somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোজা পার্ক, কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক আন্দোলন, জিম ক্রো ল ও মার্টিন লুথার কিং এর আই হ্যাভ এ ড্রিম

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোজা পার্ক, এক বাসে করে ১৯৫৫ সালের এক সন্ধ্যায় ফিরছিলেন নিজের বাসায়। মাত্রই এক সিটে বসার পর একটু পরেই কিছু লোক বাসে ওঠে, বাস ড্রাইভার সাথে আসে। রোজা পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, তাকে বাসের সিট ছেড়ে পিছনে গিয়ে বসতে হবে।
রোজা পার্ক অস্বীকৃতি জানান। তিনি ঐ সিট ছাড়বেন না, পিছনেও যাবেন না।
বাস ড্রাইভার এই অস্বীকৃতি জানাবার জন্য রোজা পার্ককে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
ঘটনাটা আমেরিকার। আর রোজা পার্কের এই আচরণের সম্মুখীন হবার প্রধান কারণ সে কৃষ্ণাঙ্গ।



আই হ্যাভ এ ড্রিম, পৃথিবী বিখ্যাত এই ভাষণ প্রদান করেন, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। তার সাথেও প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটে ১৯৪৩ সালের দিকে। স্কুল থেকে বর্ণবাদ ও সমাজে বিভক্তিকরণের উপর রচনা লিখে পুরষ্কার পাবার পর, বাবার সাথে বাড়ি ফেরার পথে, তাদেরকেও শ্বেতাঙ্গদের জায়গা দেবার জন্য বাসের সিট ছেড়ে দিতে হয়। প্রায় ৯০ মাইল রাস্তা দাঁড়িয়ে আসতে হয় বাবা ছেলেকে।

এই ঘটনা মার্টিন লুথার কিংকে সেই ছেলেবেলায় নাড়িয়ে দেয়।
আর রোজা পার্কের সাথে ঘটা ঘটনার সময় মার্টিন লুথার কিং বর্ণবাদ, নাগরিক অধিকার নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার।



আব্রাহাম লিংকনের সময় কৃষ্ণাঙ্গ দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার দেয়া হয়, সাধারণ জীবন যাপনের শ্বেতাঙ্গদের সাথে পাশাপাশি চলার। কিন্তু পাশাপাশি চলার জন্য বেঁধে দেয়া হয় জিম ক্রো আইন নামক অদ্ভুত নিয়ম কানুন।



তুমি কালো, তুমি সাদাদের মতন একই ট্যাক্সিতে চলাচল করতে পারবে না। তোমার জন্য জিম ক্রো কার।
তুমি কালো, তুমি সাদাদের থেকে আলাদা থিয়েটারে আরাম আয়েশে সিনেমা দেখবে।





তুমি কালো, তোমার চাকরির সুযোগ সুবিধা সাদাদের মতন না।
তুমি কালো, তোমার সুইমিং পুলে সুইমিং করার কোনো দরকার নাই।




তুমি কালো, তোমার ভোট দেয়ার কোনো দরকার নাই। ভোট দিতে হলে, কিছু টেস্টে পাশ করতে হবে।
টেস্ট নাম্বার ১- একটা জেলি বিনের বোতল দেখিয়ে বলা হবে, এই বোতলে কতগুলা জেলি বিন আছে। যা বলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
টেস্ট নাম্বার ২- আমেরিকান লিটারেসি টেস্ট দিতে হবে। পারলে ভোট দিতে পারবে, না পারলে নাই। শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়া কালোদের পক্ষে সেসবের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।
এছাড়াও যদি ভোট দিতে চাও, দারুণ সুযোগ পুল ট্যাক্স দিয়ে ভোট দিতে পারবে। গরীব কৃষ্ণাঙ্গদের পক্ষে ট্যাক্স দিয়ে ভোট দেয়া সম্ভব ছিলো না।



বাসেও কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আলাদা সিট রাখা ছিলো। প্রথম সারির সিট সাদাদের, পিছনের সারির সিট কালোদের।



শ্বেতাঙ্গদের সিটের একদম শেষে যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের সিট শুরু হয়েছে, সেখানেই নিয়ম মেনে বসেছিলেন রোজা পার্ক। আরও শ্বেতাঙ্গ বাসে ওঠাতে, কৃষ্ণাঙ্গদের সিটও ছেড়ে দিতে বলে রোজা পার্ককে। রোজা পার্ক তা না মানাতে জেলে যেতে হয়।

এরপরই কৃষ্ণাঙ্গরা আন্দোলনে নামে, সে আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় সে আন্দোলনও হয় অহিংস। অহিংস আন্দোলনের প্রথম ধাপ ছিলো বাস বয়কট। কৃষ্ণাঙ্গরা বাসে চড়া বন্ধ করে দেয়। হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যায়। এরপর নিজস্ব কার সার্ভিসে চলাচল। সে কার সার্ভিসের চালকদেরও নানা ভাবে করা হয় হেনস্থা।
মোট ৩৮১ দিন কালোরা বাসে চড়ে না। বয়কট মানে বয়কটই। ১৯৫৬ সালে এসে বাসে কালো ও সাদাদের সেই নিয়ম বিভাজন বাতিল হয়।



নাগরিক অধিকার নিয়ে মার্টিন লুথার কিং তার অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যান। কিছু ছাত্র নিয়মিত রেস্টুরেন্টে সাদাদের সিটে গিয়ে বসত। নরম সুরে খাবার চাইতো। সাদারা মাঝে মধ্যেই খাবার ছুড়ে মারত তাদের দিকে। তবু চুপচাপ বসে থাকত তারা। কিছুই বলত না। অহিংস আন্দোলন ছিলো এমনই।



১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং তার বিখ্যাত “আই হ্যাভ এ ড্রিম” ভাষণ দেন লাখ লাখ মানুষের সামনে। এ ভাষণে নাড়া পড়ে যায় সারা বিশ্বে।



১৯৬৪ সালে মার্টিন লুথার কিং শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান এবং সে বছরই কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বর্ণ বিভক্তিকরণকে ইলিগ্যাল ঘোষণা করা হয়।
মার্টিন লুথার কিং দেখিয়েছিলেন, অহিংস থেকেও দাবী আদায় সম্ভব।
পরবর্তীতে তিনি আরও অনেক বৈশ্বিক বিষয়ে তার আন্দোলন চালান। এই অহিংস মানুষটাকে ১৯৬৮ সালে, হোটেল বেলকনিতে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলি করে হত্যা করে এক শ্বেতাঙ্গ। তবে তিনি মারা যাবার আগে, হয়ত পুরোটা মুছতে পারেন নি, তবে আমেরিকায় কিছুটা হলেও বদলে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন, সাদা কালো বিভক্তি।


এই ঘটনার বহু বছর পরে ২০০৯ সালে আমেরিকা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পায়। বারাক ওবামাকে। বারাক ওবামা আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:২৭
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×