্য সমস্যা। স্কুলের সামনে কোন একটি জায়গায় অনেক মহিলাকে তাই দেখা যায় বসে বসে অপেক্ষা করতে কখন ছুটি হবে আর কখন তারা তাদের প্রিয় সন্তানকে নিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরে আসবেন। এই দৃশ্য এখন খুবই কমন একটি বিষয়।
যে কোন ধরনের অপেক্ষাই অনেক কঠিন ও কষ্টের একটি ব্যাপার । কেননা, অপেক্ষার ঘড়ির কাটা খুব আস্তে আস্তে ঘুরে। সময় পার হতে চায় না। তাই বেশ কয়েক জন মহিলা একত্রিত হলে তারা নিজেরাই আগ্রহী হয়ে খাতির জমিয়ে তুলেন। আমি প্রায় প্রতিদিনই এমন জমজমাট আড্ডা দেখে দেখ অভ্যস্ত।
আমার বাচ্চারা যে স্কুলে পড়ে সেখানকার দৃশ্যও মোটামুটি একই। এই স্কুলের বেজমেন্ট-এ দেখলাম আরো সুন্দর ব্যবস্থা। সেখানে একটি জায়গায় মোট কালো রঙের কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। যাতে করে কোন বেগানা পুরুষলোক ভাবীদেরকে দেখতে না পায়। ফলে সেখানে বসে আচ্ছা করে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারেন নারী অভিভাবককুল। বড়ই সুন্দর ব্যবস্থা।
বিকেলবেলায় এই স্কুলে শুরু হয় কোচিং সেশন। বিকেল বেলায় বাচ্চাদের দিয়ে আসা এবং রাতে নিয়ে আসার জটিল দায়িত্বটি পালন করতে হয় আমাকেই। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি রাতের বেলায়ও নারী অভিভাবকদের প্রাধান্য। পুরুষ অভিভাবক নেই বললেই চলে। রাতেও চলে তুমুল আড্ডা। সেই আড্ডা যেন শেষ হতেই চায় না।
নারী অভিভাবকরা জমিয়ে তুমুল আড্ডা দেন। দুনিয়ার কোন বিষয় মনে হয় বাদ থাকে না। আমি চুপচাপ একটি প্লাস্টিকের চেয়ার দখল করে বসে বসে অপেক্ষা করি। আর তাদের আড্ডার মুখরিত কলকাকলি শুনি। উপায় নেই।
তাদের আড্ডা থেকে একটি বিষয় উদ্ধার করলাম- তারা একে অপরকে ভাবী ডাকেন। যেমন রহিমা তার পাশে বসা সখিনাকে ভাবী ডাকেন। আবার সখিনাও রহিমাকে ভাবী ডাকেন। স্বাভাবিক বিষয় এই যে, এখানে একজন ভাবী হলে আরেকজন হবেন ননদ। কিন্তু স্কুলের আড্ডায় নিয়ম অন্যরকম। উদাহরণ হিসাবে-
প্রথম মহিলাঃ তারপর কি হয়েছে শুনবেন ভাবী?.......
দ্বিতীয় মহিলাঃ বলেন ভাবী, শুনবো। …….
একে অপরকে ভাবী ডাকার পিছনে কী কারণে থাকতে পারে। আমি চুপচাপ চিন্তা করতে থাকলাম। এক সময় আমার কাছে মনে হলো এটা একটি পুরুষতান্ত্রিক ঝামেলা হতে পারে। তারা যদি একে অপরকে ভাবী না ডেকে আপা ডাকেন তাহলে স্বাভাবিক নিয়মে
কোন এক জনের স্বামীর কাছে অপর একজন শ্যালিকা হয়ে যেতে পারেন। এটা বড় একটা একটা আপদ। তখন দুলা মিয়া দুস্টামী করার অধিকার পেয়ে যেতে পারেন। কেননা, দুলামিয়াদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছ শ্যালিকাদের সাথে দুষ্টুমী করার।
আর তাই মনে হয় আমাদের নারী অভিভাবককুল যখন যেখানে অনেকেই একত্রিত হোন অপর পক্ষের নারীদেরকে আপু/আপা না ডেকে নিরাপদ ডাক ভাবী ডাকেন। একে অপরকে ভাবী ডাকলে উভয়েই থাকেন নিরাপদ।
বড়ই আচানক ঘটনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



