
একটা গবেষণায় দেখা গেছে আমরা যখন সামনা সামনি কারও সাথে কথা বলি তখন ভাবের মাত্র ৭% আদান প্রদান হয় শব্দ দ্বারা এবং ৩৮% হয় শব্দটা উচ্চারণের ধরনের দ্বারা এবং বাকি ৫৫% হয় বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দ্বারা। যেমন মা তার বাচ্চাকে বলল ‘এখানে আসো’। একটা মা আদর করে হাসি মুখে বাচ্চাকে বলতে পারে ‘এখানে আসো’। আবার মা কড়া গলায় চোখ লাল করে বাচ্চাকে আদেশ করে বলতে পারে ‘এখানে আসো’। শব্দের উচ্চারণ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজের ভিন্নতার কারণে একই বাক্য বা শব্দ সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ বুঝাতে পারে।
অনেক মিথ্যা কথা ব্লগে সত্য বলে চালিয়ে দেয়া সম্ভব যেটা হয়তো সামনা সামনি কারও চোখে চোখ রেখে বলা সম্ভব না। যেমন একজন মন্তব্য করলো ‘আপনার পোস্ট খুব ভালো লেগেছে’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হয়তো পোস্টটা তার পছন্দ হয়নি। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে ভালো লেগেছে বলেছেন। কিন্তু সামনা সামনি এরকম ডাহা মিথ্যা কথা বলা সহজ না। কারণ যার উদ্দেশ্যে বলবে সে বক্তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং বলার টোন শুনে বুঝে ফেলবে বক্তা আন্তরিকভাবে কথাটা বলছেন নাকি খুশি করার জন্য বলছেন। আপনি কোন বন্ধুর অফিসে গেলেন। বন্ধু আপনাকে বলল ‘আরে বস, এক কাপ চা খেয়ে যাও’। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বন্ধুর বলার ধরণ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে বুঝে যাই সে কি আন্তরিকভাবে বলছে নাকি ভদ্রতা করে বলছে। তাই পারস্পরিক কথোপকথনের ক্ষেত্রে কথা বলার ধরণ এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে একজন মনোবিদ বাস করে। সেই মনোবিদ মুহূর্তের মধ্যে ধরে ফেলে যা বলা হচ্ছে তা কতটা আন্তরিক। অনেকের এই বোঝার ক্ষমতা বেশী থাকে অনেকের কম থাকে। এমনকি দুধের বাচ্চাও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝে।
তবে টেক্সটের মাধ্যমে যোগাযোগকে আরও নিখুত করার জন্য বিভিন্ন ইমটিকন ব্যবহার করা হয়। যদিও এটার দ্বারা পুরোপুরিভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না। এছাড়া টেক্সটের মাধ্যমে কথোপকথন বা যোগাযোগকে আরও কার্যকর করার জন্য কিছু কৌশল শিখানো হয়ে থাকে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীক জগতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিকভাবে টেক্সট কমিউনিকেশন শেখানো হয়ে থাকে। অনেক সময় অল্প কথার টেক্সট মানুষ পুরোটা বুঝতে পারে না। তখন সে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে, মনের আবেগ ব্যবহার করে এবং ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তার পূর্ব ধারণাকে ব্যবহার করে একটা অর্থ দাড়া করানোর চেষ্টা করে। যে অর্থ অনেক সময় ভুল হয়। যেমন একজন অনেক পরিশ্রম করে অনেক সময় ব্যয় করে একটা রিপোর্ট তৈরি করলো তার বসের জন্য। বস উত্তরে শুধু লিখল ‘নোটেড’। রিপোর্ট তৈরিকারী ঐ ব্যক্তি ভেবে বসলো যে বসের নিশ্চয় রিপোর্ট পছন্দ হয়নি অথবা কোন কারণে বস তার উপর নাখোশ। কিন্তু প্রকৃত চিত্র কিন্তু ভিন্ন ছিল। আসলে বস ব্যস্ততার কারণে সংক্ষেপে লিখেছে। রিপোর্ট তার ভালো লেগেছে। আসলে বসের উচিত ছিল এভাবে লেখা ‘আমি একটু তাড়াহুড়ার মধ্যে আছি। তোমার শ্রমসাধ্য সুন্দর রিপোর্টটা নিয়ে পরে বিস্তারিত আলাপ করবো।‘
ব্লগ বা অন্যান্য টেক্সট কমিউনিকশনের ক্ষেত্রে তাই সবার চেষ্টা করা উচিত টেক্সটটাকে যতদূর সম্ভব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যেন মনের না বলা ভাবটাও অপর পাশের ব্যক্তি কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারে। যদিও মনের না বলা ভাব বোঝার জন্য সামনা সামনি কথোপকথনের কোন বিকল্প নাই। এই কারণেই যারা সেলস এবং মার্কেটিংএ চাকরী করে এদেরকে সব সময় বলা হয় তারা যেন তাদের সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে ফোনে না বরং সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করে। অনেক সময় দেখা যায় যে এক ব্যক্তির সাথে কাজের প্রয়োজনে আপনি নিয়মিত ফোনে কথা বলেন যাকে আপনি সামনা সামনি দেখেননি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ফোনে পরিচয়ের সুত্রে সে আপনাকে যতটুকু সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তার চেয়ে বেশী সে পরবর্তীতে আপনাকে সহযোগিতা করবে যখন আপনি তার সাথে দুই একবার একসাথে বসে চা খাবেন। কারণ একজন রক্ত মাংসের মানুষের সাথে সামনা সামনি আপনার কথা হয়েছে। উভয়ে উভয়ের বডি লাঙ্গুয়েজ বুঝেছেন এবং একের প্রতি অন্যের আস্থা, আন্তরিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্লগে অনেক সময় ব্লগাররা একে অন্যের সাথে তর্ক, বিতর্ক বা ঝগড়া করে। কিন্তু আমার ধারণা সামনা সামনি দেখা হলে হাজারো মতবিরোধ সত্ত্বেও একে অন্যের সাথে একটা আন্তরিকতা তৈরি হতে পারে।
সুত্র
- callcentrehelper.com/does-body-language-really-matter-when-talking-on-the-telephone-1711.htm
- bloncampus.thehindubusinessline.com/b-learn/barriers-to-communication-in-digital-
classrooms/article33944234.ece
- fastcompany.com/3036748/why-its-so-hard-to-detect-emotion-in-emails-and-texts
ছবি- elearncollege.com/body-language/what-is-body-language-in-communication
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৫৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




