ব্ল্যাসফেমির সংজ্ঞা অনেক রকমের হতে পারে, তবে এখন ব্ল্যাসফেমি বলে যেটা বোঝানো হচ্ছে তা হল নবী-রাসূলের সমালোচনা/মিথ্যাচার, কুৎসা রচনা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা। অনেকেই বলছেন এ বিষয়ে কঠোর আইন করে এর বাস্তবায়ন করাটা জরুরী এবং এটি সময়ের দাবি। কোন সন্দেহ নেই যে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নিন্দনীয়, তবে প্রশ্ন হল এটি কি শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ? প্রথমত ধরা যাক এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এটি কি আপনি আদালতে প্রমাণ করতে পারবেন? ধরা যাক আপনার নাম-ঠিকানা দিয়ে আমি কোন ব্লগে কিছু একটা লিখলাম। এটি কি আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব যে এটি আপনি আসলেই লিখেছেন বা লিখেন নি? এর উত্তর দিতে খুব একটা চিন্তা করার দরকার হয় না। প্রশ্ন উঠাটা খুবই স্বাভাবিক যে যেখানে আপনি অপরাধ প্রমাণ করতে পারবেন না সেখানে শাস্তির দাবি কোথা থেকে আসে?
এবার এ প্রসঙ্গে আসা যাক। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা কি আসলেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ? এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে তা জানা যাক। বলা হচ্ছে ব্ল্যাসফেমি ঠেকাতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করার কথা, কিন্তু যারা এটা বলছে তাদের নিজেদেরই ইসলামী আইন সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। আমরা জাতি হিসেবে আসলে বেশি কথা বলতে ভালোবাসি। কোন কিছু, বিশেষ করে ধর্ম, সম্পর্কে কিছু কথা শুনলেই ভালো করে যাচাই না করেই সেটা ছড়িয়ে দেই। যেটা সত্য, সেটা হল ইসলামে আসলে ব্ল্যাসফেমির বিরুদ্ধে সেরকম কোন আইনের কথা বলা নেই। এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু এখন লিখব না, তবে কারো জানার ইচ্ছা হলে এ দুটো নিবন্ধ পড়ে দেখতে পারেন।
Blasphemy In Islam
The Origins Of The Blasphemy Law
যদি আমি ভুলও বলে থাকি এবং ইসলামে এ ব্যাপারে কঠোর আইনের বিধান থেকেও থাকে, তা হলেও কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যায়।
যে আপনার ধর্ম বিশ্বাস করে না, তাকে কি করে আপনি আপনার ধর্মের বিধান অনুযায়ী শাস্তি দিবেন, এবং সেটি কি নৈতিক হবে?
আপনি কি করে জানেন যে আপনার ধর্মই সঠিক ধর্ম? আপনি বড়জোর এটি বিশ্বাস করতে পারেন, কিন্তু আপনি কখনোই প্রমাণ করতে পারবেন না। পারলে ধর্ম নিয়ে এত বিতর্ক কখনোই হত না। সব চাইতে ভাল সমাধান হল যার যার ধর্ম তার তার কাছে রাখা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২০