চলছে...
হাসু যা বললো তাই করলো, সত্যিই তারপর থেকে আর কখোনো বাজে কথা বলেনি আমার সাথে।
কিন্তু আমারতো বলতেই হতো, হাসু তখন ফোনে আমার কোনো কথা শুনতো না শুধু আমাকে গীটার বাজিয়ে শুনাতো।
মাঝে মাঝে আকাশের চাঁদটা আজ কেমন, তা বর্ণনা করতো, বলতো জানো আজ পূর্ণিমা অনেক আলো বাইরে আমি বিছানায় শুয়ে চাঁদটা দেখতে পাচ্ছি, তুমি কি হাঁটবে আমার সাথে? মন খারাপ তোমার? মন খারাপ করো না তোমার স্বামীকে বুঝিয়ে বলো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতো, শান্তনা দিতো। ওর কথা শুনে মনে হতো আমি ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে আমাকে এটা সেটা বলে ভুলিয়ে রাখছে। শুধু ওর কথা শোনা ছাড়া আরতো আমার কিছু করার ছিলো না। কোনো উত্তর কখোনো দিতে পারিনি, তবু এত কষ্টের মাঝে এই একবিন্দু ভালোলাগাও অনেক বড় ছিলো।
অন্ধকারকে খুব আপন মনে হতো মাঝে মাঝে ঐ অন্ধকারেইতো হারাতাম আমার সেই কল্পনার জগতে, রানার নির্যাতন শেষ হতো, এই কষ্টের ভূবন থেকে চলে যেতাম আমার স্বপ্নীল ভুবনে, তারপর শুরু হতো আমার আপন ভাবনা। নিজে যা চাই চোখ বুঁজে তার পুরোটুকু অনুভব করে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। অনুভব করতে চাইতাম আমার সেই না পাওয়া অনুভতি গুলোকে। আমার স্বপ্নের ভূবনটি না থাকলে বেঁচে থাকাই হয়তো কঠিন হতো।
এমনি করে চলছে আমার দিন রাত।
রানা একদিন অনেক জায়গায় ফোন করলো কিন্তু আমি কোনো ছেলেকেই কথা বলতে রাজি করাতে পারলাম না। রানা হঠাৎ করে বললো,
তোমার যে রিংকুভাইয়ের কাছে ফোন করতে যেয়ে আমার সাথে তোমার পরিচয় তার কাছে ফোন করো।
চমকে উঠলাম, আবার নতুন খেলো.....নিস্তেজ লাগে নিজেকে
রাগ করতেও কেমন যেনো শক্তি পাই না। শুধু বললাম বাংলাদেশেতো অনেক ছেলে আছে উনার কাছে ফোন করতে হবে কেনো! তাছাড়া উনি কখোনো এসব কথা বলবে না। উনি অন্যরকম।
রানা মানলো না বললো ঠিক আছে আজ শুরুতেই সেক্সের কথা বলতে হবে না অন্য কথা বলে ওনাকে কনভেন্স করো তারপর আস্তে আস্তে ওসব বলো।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে কি করবো!
ফোন করলো রিংকুভাইয়ের কাছে ফোনটা উনিই ধরলেন।
কেমন আছেন?
কে আপনি?
পরিচয় দিলাম না, বললাম আমাকে চিনবেন না। আমার নাম লায়লা। আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো না। নাম্বারটা কোথায় পেয়েছেন আপনি।
বললাম এক বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম সেই বাসার একটা ডায়রি থেকে নিয়েছি।
আস্তে আস্তে কিছুটা নরম হলো। বললাম বাসায় আমি একা কেউ নেই মনটা খারাপ লাগছে, তাই একটু গল্প করতে চাই।
একথা সেকথা থেকে একসময় তাকে জিজ্ঞেস করলাম প্রেম করেন আপনি?
উনি বললেন না। তবে জীবনে একটা মেয়েকে খুব ভালো লেগেছিলো কিন্তু তাকে বলা হয়নি। একটা কোচিং-এ ক্লাস নিতাম আমি, সেখানে একটা মেয়ে ছিলো- মেয়েটার মায়া মায়া মন, মায়া মায়া চেহারা, দুষ্টু হাসি আর লাজুক চাহনি, খুব ভালো লাগতো তাকে আমার। ওর নাম ছিলো সীমানা ।
প্রচন্ড চম্কে উঠলাম, কি শুনলাম এটা..... কি নাম বললেন?
কেনো চেনেন আপনি?
মূহুর্তের মধ্যে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম, না চিনি না, নামটা সুন্দর তাই বললাম। জানতে চাইলাম মেয়েটাকে বললেন না কেনো?
উনি বললেন- অঅমার কাছ থেকে একটা বই নিয়েছিলো ,ওর ফোন করে বইটা ফেরত দেবার কতা ছিলো, ভেবেছিলাম যখন ফোন করবে তখন ওকে বলবো, সামনা সামনি বলতে অস্বস্তি বোধ করেছিলাম ওর ঠিকানাটা আমার কাছে ছিলো না, কিন্তু মেয়েটা ফোন করলো না, আমি প্রতি মূহুর্তে ওর ফোনের অপেক্ষা করেছি এখনও অপেক্ষা করে আছি।
কিন্তু শুনেছি মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বোনের শশুড় বাড়ি রাজা বাজার ওদের পাশে একজন নাকি সীমানা নামে একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে, হয়তো সেই হবে। তবু কেনো যেনো মনে হয় একবার ও ফোন করলে একটু কথা বলতাম।
সেদিন চেষ্টা করেও অন্য কথায় আর যেতে পারলাম না।
রানা খুব রেগে গেলো। বললাম উনি বলবে না আমি তোমাকে বলেছিলাম, তাও কাল আমি আবার চেষ্টা করবো। সে রাতটা রানার খারাপ কাটলো কিন্তু আমি মুক্তি পেলাম, একটা রাত্রি রক্ষা পেলাম।
শুয়ে শুয়ে ভাবলাম সেদিন যদি ফোনটা সত্যি রিংকুভাইয়ের কাছে যেতো তবে নিশ্চিত প্রেমটা উনার সাথেই হতো। তাহলে হয়তো জীবনটা আমার এমন হতো না। একেই কি ভাগ্য বলে? যা কখোনো বিশ্বাস করিনি তাই নিয়ে প্রশ্ন জাগলো মনে।
পরদিন আবার কথা হলো তার সাথে সেদিন কিস্ পর্যন্ত রাজি করাতে পেরেছিলাম তাকে আর পারিনি। আমার সাথে দেখা করার জন্য খুবই অস্থির হলেন উনি। বললেন কেনো যেনো তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। তোমার গলাটা শুনে কেমন আপন মনে হচ্ছে। কাল ১২টায় আমি পাবলিক লাইব্রেরিতে থাকবো তুমি আসবে, বলেই ফোনটা রেখে দিলো।
আমারতো যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না,
রানা বললো তোমার কোনো বান্ধবীকে পাঠাও,
বললাম কেনো কি দরকার সেটার, রানা বললো তা না হলে আর কথা বলবে না........বুকের মধ্যে শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে চুপ থাকলাম,
আমার একটা বান্ধবীকে বললাম যে একজনের সাথে আমার ফোনে পরিচয় হয়েছে, তুই একটু দেখা করে আয়। রাজি হলো ও।
ওর সাথে অনেক কথা বলেছে, তারপর এও বলেছে ফোনের সাথে তোমাকে বাস্তবে ঠিক মিলাতে পারলাম না। ফোনের কথা বলার ধরণ আর সামনা সামনি কথা বলার ধরণ দুরকম..
টেলিফোনে তোমাকে অনেক আপন মনে হয়। ও বলেছিলো ফোনে আর বাস্তবে কি এক হয় মানুষ?
তা অবশ্য ঠিক কিন্তু ফোনে তোমার কথা বলার ধরণটা কেমন যেনো মায়া মায়া। কোনো একজনের সাথে মিল খুঁজে পেয়েছিলাম।
মেয়েটা বলেছিলো তাহলেতো ফোনে কথা বলাই ভালো......
হেসেছিলেন উনি.................
চলবে...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





