বিশ্বের অনেক উন্নত শহর ব্যয়বহুল। তার মধ্যে শীর্ষ দশটি শহর হলও সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্ক, তেল আভিভ, হংকং, লসএঞ্জেলেস, জুরিখ, জেনেভা, সানফ্রান্সিসকো, প্যারিস এবং সিডনি। ঢাকা শহর কোন উন্নত শহর না তারপরেও এই শহর বিদেশীদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর। বিদেশীদের জন্য ব্যয়বহুল হলে স্বভাবতই এই দেশের বাসিন্দাদের জন্যও ব্যয়বহুল হবে এটা অনুমান করা যায়। এটা কি কোন শুভ লক্ষণ নাকি অশনিসংকেত? যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জরীপ প্রতিষ্ঠান মারসার ২০২২ সালে এই তথ্য দিয়েছে।
সাধারণত উন্নত শহরগুলিতে জীবন যাত্রার ব্যয় বেশী থাকে। সেখানে সিংহভাগ মানুষের আয়ও বেশী হয়। কিন্তু ঢাকা শহর বিশ্বের দুষিত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রায়ই বায়ুদূষণে ঢাকা প্রথম স্থানে থাকে। শুধু বায়ু দূষণ না অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বিবেচনায় নিলে ঢাকা শহর একটা পশ্চাদপদ শহর। বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশের একটা শহরে কেন তাহলে জীবন যাত্রার ব্যয় এতো বেশী? এই বিষয়টার কারণ এবং এবং বিষয়টা ভালো না খারাপ সেটা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।
বিশ্বের ২২৭ টি বড় শহর নিয়ে এই জরীপ করা হয়েছে। ২০০ টি পণ্য বা সেবার তুলনামুলক ক্রয় মূল্য বিবেচনায় নেয়া হয়েছে যার মধ্যে গৃহায়ন, যাতায়াত ব্যবস্থা, খাদ্য, বস্ত্র, গৃহস্থালি সামগ্রী এবং বিনোদন অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য যে কোন বড় শহরের চেয়ে ঢাকার জীবন যাত্রার ব্যয় বেশী। ভারতের দিল্লী, মুম্বাই কিংবা পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, করাচী অথবা শ্রীলঙ্কার কলম্বোর চেয়ে ঢাকা ব্যয়বহুল। মুম্বাই ১২৭ তম, নিউ দিল্লী ১৫৫ তম, চেন্নাই ১৭৭ তম, বেঙ্গালোর ১৭৮ তম, কলম্বো ১৮৩ তম, হায়দারাবাদ ১৯২ তম, পুনে ২০১ তম, কোলকাতা ২০৩ তম, করাচী ২২৩ তম, ইসলামাবাদ ২২৪ তম। এছাড়া দক্ষিণ পূর্ব দিকে ব্যাংকক ১০৬ তম।
আমার মতে ঢাকা শহরের অতি ব্যয়বহুল হওয়ার এই সংবাদটা একটা দুঃসংবাদ । কারণ;
১। এই শহরের অধিকাংশ মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে এবং তাদের পক্ষে এই খরচ জোগান অত্যন্ত কষ্টকর একটা ব্যাপার এবং দিন দিন অবস্থার অবনতি ঘটছে। এই শহরের অন্তত ৫০% লোক নিরুপায় হয়ে এই শহরে বাস করছে কারণ দেশের অন্য কোথাও আয় রোজগারের তেমন ভালো ব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি অথবা থাকলেও সবার জন্য সেটা উপযুক্ত না।
২। বিদেশীরা ঢাকা শহরের চেয়ে এই অঞ্চলের অন্য শহরগুলিকে থাকার জন্য ভালো মনে করবে। আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য বিদেশীদের আগমন প্রয়োজন আছে।
৩। এই অতি মূল্যের কারণটা আমাদের নিজেদের তৈরি সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নের কারণে এটা ঘটেনি যেটা উন্নত দেশের উন্নত শহরগুলিতে ঘটে থাকে।
৪। দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থান ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ার কারণে মানুষ এখানে বেশী আসছে যার কারণে অন্যান্য অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সুষমভাবে গড়ে উঠছে না। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য একটা খারাপ সংবাদ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে। সব চাপ ঢাকার উপরে পড়ছে। ফলে ঢাকাবাসীর নাভিশ্বাস উঠছে।
৫। শুধু ঢাকা না আসলে সারা দেশেই কিছু কিছু পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক। যেমন খাদ্যদ্রব্য। কৃষকের কাছে পানির দামে কিনলেও ভোক্তার কাছে যখন বিক্রি হচ্ছে তখন দাম কয়েকগুন হয়ে যাচ্ছে। কৃষক এবং ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিন্তু মাঝের ব্যবসায়ীরা টাকা কামাচ্ছে।
৬। দেশের মানুষের আয়ের তুলনায় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে অতিমাত্রায়। অর্থাৎ আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে গলদ আছে। মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক জিনিসের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে কারণ আমরা মুলত একটা আমদানি নির্ভর দেশ। আমাদের মূল রফতানি পণ্য হল মানুষ। গার্মেন্টস দ্বিতীয় অবস্থানে আছে।
আরও অনেক কারণ আছে বা থাকতে পারে। ব্লগারদের মূল্যবান এবং সুচিন্তিত মতামত আশা করছি এই বিষয়ে ।
সূত্র – প্রথম আলো
ছবি – আর টিভি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৩৭