আবারো আমগো কেলাশ প্রসঙ্গ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ক্লাশ। তো সেখানে প্রথম আলুর এক সাং(ঘা)বা(তি)দিক কিংবা ছাংবাদিক ক্লাশ মেট আছে। আইজকার গল্প তারে লইয়া।
এক সপ্তাহ হয়- এক পাকিস্তানি টিচার আইছে, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেইকা। সে গত ৫ দিন ধইরা আমগো পাক মিডিয়ার ইতিহাস পড়াইতাছে। তো সে ভালোভাবেই নিরপেক্ষ থাইকা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়া দিয়া পড়াইতাছে। প্রত্যেক সরকারের ভালোমন্দ আনতেছে।
সে যাক, আসল গল্প হইল, আমগো সেই ছাংবাদিক বন্ধু পাকিস্তানের নাম শুনলেই তেলে বেগুনে জ্বইলা উঠে। সে প্রথম দিন থেইকাই স্যারের উপর খেপ্পা। কারণ সে পাকিস্তানি। ক্লাশের মাঝে নানান কমেন্ট পাস তো আছেই।
আজকা হইলো কি...ক্লাশ শেষের দিকে প্রায়। তখন কি একটা প্রসঙ্গে, স্যার জিন্নার নাম নিলো। তখন আমগো সেই বন্ধু এক্কেবারে রণমূর্তি নিয়া হুঙ্কার ছাইড়া বইলা উঠল...জিন্নারে সে পছন্দ করে না। সেটা আমরাও করি না। যাকগা, স্যার খুব মোলায়েম কইরা জিজ্ঞেস করলো- কারণটা কী?
বন্ধু হরবর কইরা বলল, পাকিস্তানিরা অনেক বাঙালি মারছে..... তাই সে পাকিস্তান দেশটারেই পছন্দ করে না....আর এজন্য যে সেখানকার মানুষ মাফ চায় নাই এজন্যও সে পুরা পাকিস্তানের উপরে নাখোশ।
স্যার উত্তর দিলো- দেখো তোমরা ভাগ্যবান, কারণ তোমরা একাত্তুর সনে স্বাধীনতা পাইছো, কিন্তু আমরা দুর্ভাগা, আমরা এখনো সেই স্বাধীনতা পাই নাই। সেই যে ৪৭ এর পর এলিটগো হাতে ক্ষমতা গেছে, এখনো আমরা পরাধীন। এখনো আমগো দেশে মুক্তিকামী মানুষরে হয় খুন করা হয়, নয় গুম করা হয়।
স্যার অনেক উদাহরণ দিয়া বুঝাইলো, পাকিনস্তানের সাধারণ মানুষ ৭১ এর ঘটনায় মর্মাহত। স্যার আরো বললেন, তার পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর কথা। সেই ছাত্রী নাকি তাকে বলে দিয়েছে বাংলাদেশের অনেক ছবি তুলে আনতে। কারণ বাংলাদেশের কথা মনে এলেই সেই ছাত্রীর ৭১ এর কথা মনে আসে আর চোখে পানি আসে।
স্যার আরো বলেন, তিনি জন্মায়ছেন ৭২ সালে।
এতোকিছু বলার পরও আমগো ছাংবাদিকের গাইগুই কমে না। সে বলে, না পাকিস্তানের লোকজনের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
তখন স্যার বলে, আমি অবশ্যই দুঃখিত। আর আমরা তোমাদের ৭১এর মতো এখনো পরাধীন। আমাদের কমন শত্রু ঐ এলিটরা। যারা শাসন করছে। তোমারা মুক্তি পেয়েছো, আমরা পাই নাই।
না, কে শোনে কার কথা, ছাংবাদিক বন্ধু আগ্রাসী মনোভাবে বলেই চলল, না পাক জনগণের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
তখন স্যার বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্ষমা চাইছি। কিন্তু প্রত্যেক সাধারণ পাকিস্তানি তো তখনকার আর্মি ও এলিটদের ভুলের জন্য দায়ী নয়।
তারপরও ছাংবাদিক বন্ধুর গাইগুই কমে না। এদিকে ক্লাশের সময় শেষ হয়ে আধ ঘন্টা পার হয়ে গেছে। সবাই তখন ছাং বন্ধুকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
আমিও বলি, একাত্তুরের ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। কিন্তু ৭২ সালে জন্ম নেয়া এক একাডেমিশিয়ান পাকিস্তান থেকে এসেছে বলেই তার উপর ঝাল ঝাড়বো এটা একধরনের মৌলবাদিতা। আর এ্যাপ্রোচ বলে তো একটা কথা আছে!!!!
পাকিস্তান নাম শুনলেই আমাদের শরীর ৭১এর চেতনা ধারণ করে, সেখান থেকে আমরা অনেকেই পাকিস্তান রাষ্ট্রকে দেখতে পারি না। আমিও না। কিন্তু ভাবুন তো, আজকের প্রজন্মের যে ছেলে বা মেয়ে, সে যখন বাংলাদেশের জন্য সহমর্মীতা বোধ করে, তাকেও কি আমি ঘৃণা করবো??
না, আমি চাবো, তার মাধ্যমে আরো সাধারণ পাকিস্তানীদের মধ্যে প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরতে।
আমরা ঠিক করেছি, স্যারকে একটা মুক্তিযুদ্ধের বই, ইংরেজীতে লেখা, গিফট করবো।