আমার বাবা আমাদের সাথে সব সময় খুব বন্ধুর মত আচরণ করতেন। আমরা ভাই বোনেরা প্রায়ই তার সাথে এক অর্থে আড্ডা দিতাম। আমি অন্তর্মুখী মানুষ হলেও আমার বাবা ছিলেন ১০০% বহির্মুখী এবং আড্ডাবাজ একজন মানুষ। আমি আসলে আমার মায়ের অন্তর্মুখিতা পেয়েছি। আমার বাবা প্রায়ই তার যৌবনকালের অনেক ঘটনা বলতেন। আমরা বেশ মজা করে সেগুলি শুনতাম। এরকম একটা ঘটনা হঠাৎ মনে পড়লো।
তরুণ বয়সে আমার বাবার বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন হিন্দু। সেই হিন্দু বন্ধুটা আবার এক মুসলমান মেয়েকে ভালোবেসে ফেলে। সেই ভালোবাসা স্থায়ী করার জন্য তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলে যেহেতু হিন্দু তাই বিয়ের প্রস্তুতি হিসাবে ছেলে মুসলমান হয়ে যায়। মুসলমান ছেলেরা মুসলমানি করে থাকে। আমার বাবার সেই নওমুসলিম বন্ধুও মুসলমানি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং করেও ফেলে। তবে হাজামের কাছে না গিয়ে তিনি একটা হাসপাতালে মুসলমানি করান। এই কারণে তাকে কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়।
তাকে দেখার জন্য প্রতিদিন তার প্রেয়সী হাসপাতালে আসে। ১৯৬০ সালের দিকের ঘটনা এগুলি। সেই সময় মেয়েরা একা চলাফেরা কম করতো। সেই প্রেয়সীকে প্রতিদিন সাথে করে হাসপাতালে নিয়ে আসত এবং বাড়ি দিয়ে আসত আমার বাবার হিন্দু বন্ধুরই আরেক মুসলমান বন্ধু। এভাবে কয়েকদিন ঐ মেয়েটার সাথে আসা যাওয়া করতে করতে এক পর্যায়ে ঐ মুসলমান বন্ধুর সাথে মেয়েটির ভাব জমে যায়। সেই ভাব আবার যেমন তেমন ভাব না। মেয়েটার কাছে মনে হয় ঐ হিন্দু বন্ধু না বরং মুসলমান বন্ধুটিই তার জীবন সঙ্গী হওয়ার জন্য অধিক উপযুক্ত।
আসলে প্রেমে পড়লে মানুষ অনেক সময় অদ্ভুত কাজ কারবার করে ফেলে। কেউ প্রেমিকার জন্য স্কুল পুড়িয়ে দেয়। কেউ খাল সাঁতরে পাড় হয় আবার কেউ সাত সমুদ্র তের নদী পাড় হয়ে চলে আসে বিয়ে করতে। আরও কত কি। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি ঐ মুসলমান বন্ধুটিকেই বিয়ে করে ফেলে। হিন্দু বন্ধুটা রাগে দুঃখে কপাল চাপড়াতে থাকে। এই কাহিনী শোনার পর আমরা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম কয়েকবার। কিন্তু এখন গল্পটা ব্লগে বলার পর আর হাসতে সাহস হচ্ছে না। কারণ এটা কি হাসির ঘটনা নাকি দুঃখের ঘটনা সেটা নিয়ে আমি একটু দ্বিধায় আছি। ঠিক করেছি ব্লগাররা হাসতে বললে হাসবো আর কাঁদতে বললে কাঁদবো।
কাটাকাটি করালো কারে আর বিয়ে করলো কারে। আসলে বিয়ে করার পর কাটাকাটি করা উচিত ছিল।
কোন ধর্মকে ছোট করার জন্য এই লেখাটা লেখা হয় নাই। একটা সত্যি ঘটনা বর্ণনা করলাম শুধু। কেউ হাসতে বা কাঁদতে চাইলে নিজ দায়িত্বে হাসবেন বা কাঁদবেন। কোন অবস্থাতেই পোস্ট দাতা হাসি বা কান্নার জন্য দায়ী থাকবে না। তবে বেশী হাসা বা কাঁদা যাবে না।
সুত্র - কোন সুত্র নাই।
ছবি - কাটাকাটির ছবি দেয়া ঠিক হবে না তাই দেয়া হল না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




