somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউরোপে ২৮ দিন >> জার্মানীতে ২য় থেকে ৫ম দিন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব: সূচনা........আগের পর্ব: জার্মানীতে প্রথম দিনের শেষ পর্ব
***
প্রথম দিনের কথা লিখতেই একটা পোস্ট হয়ে গেল, তবুও বাকি আছে অনেক কিছু। এগিয়ে যাই সামনের দিনগুলোতে।

দ্বিতীয় দিনেও আমি পথ হারিয়ে ফেললাম বাসা থেকে অফিস আসার সময়। অনেক কষ্টে খুঁজে খুঁজে ৩৫ মিনিট পরে আসতে পারলাম যেখানে রাস্তা চিনে যাওয়ার পরে আমার টাইম লাগতো ৮ মিনিট মাত্র।

অফিসে এসে আমার অফিসিয়াল চ্যাটিং সফটওয়ারে লগইন করা মাত্রই বন্ধু ও সিনিয়র ভাইরা নক করা শুরু করলো কেমন আছি তার খোঁজখবর নিতে, জার্নি কেমন হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের সাথে কথা বললাম, কলেজের ফ্রেন্ডদের মেইল দিলাম, অফিসের পাশের ছবি তুললাম আবার, মাঝে কিছুটা সময় রোদ পোহালাম। সেদিন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রী এর মত ছিল তবে বাতাসের ঝাপটা কম থাকায় ভালোই লাগছিলো আবহাওয়াটা। জার্মানীতে টেমপারেচার ফ্যাক্টর হয়না ঠান্ডা নাকি গরম আবহাওয়া সেটা নির্নয়ে, মূল ফ্যাক্টর হলো "উইন্ড স্পিড"। স্পিড যত বেশী ঠান্ডা অত বেশী।

বাংলাদেশে আমার অফিসে রাস্তা দর্শন মানেই হলো সোনারগাঁ হোটেলের সামনের সিগন্যালের জ্যাম এবং অগুণিত টয়োটা। এখানে ব্যাপারটা উল্টা, জানালার পাশের রাস্তায় হঠাৎ হঠাৎ এক/দুইটা গাড়ি দেখা যাচ্ছে। আর পুরো জার্মানীতে ২টা মাত্র টয়োটা দেখেছি পুরো সময় জুড়ে, বুঝুন অবস্থা। সব গাড়িই হয় ভক্সওয়াগন/অডি/বিএমডাব্লিউ/মার্সিডিজ (এগুলো সবগুলোই জার্মান ব্রান্ড)। এখানে রাস্তায় মানুষজনও বেশ কম। এখানে বাড়িগুলো টালি করা এবং সবগুলো বাড়িই প্রায় সমান উচ্চতার। আমি যেখানে ছিলাম সেই জায়গাটা ২য় বিশ্বযুদ্ধ সারভাইভ করা জায়গাগুলোর একটা তাই এখানকার বাড়িগুলোও ১৮শ এর ইউরোপীয় ধাঁচের। সবমিলিয়ে চমৎকার একটা প্লেস পেয়েছিলাম অফিসে।

আমার ধারণা ছিল ফ্রি-সেক্সের ইউরোপে থাকাটা একটু কষ্টের হবে তবে আমার ভুল ভেঙ্গে গেল খুব তাড়াতাড়ি। ইউরোপে না এসেই যারা নিছক মুভি-সিনেমা দেখে ইউরোপ নিয়ে বলেন তাদের কথা ভুল। এখানে আমি ২৮ দিন ছিলাম, ওপেন সেক্স কোথাও দেখিনি। লিপ-কিস এখানে মনে হয়েছে খুব কমন একটা ব্যাপার, কে কি করলো না করলো সেটা দেখার কারো সময় নাই এবং আমার মাঝেও এটাই কাজ করতো। পুরো সময় আমি শুধু একটা কাপলকে কিস করতে দেখেছিলাম, আর কখনোই কিছু নোটিশ করিনি। সহজভাবে বলতে গেলে কে কি করে সেটা দেখার কারো টাইম নাই। এদের নাইট ক্লাব আছে তাই নিজের পকেটের টাকা উড়াতে কারো ভালো লাগলে সেটার ব্যবস্থাও আছে, ব্যক্তিস্বাধীনতাই মুখ্য।

ঠান্ডার প্রকোপ তখনো ভালোই তাই ছেলে-মেয়ে-শিশু সবারই কমন ড্রেস: জ্যাকেট-জিন্স-জুতা। সত্যি কথা হলো ইউরোপিয়ান মেয়েদের ড্রেসআপ নিয়ে ছেলেদের মাঝে আনলিমিটেড ফ্যান্টাসী কাজ করে তবে আপনি যখন ওখানে থাকবেন তখন বাসের সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা সামনের মেয়েটার মতই লাগবে সবাইকে: শুধুই একটি মেয়ে, নাথিং এলস। আমি সবসময়ই বিশ্বাস করতাম আমি একটা মেয়েকে একটা সাধারণ মানুষ হিসেবেই দেখতে পছন্দ করি এবং ইউরোপে এই বিশ্বাসটা আরো পাকাপোক্ত হয়েছে।

এবার লাঞ্চ প্রসংগ। আমরা ২য় দিন ইয়ারিভকে বললাম ওরা যেখানে খায় ওখানেই যাবো। ইয়ারিভ এবং বরিস একসাথে বললো: "ম্যাকডোনাল্ডস"। আমরাও খুশী এটাতে প্রথম খেতে যাচ্ছি চিন্তা করে। তখন বিশেষ অফার চলছিলো তাই আমরা বিগম্যাক অর্ডার দিয়ে আরো একটা ম্যাক বার্গার ফ্রি পেলাম। সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই (বড়টাই নিয়েছিলাম ৩টা আলাদা সাইজের প্যাকেটের মাঝে) এবং কোক। এই পর্যন্ত যারা পড়লেন এবং ম্যাকডোনাল্ডসে খাওয়ার সুযোগ পাননি এখনো তাদের বলবো: বিরাট মিস :( জীবনে একবার হলেও খেয়ে দেখবেন। এদের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ওয়ার্ল্ড বেস্ট, কোন সন্দেহ নাই। যাই হোক, যা যা খেলাম তার একটা ছবি নিচে:




এতকিছু খাওয়ার পরেও বিল ছিলো ৪.৫ ইউরো মাত্র। অবাক হয়েই যখন আগের দিনের বিলের সাথে মিলালাম তখন জানলাম ম্যাকের মত সস্তায় এবং এত ভালো কোয়ালিটি'র আর কোথাও কিছু নেই। পুরো ইউরোপ জুড়েই এই কথাটা সত্যি। ম্যাকডোনাল্ডসে বা বার্গার কিংয়ে বা যেকোন ফাস্ট ফুডের দোকানে ভিড় লেগেই থাকে তবে কোথাও কোন নোংরা নেই কারণ খাওয়ার পরে সবাই নিজের জায়গাটা ক্লিন করে এরপরেই উঠে। দুপুরে আখেরী খানা দেয়ার পরে কিভাবে জেগে থাকবো সেটা চিন্তা করলাম তবে দেখলাম ঘুম আসলো না (বাংলাদেশের অপজিট ইফেক্ট)। বিকালে আমাদের বসের কাছে ট্রেনিং শুরু হলো এবং এভাবেই চললো শুক্রবার পর্যন্ত।

সন্ধ্যায় আমি প্রতিদিন বাসায় যাওয়ার সময় হারিয়ে যেতাম এবং আসার সময়েও। মজাই লাগতো ব্যাপারটা কারণ এলাকাটা ঘুরে দেখা হতো এই সুযোগে। আমার বাসার ডান পাশে একটা তিউনিসিয়ান লোকের দোকান ছিলো, ওখানে সিম কার্ড কিনেছিলাম (নাম্বারটা বাংলাদেশের মতই: ০১৭.....)। এমনি কথা প্রসংগে ওনাকে বললাম আমি বাংলাদেশী, উনি চেনেন কিনা আমার দেশ? হাসিমুখেই বললেন, উনি বাংলাদেশ চেনেন কারণ এজতেমা'র সময় এসেছেন :) বাংলাদেশের মানুষকে উনার খুব ভাল মনে হয়েছে তাই যেই আতিথেয়তা উনি আমার দেশে পেয়েছেন সেটার জন্যে আমাকে প্রথম দিনেই চকলেটমুখ করালেন।

আমার বাসার অপর দিকে লক্ষ্য করলাম একটা বার আছে, প্রতি সন্ধ্যায় ওখানে ৩জন লোক একই চেয়ারে একই ভাবে বসে বিয়ার খেতে থাকে, সেটা যখনই হোক না কেন....আমার বাসার সামনে খেয়াল করলাম একটা স্কুলও আছে যদিও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার সাথে পুরাই বিপরীত ওটা। কখনোই কোন ভিড় দেখিনি ওখানে কারণ সব বাচ্চাকেই স্কুল বাসে আসতে হয়, যেতেও হয় ওটাতেই। বাচ্চাগুলিও ভীষণ নিয়মপরায়ণ তাই বাচ্চাদের গাড়িতেও শুধু ড্রাইভার ছাড়া বয়স্ক আর কাউকে দেখিনি।


ডার্ক নাইটে জোকারের ব্যবহার করা বাসটার মতই, তাইনা?

***
৫ম দিন পর্যন্ত এখানেই শেষ। এ কয়দিনের পর্যবেক্ষন সব লেখা হলো না বা লিখলাম না কারণ ২য় সপ্তাহটা মোটামুটি ঘটনাবিহীন ছিল তাই সেই সপ্তাহের জন্যে রেখে দিলাম।

আগামী পর্বে: বন এবং কোলন ভ্রমণ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×