somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভবিষ্যদ্‌বাণী

২৫ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সন্ধ্যাবেলা থেকে বৃষ্টি নামি নামি করছে, বৃষ্টি নামেনি। তবে একটা সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে এটাই অনেক। এ পৃথিবীতে দু’রকম মানুষের ভবিষ্যদ্‌বাণী আমার কাছে ভীষণ হাস্যকর ও একই সাথে বিশ্বাসযোগ্যতা বিবর্জিত মনে হয়।
প্রথম রকম মানুষ, আবহাওয়াবিদ। তাদের পূর্বাভাস বরাবরই ভুল প্রমাণিত হয়ে আসছে। বলল, আজ তুমুল বৃষ্টি হবে, দেখা গেল বগলে নেয়া ছাতা রোদ থেকে বাঁচতে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
আমার এক বন্ধু আবহাওয়া অফিসে চাকরি করে। আরামের সে চাকরি করা বন্ধুকে এ বিষয়ে বলাতে, সে ভীষণ অভিমানী সুরে বলে, “তোরা একটু বেশিই বাড়িয়ে বলিস। তুমুল বৃষ্টির সম্ভাবনায় কখনও মাথায় ছাতা ধরার মতন রোদ ওঠে না। বড়জোর মেঘ করে বৃষ্টি না হতে পারে।”
আমি ওর কথায় হাসি, হেসে হেসে ওর কথা উড়িয়ে দেই।

দ্বিতীয় রকম মানুষ, আসলে দ্বিতীয় রকম মানুষ না বলে, দ্বিতীয় মানুষ বলা চলে, আমার স্ত্রী। ওর করা কোনো ভবিষ্যদ্‌বাণীই আমি এ জীবনে সঠিক হতে দেখিনি। অদ্ভুত সব বিশ্বাসে সে বাস করে। রাতের বেলা নখ কাটলে সংসারে ঝগড়াঝাটি হবে, বাইরে বের হবার সময় কোথাও বাধা পেলে বিপদ হবে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ওর মায়ের সাথে কথা বলবে, কী স্বপ্ন দেখেছে এবং তার ফলে কী ঘটতে যাচ্ছে। কীসব উদ্ভট চিন্তাভাবনা! আমি সেসব নির্দ্বিধায় অমান্য করে, আমার স্ত্রীর করা ভবিষ্যদ্‌বাণী প্রতিবারই ভুল প্রমাণিত করি এবং প্রতিবারই সে আবেগ ঝরা কণ্ঠে বলে, “দেখো, এসব মুরুব্বিরা বলে। মানতে অসুবিধা কী?”
আমি তা মানি না।

আমার প্রচণ্ড সিগারেটের নেশা। খানিক পরপরই সিগারেট খেতে হয়। বাসায় সারাক্ষণ এসবের অনুমতি মেলে না। সিগারেট ধরালেই আমার স্ত্রীর একটানা টেপ রেকর্ডারের মতন বকবকানি শুনতে হয়।

আজ সন্ধ্যা হতেই মেঘ জমেছে গাঢ় হয়ে। মাথার উপর মেঘলা আকাশের সাথে সাথে, দুটি ভবিষ্যদ্‌বাণী নিয়ে আমি বেরিয়ে আসলাম সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে। আবহাওয়া অফিস থেকে বার্তা শুনলাম, আজ কালবৈশাখির সম্ভাবনা রয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি আর বজ্রপাতের পূর্বাভাস তারা দিয়েছে। গত বছর বজ্রপাতে মারা গিয়েছে প্রায় পঞ্চাশ খানেক মানুষ। তাই এবার সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে। কী হাস্যকর! চৈত্র মাসে না-কি কালবৈশাখি হবে। আর গত বছর মানুষ মরাতে, এ বছর ঘরে বসে থাকতে হবে!
অপর ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছে, আমার স্ত্রী। সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বের হতে দেখেই বলল, “এই সিগারেট খেতে খেতেই মরবে তুমি, দেখো। এরপর আমাকে বোলো।”
আমি হাসতে হাসতে বলি, “মরে গেলে তোমাকে বলবটা কীভাবে?”

একটা আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং-এর নিচে দাঁড়িয়ে আমি সিগারেট ফুঁকছি। মেঘ আরও জমাট বাধছে। ধুলো ওড়া বাতাসের বেগ বাড়ছে। আমার বিপরীত পাশের দেয়ালে বিজলির চমকের মুহুর্মুহু আলোকচ্ছটা দেখছি। নিয়মিত ব্যবধানে সে বিজলির চমক আলোর দেখা দিয়ে যাচ্ছে। যাহ, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস তবে সঠিক হচ্ছে?
কিন্তু এত বিজলির চমকের আমি কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছি না। এটা একটা চিন্তার বিষয়।

আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে নেমে আসলাম বিল্ডিংটা হতে। নেমেই আবিষ্কার করলাম, বিজলির চমকের উৎসের। আমি যে আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংটার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তার ঠিক পাশেই একটা লোহা লক্করের ঝালাই কাজের দোকান। ঝালাইয়ের আলোর প্রতিফলনকে আমি বজ্রপাত ভেবেছি। আবহাওয়াবিদদের ভবিষ্যদ্‌বাণীকে শুদ্ধ মেনেছি।

হাঁটতে হাঁটতে প্রায় বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি, দমকা হাওয়ার গতি বেড়েছে আরও। আমার হাতের সিগারেট শেষ হয়নি এখনও। এ পাশটা বেশ ফাঁকা। চারপাশে মানুষও নেই। ফের একটা আলোকচ্ছটায় চোখ আমার ঝলসে গেল। হুট করে সব কেমন অন্ধকার হয়ে গেল। এবার তো আশেপাশে ঝালাইয়ের দোকান নেই। তবে কি বজ্রপাত? কিন্তু আমি এবারও বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পেলাম না। শুধু অনুভব করলাম, আমার পুরো পৃথিবী আঁধারে ছেয়ে গিয়েছে। তবে কি একই সাথে দুটো ভবিষ্যদ্‌বাণী সত্যি হতে যাচ্ছে কিংবা সত্যি হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে?

রিয়াদুল রিয়াদ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৪ ভোর ৪:৫৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিরহ

লিখেছেন গোধুলী বেলা, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৪

একটি কবিতা লিখা হবে বাদে কিছুক্ষণ
মেঘমালারা বারি পাত করিছে ক্ষণে ক্ষণ।
গগনভেদি কামান গোলা পরিছে মুহুর্মুহু
দুরুদুরু ভয়েতে কাপিছে বুক বাদ যায়নি কেহ।

জানালার পাশে  প্রেমিকার ছলছল চোখ
বৃষ্টিরো সাথে সে কেঁদে  ভাসাইছে বুক।
হাজারো... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×