দেশের আনাচে কানাচে যেখানেই যান, একটাই আলোচনা, বিডিআর বিদ্রোহ। ডিএডি তৌহিদ ধরা পড়ছে। জওয়ানদের কি অবস্থা। শেখ হাসিনা কি পারবে? খালেদা জিয়া আসলে কি বলতে চায়? এরশাদই বা হঠাৎ কইরা এইসব বলতেছেন কেন? আহারে, এতিম বাচ্চাগুলার কি হবে? ........ এভাবেই চলছে, নানা কথা চলছে। গ্রামে, গঞ্জে। বাসায়, বাসে। রাস্তায়, রেস্তোরায়। ক্যান্টিনে। ব্যাংকে।
এটা একটা অন্যায় প্রবনতা, যেটা গুটি কয়েক বিডিআর করলো। আমাদের এসব বিশাল বিশাল অন্যায় প্রবনতা কি হুট করে মাথা চাড়া দেয়? আমার মনে হয় না। জাতিগতভাবেই আমরা নানা ছোটোখাটো অন্যায় করতেই থাকি, করতেই থাকি। আমাদের মনে হয় এগুলা কোনো বিষয় না। কিন্তু বিন্দু বিন্দু জলেই সিন্ধু হয়। এসব ছোটো ছোটো আইন বা নিয়ম না মানতে মানতে আমাদের ভেতর এক ধরনের মানসিকতার জন্ম নেয়: "এইটা না মানলে কি এমন হবে?"
ঐ মানসিকতা থেকেই সরকারী জমি দখল। ভবন উঠিয়ে রাস্তার ওপর বারান্দা দেয়া। ফুটপাতে পাকা দোকান বসিয়ে, ব্যবসা জমিয়ে দেয়া। অন্যের জায়গা জবর-দখল করে নেয়া। এইসব মোটামুটি বড় অন্যায়। আরো একটু মাইক্রো-অন্যায়ের দিকে যাই।
যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ক্যান্টিনে লেখা থাকে, ধূমপান নিষিদ্ধ। কে শুনে কার কথা!! ধূমপান চলছে এবং সঙ্গে সঙ্গে চলছে তাস পিটানো। টিএসসিতেও একই অবস্থা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কেন সারা দেশের চিত্র কমবেশী একই। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে যেখানে ৫০টাকা জরিমানা, সেখানে পুলিশ দিনেদুপুরে রাস্তায় বিড়ি ফুকে।
ব্যাংকে যাবেন? বিশেষ করে সরকারী ব্যাংকে? আপনি লাইন ধরে আছেন বিগত এক ঘন্টা ধরে। কিন্তু ওদিকে, দেখবেন পেছন দরজা দিয়ে ঢুকে বহুলোক দশ মিনিটে কাজ বাগিয়ে চলে যাচ্ছে। আপনি বোকার মতো দাঁড়িয়ে।
বাসে উঠেছেন। বাস ভাড়া না জানলে কন্ডাকটর, কিছুদিন আগের বেশী ভাড়াই আদায় করবে। নিজ চোখে দেখা। আর যে ভাড়া বৈধ বলে আদায় করছে, তারও কোনো ব্যাখ্যা নাই। কত কিলোমিটারে কি পরিমাণ বাড়লো, তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হলো কিনা....ইত্যাদি ইত্যাদি কখনোই পরিষ্কার ছবি আপনি পাবেন না।
আরো মাইক্রো-ক্রাইমের মধ্যে আছে, রাস্তায় ইউরিনের সাগর বইয়ে দেয়া। মানে আমাদের কোনো কিছু গায়ে লাগে না। ফুটপাতে প্রস্রাব করা যে অন্যায় হতে পারে, আমাদের সেটা বোধগম্যই হয় না। ফার্মগেটে হলিক্রশ কলেজের সামনের রাস্তাটার কথা চিন্তা করুন। এরকম তো আরো আছে। ময়লা ফেলবে লোকজন, তাও যেখানে সেখানে। মোবাইলে কথা বলবে, শুনে মনে হবে ভাষণ দিচ্ছে। গান শুনবে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠে মোবাইলের লাউড স্পিকারে দিলো গান ছেড়ে। পিকনিকে যাবে? বাসের মাথায় দুইটা বিকট মাইক লাগিয়ে ছেড়ে দিলো হিন্দি গান।
মানে এসব বলে শেষ করা যাবে না। অনিয়ম। অনিয়ম। দেশের মাইক্রো কন্ডিশন থেকে ম্যাক্রো কন্ডিশন, সব জায়গাতেই অনিয়ম। পকেটমার থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, আর্মি এবং আমলা সকলেই দুর্নীতির সঙ্গে একেবারে গিট্টু লেগে আছে। আমাদের মানসিকতার যদি অপারেশন করা যেত, তাহলে বোধহয় দেখা যেত, এই অন্যায় বা দুর্নীতি আমাদের মাথায় বিল্ট-ইন অবস্থায় থাকে, ঐভাবেই আমরা জন্মাই।
পিলখানার ম্যাক্রো অন্যায়ের বাইরে, ছোটোখাটো মাইক্রো অন্যায়ই ছিলো আমার অফটপিকের বিষয়।
এতোক্ষণ ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।