মাঝরাতে জয়া... ২য় অংশ
এরই মধ্যে স্যুটেড-বুটেড দুজন লোক এসে জিজ্ঞেস করছে কোন হেল্প লাগবে কিণা! আরে কি যন্ত্রণা...কি হেল্প চাইবে জয়া! ও কি বলবে যে হ্যাঁ, আমাকে যে কয়েক ঘন্টা আগে বিয়ে করেছে সে হারিয়ে গেছে! খুঁজে পাচ্ছিনা! রাগে-দুঃখে ওর চোখ জলে ভরে উঠে। ছুটে যায় রিসিপসনে। সাহস করে রুম ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই কর্পূরের মতো সব সাহস উবে যায়! এতো টাকা...রুমতো নিতে পারবেনা। তবে কি ওরা হোটেল থেকে বের করে দিবে? আবার চোখ ভেঙ্গে জল গড়ায় গালে...আতি-পাতি করে খুঁযে দেখে ব্যাগে, জোর আট হাজার টাকা হবে। সাথে কিছু গোল্ড আছে, ওগুলো রেখে কি রুম নেবে রাতের জন্য! এখানে কি ওভাবে রুম পাওয়া যায়! জয়া ফিরে আসে সোফায়।
হাত-পা অসার হয়ে আসে জয়ার। কি করবে বুঝতে পারেনা! দু’হাত চেপে ধরে মুখে...এত জল কোত্থেকে বেরোচ্ছে...এও কান্নাও জমে ছিল! খানিক বাদে রিসিপসনের ছেলেটা ফিরে এসে জানায়, “ম্যাডাম, আপনি চাইলে অপেক্ষা করতে পারেন ভোর হয়া পর্যন্ত। আপনাকে কেউ আর বিরক্ত করবেনা!”
জয়া বাস্তবে ফিরে আসে! তবু ছেলেটার কথা যেন দৈব বাণীর মতো শোনায়! হেসে ধন্যবাদ জানাতে চায় কিন্তু বিস্ময় কাটে না...ছেলেটাও সে সুযোগ দেয়না। বলেই পা বাড়ায় রিসিপসনে! ফোনটা ব্যাগে রেখে আচঁল টেনে জড়সড় হয়ে বসে জয়া। রাতে কি এখানে তাপমাত্রা আরও কমিয়ে দেয়া হয়, নাকি মানুষ-জন নেই বলে এই শীতলতা!
এলোমেলো অনেক কথা ভাবে জয়া...কি হলো, কি হচ্ছে এখানে বা কি হচ্ছে ওখানে, যেখানে মির্জা আছে! আশপাশের দেয়ালে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘড়ি খুঁজে জয়া। কোথাও ঘড়ি নেই কেন? ক’টা বাজে? মনে পড়ে, ব্যাগ খুলে মোবাইলে দেখলেই তো হয়! কিন্তু আর ব্যাগ খুলতে ইচ্ছে হয়না...কেউতো ওর অপেক্ষায় নেই! হায়রে সময়, যখন দরকার তখন পাওয়া কঠিন, আর যখন সময় পেরনোটাই মুখ্য তখন সময় স্থির!
সারাদিনের ধকলে তন্দ্রামত এসে যায় জয়ার। হোটেলের বাইরে-ভেতরে তখন প্রচন্ড নিরব রাত্রি। রাত কাটছে তার নিজের নিয়মে। কন্সিয়ার্জে গল্প করছে, আর ভোরের দৈনিক গুছাচ্ছে রোজারিও আর সিকিউরিটি অফিসার। মুখ থুবরে টেবিলে পরে ঘুমোচ্ছে ডিউটি ম্যানেজার। ফয়সাল ব্যাক অফিসে টেলিফোন অপারেটরের রুমে টিভি দেখছে। রিসিপসনে একা দাঁড়িয়ে বই পড়ছে জামিল। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “মনের মানুষ”...বেশ লাগছে! আফসোস হচ্ছে কেন ও মানিক বন্দোপাধ্যায়ের “মনের মানুষ” ছবিটা দেখলো না, যেটা এই বই অবলম্বনে তৈরী।
বাইরে থেকে ভেসে আসছে ফজরের আযানের ধ্বনি...কেটে যায় জয়ার তন্দ্রা। উঠে গিয়ে জল দিয়ে আসে চোখে মুখে। আয়নায় নিজেকে কেমন অদ্ভূত দেখায়, ফোলা চোখ-মুখ, বীভৎস! তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে ওয়াসরুম থেকে। ব্যাগ নিয়ে রিসিপসনে এসে দাঁড়ায়। রিসিপসনের সেই ছেলেটা তখনো দাঁড়িয়ে, কি যেন পড়ছে। ছেলেটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে হোটেলের গ্লাসডোর পেরিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ায় জয়া। আলো না ফুটলেও পাখির কিচির-মিচির শুরু হয়ে গেছে। বাইরে তখন হালকা শীতল বাতাস। কেঁপে উঠে জয়া...ভাবে কোথায় যাবে সে! মা-বাবা নেই...ঢাকায় থেকেছে বড় চাচার বাসায়! ওখানে তো ফেরা যাবে না...'আর ফিরছিনা' জানিয়ে চিঠি লিখে এসছে! মির্জা ঢাকায় কিছু বন্ধু-কলিগের সাথে শেয়ার করা অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, জানে ওটা কলাবাগানে, কিন্তু কখনো যায়নি ওখানে! কাল রাতে ওদের ওঠার কথা ছিল দুরুমের এক ছোট্ট বাসায়! সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল মির্জা, জয়ার তাই দেখা হয়নি সেই বাসা। কোন এলাকায় জয়া সেটা জানে, কিন্তু এ্যাড্রেস জানা নেই। আর জানা থাকলেই কি...চাবিতো মির্জার কাছে! হাতব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে জয়া। নাহ...কোন মিসডকল নেই। আরেকবার কি ফোন করে দেখবে মির্জার নাম্বারে?
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করছে...মনে সাহস জাগে! জানে না কোথায় যাবে, তবু পা বাড়ায় জয়া! এতো বড় পৃথিবী, তার কয়েকশ’ কোটি মানুষ...কোথাও কি জায়গা হবে না তার!
(চলবে)
আলোচিত ব্লগ
হাদিকে গুলি করলো কে?
হাদিকে গুলি করলো কে?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইতিহাসের সেরা ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।