শুভ আজ খুব উত্তেজিত। সকাল থেকেই উসখুস করছে। অবশেষে সে ঠিক করেছে নীলিকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে। অনেকদিন থেকেই নীলিকে শুভ ভালবাসে, কথাটা ওকে সাহস করে বলা হয় নি কখনো। যদি ও ফিরিয়ে দেয়? শুভ জানে সে এই প্রত্যাখ্যান সইতে পারবে না। তবু আজ কি মনে করে যে নীলিকে টিএসসিতে আসতে বলল। নীলির সাথে তার অনেক দিনের বন্ধুত্ব। কখন যে তার মনে আলাদা একটি জায়গা দখল করে নিল মেয়েটি তা সে নিজেও বলতে পারবে না। এখন সে নীলিকে পাগলের মত ভালোবাসে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার এক বন্ধুর এক শৌখিন খালার বাগান থেকে একটি নীল গোলাপ যোগাড় করতে পেরেছে। ব্যাগে করে গোলাপটি নিয়ে এসেছে শুভ, নীলিকে আজ ভালো একটি চমক দেওয়া যাবে। তবে নীলি যদি তাকে ভালো না বাসে?
হয়ত নীলি তাকে শুধু ভালো একজন বন্ধু হিসেবেই দেখে। কিন্তু নীলিকে ছাড়া যে সে......
- এই শুভ! কি চিন্তা করিস এত?
হঠাৎ চিন্তায় বাধা পড়ায় চমকে উঠে শুভ। ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকাবার আগেই কুট করে একটি চিমটি কাটে নীলি।
- নীলি! এত জোরে মারলি ক্যান? উফফ এখনো তো জ্বলছে!
ঘাড় মালিশ করতে থাকে শুভ। সে দিকে চেয়ে নীলিমা মনে মনে হাসে। কেন যেন শুভকে চিমটি কাটতে তার খুব মজা লাগে।
- এত আগে চলে এলি যে? আমি তো আরও আধাঘণ্টা পর আসতে বলেছিলাম।
- স্যার ছেড়ে দিল আজ তাড়াতাড়ি, বোর হচ্ছিলাম ক্লাসে বসে থেকে। তুইও তো আগেই এসেছিস।
- হ্যাঁ, চলে এলাম একটু আগেই। আমার তো আর ক্লাস নেই এখন। চল অন্য কোথাও বসি, এখানে আজ অনেক গরম।
- হুম চল তাহলে।
হাঁটতে হাঁটতে কলাভবনের দিকে চলে যায় ওরা। শুভ সাধারণত অনেক কথা বলে, তবে আজ সে বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। নার্ভাসনেস না অন্য কিছু, কে জানে। ঘাসের উপর বসে পরে ওরা।
- এবার বল কি জন্য ডেকেছিস?
- আমি কি তোকে এমনিই আড্ডা দেওয়ার জন্য ডাকতে পারি না? কোন কারণ থাকতেই হবে এমন কোন কথা আছে নাকি?
- তা নেই, তবে তুই তো এমনি এমনি কিছু করিস না। ব্যস্ত ভিআইপি মানুষ তুই!
- খোঁচা দিচ্ছিস? তা দিতেই পারিস। পরীক্ষা চলছিল তো আমার। তুই তো জানিসই এ ব্যাপারে আমি কতটা সিরিয়াস।
শুভ হালকা করে তার ব্যাগে হাত বুলায়। আছে তো নীল গোলাপটি? হ্যাঁ, ওই তো দেখা যাচ্ছে। বুঝতে পারছে না তার কি বলা উচিত। এ রকম পরিস্থিতিতে সে আগে কখনো পড়ে নি। মেয়েদের পারতপক্ষে এড়িয়ে চলত সে, প্রেম নিবেদন করা তো দূরের কথা। আচ্ছা সে কি নীলিকে না বলেই চলে যাবে? কিন্তু তাজা নীল গোলাপটি? ধুত্তোর এত সংকোচ করলে কি প্রেম করা যায় নাকি, বলে ফেললেই তো ল্যাটা চুকে যায়। যা হওয়ার হোক না, এর পর দেখা যাবে।
- এই তোর কি হয়েছে বল না? এমন করছিস ক্যান আজকে? আর ব্যাগের মধ্যেই বা কি আছে এমন, চোরা চোখে তাকাচ্ছিস একটু পর পর।
- কই কিছু হয় নি তো, ব্যাগে আর কি থাকবে বই খাতা বাদে?
- শুভ!!! ঘুরাচ্ছিস কেন রে কথা? প্রেমে পরেছিস নাকি? তা মেয়েটি কে?
- আরেহ ধুর। সে রকম কিছু না।
লাজুক হেসে বলে শুভ। তবে বুকের ভিতর দিয়ে যেন টর্নেডো বয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা নীলি কি আন্দাজ করতে পারে তাকে সে কতোটা ভালোবাসে? মেয়েরা নাকি অনেক কিছুই বুঝতে পারে। তবে কি সেও মনে মনে... কিছুটা সাহস ফিরে পায় এসব চিন্তা করতে করতে।
- দাঁড়া তোকে একটি জিনিস দিতে চাই, ব্যাগের চেইন খুলতে খুলতে বলে শুভ।
- আমাকে আবার তুই কি দিবি?
- দ্যাখই না কি দেই। বলে গোলাপটি ধরেও সারতে পারল না শুভ। বাপ্পা মজুমদারের একটি জনপ্রিয় গান বেজে উঠলো নীলিমার মোবাইলে।
- হ্যালো
- ...
- না আমি এই তো কলাভবনে বসে আড্ডা দিচ্ছি। তুমি কি করছ?
- ...
- দুপুরে খাও নি কেন এখনও?
- ...
- কখন আসব?
- ...
- আচ্ছা এখনি আসছি। বাই।
- সরি দোস্ত। ফাহিম ফোন দিল, আমার এখনি যাওয়া দরকার।
- কোন ফাহিম, চশমা পরা যে ছেলেটি তোর পিছে লেগে থাকতো সারাক্ষণ?
জবাবে শুধুই হাসল নীলিমা।
- তুই না ওকে দেখতে পারতি না? এত খাতির হল কবে থেকে, ফোন দিলেই সুড়সুড় করে চলে যাচ্ছিস?
- কেন তুই জানিস না? ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখিস নি কাল আমার?
- নাহ ফেবুতে যাওয়া হয় নি কাল বলল শুভ। এটা আর বলল না সে নীলির জন্য হন্য হয়ে নীল গোলাপ খুঁজছিল কাল।
- আসলে ফাহিমকে আমি যা ভাবতাম ও মোটেও সেরকম না। এবার একসাথে একটি প্রোজেক্ট করতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কাল সে এমনভাবে প্রপোজ করে বসল যে আর না করতে পারলাম না। ছেলে হিসেবেও ভালো আর তাছাড়া আমারও তো সেরকম পছন্দের কেউ নেই। সব ভেবে রাজি হয়ে গেলাম, বুড়ি হয়ে যাচ্ছি তো! হেসে বলল নীলিমা।
- ভালোই তো। তোর একটি গতি হল এবার। খাওয়াবি কবে সেটা আগে বল। নির্লিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখালেও মনটা একেবারে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে শুভর।
- খাওয়াব তো। আরও কিছুদিন যাক না, মাত্র তো শুরু হল। আচ্ছা আমি যাই গে, পরে দেখা হবে শুভ। ভালো থাকিস। তুই যেন কি দিতে চাচ্ছিলি?
- না তেমন কিছু না, পরে দিলেও হবে।
- আরে বোকা! আবার কি হল। এত ভাব দেখাচ্ছিস কেন আজ? দেখা না কি আছে তোর ওই বোঁচকায়।
- রোবটের মত চেইন খুলে নীলিমার পেন-ড্রাইভটা বের করে নির্লিপ্ত মুখে ওর হাতে দিল শুভ।
- এটা রেখে চলে গিয়েছিলি সেদিন।
- ওমা এই সামান্য ব্যাপারটা নিয়ে এত নাটকীয়তা করার কি দরকার ছিল? তুই পারিসও কিন্তু।
- হুমম
- আসি তাহলে, অনলাইনে আসিস আজ বিকালে, কথা হবে।
- আচ্ছা।
পরিশিষ্টঃ
অস্তগামী সূর্যের আলোয় শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড়ে বসে প্রেম করছে নিলয় আর চৈতি। আচমকা চৈতি বলে উঠলো ওমা দেখো না, কি সুন্দর একটি নীল গোলাপ ভেসে আছে? চৈতি বা নিলয় কেউ জানল না নোনা জলে গোলাপটি সিক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:৫৫