somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুরস্কে নীরব বিপ্লব : রজব তাইয়েব এরদোয়ান

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের জাতি ও দেশের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ও আত্মনিবেদনের কারণে গত দশকে আমরা বিপুল কাজ, বিশাল আকারের বিনিয়োগ এবং ব্যাপক সংস্কার সাধন করতে পেরেছি। গত ১০ বছরে তুরস্কে আমরা যেসব কাজ করেছি, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক সংস্কার ছিল অনন্য ও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তুরস্ককে আরো গণতান্ত্রিক, মুক্ত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ দেশে পরিণত করতে আমরা যেসব পদপে গ্রহণ করেছি, তার ফলে আমাদের দেশের ইমেজ আমূল বদলে গেছে। গণতন্ত্রায়নের ল্েয আমাদের গৃহীত ব্যবস্থার প্রভাব সরাসরি অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও সমাজজীবনে পড়েছে, সব েেত্র তুরস্ক শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
আমাদের দৃঢ় ভিত্তি এবং দীর্ঘ ঐতিহ্যের বিষয়টি শেখ ইদেবালি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন : ‘মানুষকে বিকশিত হতে দিন, তাহলে রাষ্ট্রও বিকশিত হবে।’ মানুষের জন্য এবং মানুষের সেবা করার জন্যই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মূল্য দেয় না, তাদেরকে সরিয়ে রাখে, প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেয়, নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে, নাগরিকদের বিপরীতে নিজেকে সুরতি করে, সেই রাষ্ট্র সেবা প্রদান করতে পারে না, অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারে না, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে না। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী কোনো সত্তা নয়, বরং রাষ্ট্র হলো তার জনগণের সাথে সহাবস্থানকারী এমন এক সত্তা, যে তার জনগণকে সেবা প্রদান করার দায়দায়িত্ব বহন করে।
গত দশকে আমরা রাষ্ট্রকে তার জনগণের সেবকে পরিণত করতে এবং রাষ্ট্র ও জাতির মধ্যকার আস্থাজনিত সমস্যা সমাধান করার অর্থাৎ রাষ্ট্রকে তার পুরো জাতিকে বরণ করে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এই প্রক্রিয়ায় আমরা এই উপলব্ধিটি মাথায় রেখে স্থানীয় সরকার কাঠামোতে সংস্কার বাস্তবায়ন করেছি যে, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন শুরু হয় স্থানীয় পর্যায় থেকে।’ অধিকন্তু, ‘গ্রামে ফিরে যাও’ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক েেত্র তাৎপর্যপূর্ণ পদপে গ্রহণ করেছি, সন্ত্রাসবাদের কারণে তিগ্রস্তদের সমস্যা সমাধানের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়েছি। তা ছাড়া নানা উৎসাহমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য ব্যাপকভাবে কমিয়ে এনেছি, পুরো দেশে এমনকি সবচেয়ে ছোট বসতিতেও কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।
উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার সমান্তরালে আমরা গণতন্ত্রায়ন, আইনের শাসন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেছি। এগুলোর প্রতিটি েেত্রই ‘নীরব বিপ্লব’ সাধিত হয়েছে।
আমরা গণতন্ত্র, নিরাপত্তা বা স্বাধীনতার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় কখনো দিইনি। সমাজে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ‘নতুন নিরাপত্তা দৃষ্টান্ত’ সৃষ্টির ল্েয আমরা আমাদের ভিত্তি হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টিকারী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি। আমরা জরুরি অবস্থা অব্যাহত রাখার প্রথার অবসান ঘটিয়েছি। আমরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আদালত, বিশেষ কর্তৃত্বপূর্ণ আদালত বিলুপ্ত করেছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা রা ও নিরাপত্তা বিধানের ল্েয আন্ডার সেক্রেটারিয়েট প্রতিষ্ঠা করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ‘জাতীয় ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রক্রিয়ার’ মাধ্যমে আমরা এমন এক সামাজিক শান্তির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যার ফলে মন-মানসিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিপ্লব ভিন্নতাকে বৈচিত্র্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার বোধ সৃষ্টি করেছে, দেশের নাগরিকদের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করার নিয়ন্ত্রণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বদলে নাগরিকদের সেবা করার ধারণার জন্ম দিয়েছে।
আমরা বিভিন্ন ভাষা ও আঞ্চলিক কথন সর্বস্তরে শেখানো নিশ্চিত করেছি। এগুলো এখন রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা এবং সম্প্রচারে ব্যবহার করাও যেতে পারে। আমরা স্বজনদের সাথে সাাতের সময় বন্দী ও দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের তাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অনুমতি দিয়েছি। আমাদের নাগরিকেরা যাতে আরো দতার সাথে সরকারি কাজ করতে পারে সে জন্য আমরা বিভিন্ন ভাষা ও আঞ্চলিক কথনের জন্য দোভাষী নিয়োগ করেছি।
বর্তমান বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মানবাধিকার রা এবং বিকাশের ল্েয প্রবিধান প্রণয়ন করেছি। আমরা ‘নির্যাতনের ব্যাপারে শূন্য সহনশীলতার নীতি’ অনুসরণ করছি। আমরা ইউরোপিয়ান মানবাধিকার নীতিমালার আলোকে পুনঃবিচারের ব্যবস্থা করেছি। আমরা তথ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সংগঠন করার স্বাধীনতার পরিধি বাড়িয়েছি। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের নিরাপত্তা বিধান করেছি। আমরা তুরস্কের জন্য ন্যায়পাল ও মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি।
সরকারি সংস্কারের আওতার মধ্যেই আমরা বিচার বিভাগে তাৎপর্যপূর্ণ প্রবিধান প্রবর্তন করেছি। বিচার বিভাগে অভিভাবকসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির অবসান ঘটিয়ে একে আরো নমনীয় ও উদার কাঠামোতে প্রতিস্থাপন করেছি। এর ফলে ‘শক্তিমানদের আইনের বদলে আইনের শক্তিমত্তা’র নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সাংবিধানিক আদালত, বিচারক ও আইনজীবীদের উচ্চতর বিভাগে সংস্কার এনে একে আরো গণতান্ত্রিক করেছি। নিরপে ও দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা ছাড়াও আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সাংবিধানিক আদালতের দরজা খুলে দিয়েছি। আমাদের জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক মানদ উন্নত করেছি। সামরিক বাহিনীর হস্তেেপর ফলে সৃষ্ট ১৯৮২ সালের সংবিধানের অভিভাবকসুলভ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে আমরা সেটা করতে পেরেছি।
একইভাবে আমরা বেসামরিকীকরণের েেত্র বেশ কিছু সংস্কার সাধন করেছি। বিশেষ করে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছি, সামরিক বাহিনীর বিচারের আওতা কমিয়ে এনেছি, ইএমএএসওয়াইএ প্রটোকল বাতিল করেছি, সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করার প্রথার অবসান ঘটিয়েছি, সুপ্রিম মিলিটারি কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের প্রতিরোধক বিচারের প্রবর্তন করেছি, ১২ সেপ্টেম্বরের অভ্যুত্থানের জন্য দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করেছি, টিজিএনএ’র আওতায় তদন্ত কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি।
এসব ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার এবং একইসাথে বেসামরিকীকরণ ও গণতন্ত্রমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এমন একটি দেশ গড়েছি যেখানে ‘নীরব বিপ্লব’ আরো শক্তিশালী, আরো সমৃদ্ধ, আরো উন্নত, আরো গণতান্ত্রিক ও আরো উদার হয়েছে। তুরস্ক ২০২৩ সালের জন্য যে ল্য স্থির করেছে সেটা বাস্তবায়ন এবং এই অঞ্চল ও বিশ্বে আমাদের দেশের আরো কার্যকর ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য এবং একইসাথে ‘আবার মহা তুরস্ক’ বিষয়ক আমাদের আদর্শ অর্জনের জন্য আমরা অবশ্যই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সংস্কার অব্যাহত রাখব। আমি বিশ্বাস করি, তুরস্ক যত দিন প্রয়োজনীয় রূপান্তর ও পরিবর্তন এবং সংস্কার সাধন করে যাবে তত দিন আরো শক্তিশালী অর্থনীতি, উন্নত গণতন্ত্র ও সক্রিয় পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এই অঞ্চলে আরো তাৎপর্যপূর্ণ দেশে এবং বিশ্বে উঠতি তারকায় পরিণত হবে।

-রজব তাইয়েব এরদোগান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী
অনুবাদ : হাসান শরীফ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×