
একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানার জন্য জিডিপি যদিও কোন আদর্শ সূচক না তারপরও এই সূচক অর্থনীতিবিদ এবং নীতি নির্ধারকরা ব্যবহার করে থাকেন। সরলভাবে বলতে গেলে একটা দেশের ভৌগলিক সীমাতে এক বছরে যে পরিমান চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদিত হয় এবং যে পরিমান সেবা দেয়া হয় তার সামষ্টিক মূল্যই হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি বা গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট)।
তিন ভাবে জিডিপি পরিমাপ করা যায়। আয় পদ্ধতি, ব্যয় পদ্ধতি এবং উৎপাদন পদ্ধতি। সঠিকভাবে হিসাব করলে তিন পদ্ধতিতেই একই ফলাফল আসার কথা। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয় পদ্ধতিতে জিডিপি পরিমাপ করা হয়। বাংলাদেশে ব্যয় পদ্ধতি এবং উৎপাদন পদ্ধতি দুইভাবেই জিডিপি হিসাব করা হয়।
জিডিপি নিয়ে একটা মজার প্রশ্ন আছে। যেমন অ্যামেরিকার এক বিলিয়নিয়ারের একজন গৃহপরিচারিকা ছিল। সে ঐ বিলিয়নিয়ারের বাসার যাবতীয় কাজ করতো। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে প্রেম হয় এবং বিলিয়নিয়ার ঐ পরিচারিকাকে বিয়ে করে ফেলেন। এই ধরণের বিলিয়নিয়ার আরও হয়তো আছে। এখন প্রশ্ন হোল বিয়ের আগে ঐ পরিচারিকার আয় জিডিপিতে আসত কিন্তু বিয়ের পরে যেহেতু সে স্ত্রী হিসেবে সেই একই কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করছে সেই ক্ষেত্রে কি দেশের জিডিপি কমে যাবে? সব বিলিয়নিয়ার যদি এভাবে পরিচারিকাকে বিয়ে করে বসে তাহলে দেশের জিডিপি তো হুমকির সম্মুখীন হবে।
আমাদের দেশের ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বিদেশে চাকরী করে থাকেন। কিন্তু দুঃখজনক হোল তাদের আয় যোগ হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশের জিডিপিতে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ তারা যে আয় করছেন সেটা বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার বাইরে।
আবার জিডিপিতে অনেক আয় আসে না। যেমন কালোবাজারি থেকে আয়, ট্যাক্স ফাঁকির আয়, পুরাতন জিনিস কেনা বেচার আয় ( এটা অবশ্য বৈধ) ইত্যাদি। অথচ এই কার্যকলাপগুলি পণ্য উৎপাদন বা সেবা বৃদ্ধি করছে এবং বহু মানুষ এই আয়ের উপর নির্ভরশীল। যে কোন দেশের এই ধরণের বেআইনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বলা হয় ‘গ্রে ইকনমি’। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গড়ে জিডিপির প্রায় ৪৫% হোল গ্রে ইকনমি। অর্থাৎ যদি কোন দেশের মাথাপিছু আয় হয় ৫,০০০ ডলার প্রকৃত পক্ষে মাথাপিছু আয় হবে আরও ২,২৫০ ডলার বেশী যদি গ্রে ইকনমিকে হিসাবে ধরা হয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রায় ২,৫০০ ডলার। আমরা যদি বাংলাদেশের গ্রে ইকনমির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসাবে ধরি তাহলে এটা হবে প্রায় ৩,৬২৫ ডলার ( ধরে নিলাম বাংলাদেশের গ্রে ইকনমি জিডিপির ৪৫%)।
পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যাদের গ্রে ইকনমি জিডিপির প্রায় ৬৭% ( যেমন, জিম্বাবুয়ে)। এছাড়া হাইতি, জর্জিয়া, নাইজেরিয়া, গ্যাবন, মিয়ানমার, বেনিন, কঙ্গ, গুয়াতেমালা, বলিভিয়া, মাদাগাস্কার, লাইবেরিয়া, আজারবাইজান, গাম্বিয়া, থাইল্যান্ড, ইউক্রেন, এল সাল্ভেদর, আইভরিকোস্ট, গিনি এবং পেরুতে গ্রে ইকনমির হার জিডিপির ৪০% বেশী।
উন্নত বিশ্বে গ্রে ইকনমির হার অনেক কম। গ্রে ইকনমি কম এই ধরণের দেশগুলি হোল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইউ কে, নিউজিল্যান্ড, অস্ত্রিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন,চিন, হংকং, কাতার, ফিনল্যান্ড ইত্যাদি।
আমাদের দেশের প্রবাসীরা এত কষ্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন কিন্তু সেটা জিডিপিতে আসছে না। যদিও এটাই স্বাভাবিক। তারপরও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্ছিতি তৈরিতে তাদের অবদান অনেক। রফতানির পরেই তাদের স্থান। ইউ এন মিশনে যারা চাকরী করেন তারাও অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে আসেন।
সুত্র- Click This Link
ছবি - baltictimes.com
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




