বাংলাদেশের মুসলমানেরা (জনসংখ্যার প্রায় ৮৫%) যদি ইসলামের বিধান মানতো তাহলে দেশে ঘুষ আর দুর্নীতি থাকত না। একবার আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূল (সা.) যাকাতের কাজে নিয়োগ দেন। তার নাম ছিল ইবনুল লুতাবিয়্যাহ। কাজ থেকে ফেরার পর সে বলল, এই হচ্ছে যাকাতের সম্পদ আর এগুলো আমাকে হাদিয়া (উপহার) দেওয়া হয়েছে। তখন রাসূল সা. মিম্বারে ওপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তণের পর বললেন, আমার প্রেরিত কর্মচারীর কী হল, সে বলে এটা যাকাতের সম্পদ আর এটা আমি হাদিয়াস্বরূপ পেয়েছি। সে তার বাপ-মার ঘরে বসে দেখতে পারে না তাকে হাদিয়া দেওয়া হয় কিনা? আল্লাহর কসম করে বলছি তোমাদের কেউ খেয়ানত করলে তা নিজের কাঁধে নিয়েই কেয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হবে। উট, গরু, বা ছাগল যাই হোক সেগুলো আওয়াজ করতে থাকবে। এরপর রাসূল সা. উভয় হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, হে আল্লাহ! আমি পৌঁছে দিয়েছি। হাত উত্তলনের কারণে রাসূল সা. এর বগলের শুভ্রতা আমরা দেখতে পেলাম। (বুখারী হা/৬৫৭৮, ৮৮৩)
আমাদের সমাজে অনেক ঘুষখোর ঘুষ গ্রহণ করে বলে এটা উপহার বা সেবার বিনিময়ে পাওয়া মূল্য। কিন্তু উপরের হাদিসটা খেয়াল করলে দেখা যায় যে, কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে মানুষ তাকে অর্থ, উপঢৌকন দেয় বা বিভিন্নভাবে তাকে সুবিধা প্রদান করে থাকে। এইগুলি সবই আসলে ঘুষ। তার মনে রাখতে হবে যে সে তার কাজের জন্য রাষ্ট্র/ প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পায়। হাদিসে রসুল সা. জানতে চেয়েছেন যে ঐ ব্যক্তি যদি জাকাত আদায়ের দায়িত্বে না থাকত তাহলে কি লোকেরা তাকে হাদিয়া ( উপহার) দিত?
ঘুষ দেয়া ও নেয়া দুইটাই কঠিন গুনাহর কাজ। তবে ঘুষ দেয়া অনেক ক্ষেত্রে জায়েজ আছে। যেমন একটা ন্যায্য অধিকার পাওয়ার জন্য যদি কেউ ঘুষ দিতে বাধ্য হয় সেই ক্ষেত্রে ঘুষ দেয়া জায়েজ ঘুষ দেয়া কখন জায়েজ । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আপনি জমির নামজারির জন্য গেলেন। আপনার কাগজপত্র সব ঠিক আছে। কিন্তু আপনি ঘুষ না দিলে ঐ নামজারি হবে না। এই ক্ষেত্রে ঘুষ দেয়া জায়েজ। কিন্তু যে ঘুষ নিলো সে অপরাধী।
আল্লাহতালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা একে অন্যের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের হাতে তুলে দিও না। যদিও তোমরা তা জানো।’ –সূরা আল বাকারা: ১৮৮
নিশ্চয়ই যে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম । (বুখারী, মিশকাত/৩৯৯৫)
হারাম খাদ্য ভক্ষণ করা শরীর, জান্নাতে প্রবেশ করবেনা । (মিশকাত/২৭৮৭)
আমাদের দেশে অনেক ডাক্তার ওষুধ কোম্পানি থেকে অর্থ ও উপহার নিয়ে থাকেন। ইসলামে এই ধরণের অর্থ বা উপহার গ্রহণ নিষেধ করা হয়েছেওষুধ কোম্পানি থেকে উপহার গ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলামী বিধান] ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে উপহার নেয়ার বিধান। কারণ অর্থ/ উপহার গ্রহণের কারণে ডাক্তার ঐ কোম্পানির ওষুধের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করতে পারেন। ফলে অন্য ভালো ও কার্যকর ওষুধ সে নাও লিখতে পারে। তাছাড়া রোগীর কাছে থেকে সে ফি নিচ্ছে এই শর্তে যে সে রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী ওষুধের পরামর্শ দেবে। কিন্তু ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে অর্থ নিলে ডাক্তারের মন ঐ কোম্পানির প্রতি আকৃষ্ট হবে পরিনামে যথাযোগ্য ওষুধ সে নাও লিখতে পারে। অথবা সে হয়তো দুইটা ওষুধের জায়গায় ঐ কোম্পানির চারটা ওষুধ লিখে দিতে পারে। এভাবে লোভে পড়ার কারণে ডাক্তার তার নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না। এই সব কারণে এই ধরণের প্রলুব্ধকারি লেনদেন হারাম করা হয়েছে। একই নিয়ম প্রযোজ্য রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষার বিপরীতে ডাক্তারদের দস্তুরি (কমিশন) গ্রহণের ক্ষেত্রে।
আমাকে একবার একজন মহিলা সরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কথা প্রসঙ্গে বললেন যে তাদের জ্যেষ্ঠ সহকর্মীরা ইতিপূর্বে তাদেরকে বলেছেন যে যদি কেউ স্বেচ্ছায় কিছু দেয় তবে নিয়ে নেবেন। আসলে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেভাবেই ঘুষ দেয়া হোক না কেন গ্রহীতা উভয় ক্ষেত্রেই কবিরা গুনাহ করলেন।
যে ব্যক্তি হারাম পথে আয় করে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন না।
রাসুল (সা.) উল্লেখ করেন, কোনো ব্যক্তি দূর-দূরান্তে সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধুলাবালি লেগে আছে। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি উভয় হাত আসমানের দিকে তুলে কাতর স্বরে হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম । সে হারামই খেয়ে থাকে। ওই ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে!' (মুসলিম, হাদিস : ২৩৯৩)
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি হালাল খাবার খেয়েছে, সুন্নাহ মোতাবেক আমল করেছে ও মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সে জান্নাতে যাবে।' (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ২৫২০)
হারাম উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে হজ্জও করা যাবে না হারাম টাকায় হজ্জের বিধান। হারাম অর্থ/সম্পদ থেকে মুক্তি পেতে হলে তওবা করতে হবে এবং ঐ অর্থ/ সম্পদ দান করে দিতে হবে কোনও সওয়াবের আশা না করে।
আমাদের দেশে ঘুষ, দুর্নীতির বহু পন্থা আছে। ইসলামী বিধি বিধান মানলে দেশ ও জাতি ঘুষ ও দুর্নীতির বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্তি পেতে পারে। ইসলাম শুধু কালিমা, নামাজ, রোজা ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান আমাদের মানতে হবে। তবেই ব্যক্তি পর্যায়ে ও জাতিগতভাবে ইসলামের সুশীতল ছায়া আমরা অনুভব করতে পারবো। আল্লাহ আমাদেরকে সর্ব ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান অনুসরন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
ছবি - https://patriotrising.com
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৬