জুলাইয়ের বিপ্লব/ অভ্যুত্থানের কারণে আমাদের সমাজের বেশ কিছু সেলিব্রেটির (যশস্বী বা খ্যাতিমান) আসল রূপ জাতি দেখতে পেয়েছে। একজন সেলিব্রিটি যদি বিবেকহীন, তেলবাজ, লোভী, দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে আসলে সে সেলিব্রিটি কিংবা সুশীল হতে পারে না। আমরা যাদেরকে সুশীল সমাজের মানুষ বলি কিংবা যারা খ্যাতিমান তাদের সামাজিক দায়িত্ববোধ আমাদের মত সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশী হওয়া উচিত। মানুষ তাদেরকে ভালোবাসে এবং মানুষও আশা করে তারাও মানুষকে ভালোবাসবে। জালিম শেখ হাসিনা গত জুলাই এবং আগস্ট মাসে যখন তার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ, বিজিবি, রাব, গোয়েন্দা, প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীকে সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং জনগণের উপর লেলিয়ে দিয়েছিল তখন এই তথাকথিত সেলিব্রেটি বা সুশীলরা শেখ হাসিনাকে সমর্থন যুগিয়েছিল এবং শেখ হাসিনার মায়া কান্নায় তারাও অংশ নিয়েছিল। অনেকে শেখ হাসিনার এই জুলুমকে সমর্থন না দিলেও তারা স্বার্থপরের মত নিশ্চুপ ছিল। সারা দেশের জনগণ যখন রাস্তায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল তখন এই তথাকথিত সুশীলরা দায়িত্ব এড়িয়ে চালাকি করে মৌনতা অবলম্বন করেছিল। ১ মাসের মধ্যে যখন ২ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী, জনতাকে হত্যা করা হল, ৩০ হাজারের বেশী মানুষকে অন্ধ এবং পঙ্গু করা হল তখন এই সুশীলরা কোন কথা বলেনি। তাদের বিবেক তারা তখন শেখ হাসিনার কাছে বেঁচে দিয়েছিল। আবার অনেক সুবিধাবাদী সুশীল হাওয়া বুঝে আন্দোলনের একেবারে শেষ পর্যায়ে ছাত্রদের পক্ষে এসেছে।
স্বার্থপর আর বিবেকহীন মানুষ কখনও প্রকৃত সেলিব্রেটি হতে পারে না। কারা ছিল এই তথাকথিত সেলিব্রেটিরা? সবার নাম বললে তালিকা অনেক বড় হয়ে যাবে। উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হল রিয়াজ, ফেরদৌস, সুজাতা, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস, শমী কায়সার, চঞ্ছল চৌধুরী, শুভ্র দেব, সুইটি, তারিন, সুবর্ণা মোস্তফা, শাওন, তাহসান, জোতিকা জ্যোতি, আজিজুল হাকিম, ফজলুর রহমান বাবু, রোকেয়া প্রাচী, জায়েদ খান।
শিল্পীরা ছাড়াও আরও কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীও গত জুলাইয়ের আন্দোলনে শেখ হাসিনার জুলুমের সমর্থক ছিলেন কিংবা তারা নিশ্চুপ ছিলেন। যেমন সুলতানা কামাল, জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, ব্যারিস্টার সুমন, রামেন্দু মজুমদার, নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সারা জাকের, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শাইখ সিরাজ, ফরিদুর রেজা সাগর। হাসিনার পক্ষে ছিলেন ক্রীড়া জগতের শাকিব আল হাসান, মাশরাফি।
আওয়ামীলীগকে সমর্থন করেছে অনেক ইউটিউবার। যেমন, সোলায়মান সুখন, তৌহিদ আফ্রিদি, রাফসান দা ছোট ভাই।
তবে সবাই যে তেলবাজী করেছে এমন না। অনেক শিল্পী এবং সেলিব্রিটি জুলাইয়ের আওয়ামী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। যেমন মোশাররফ করিম, বাঁধন, সিয়াম আহমেদ, মম, সাবিলা নূর, মিথিলা, রুনা খান, পরীমণি, পুজা চেরি, বুবুলি, রওনক হাসান, সাবিলা নূর, অমিতাভ রেজা, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ফারুকি প্রমুখ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে ইউটিউবার সালমান মুক্তাদির, আয়মান সাদিক সহ আরও অনেকে।
যদি কোন খ্যাতিমান ব্যক্তি বিবেকহীন, লোভী, তেলবাজ, দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে তার যত প্রতিভাই থাকুক না কেন সে প্রকৃত অর্থে খ্যাতিমান বা সেলিব্রিটি না।
আসলে দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।
সামনে নতুন কোন দল ক্ষমতায় আসবে। তখন হয়তো আরেক ঝাঁক সেলিব্রিটি পাওয়া যাবে যারাও হবে বিবেকহীন, লোভী, তেলবাজ, দুর্নীতিবাজ। আমাদেরকে এদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদেরকে প্রকৃত গুণীজন চেনা শিখতে হবে। শুধু বাহ্যিক জৌলুস বা প্রতিভা না দেখে সেই ব্যক্তির মানবিক গুণাবলী, বিবেক এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করার গুণ আছে কি না সেটা দেখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৩