আল্লাহ দুটি ইবাদত করার জন্য টাকা পয়সা থাকার জন্য শর্ত আরোপ করেছেন:
এক. হজ্জ।
দুই. যাকাত।
অর্থাৎ এই দুইটি ইবাদত গরীব চাইলেও করতে পারবেনা! গরীবের এই ইবাদত করার যোগ্যতা অর্জণ করতে হলে আগে শর্তানুযায়ী টাকা পয়সা ইনকাম করতে হবে!
কিন্তু আমাদের দেশে যারা টাকা পঁয়সা ইনকাম করে তাদের অধিকাংশ সৎপথে করেন না। অথবা তাদের উদ্দেশ্য যাকাত কিংবা হজ্জ করা নয়। তারা নিজেদের অবস্হা পরিবর্তণ করারা জন্য অসৎ পথের আশ্রয় নিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করে। বিষয়টা এদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কিছুটা তুলণা করা যায়। এই সমস্ত নেতাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য জন-সেবা নয়, তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে ক্ষমতা দখল, প্রতিপত্তি অর্জণ, টেন্ডারবাজী করণ, সরকারী প্রকল্পের টাকা নয়ছয় এবং ব্যাংকের টাকা লুটপাট করা। এগুলো যারা করে তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। এই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার তালিকায় সাধারণত বড় বড় নেতা, সরকারী আমলা, বড় বড় ব্যবসায়ী কিংবা নামিদামী শিল্পপতি সহ ডাক্তার, উকিল এবং উচ্চ পর্যায়ের চাকুরীজীবীগণ থাকেন।
সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো তারা শেষ বয়সে এসে হজ্জের নিয়তে সৌদি আরব গমণ করেন। টাকার জোড়ে নামের সাথে "হাজী সাব" টাইটেল লাগিয়ে দেশে ফেরেন! তাদের হজ্জ পরকালের, নিজের বা জাতির কোন উপকারে না আসলেও সৌদি রেভিনিউ ফুলে ফেঁপে উঠে। সৌদি শেখেরা সে টাকায় ইউরোপ আমেরিকায় বিলাসিতা করতে যায়। এতে বৈশ্বিক আর্থিক কর্মকান্ড গতিশীলতা অর্জণ করে। হজ্জ থেকে ফিরে এসে এই সমস্ত অসৎ লোকগুলো সন্তানদের সামনে ধর্মীয় বয়ান ছাড়েন। কিন্ত তত দিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। কেননা তার সন্তানেরা এতোদিনে ধণীর ঘরের দুলাল হিসেবে বেড়ে উঠেছে। আর এদেশের অধিকাংশ নব্য ধনীর ঘরের দুলাল বা দুলালীরা চরিত্রের দোষে বখাটে কিংবা নষ্টা হিসেবে সমাজে পরিচিতি পায়। তাই নব্য হাজী সাবের বয়ান দেওয়া পর্যন্তই শেষ! এই বয়ানে কোন কাজ আসেনা। ধনীর দুলালদের কাছে এই সমস্ত বয়ান বুড়াদের জন্য প্রযোজ্য কিংবা ব্যাকডেটেট মনে হয়। এতে বুড়ো (টাকার বিণিময়ে হাজী সাব টাইটেল লাগানো ব্যক্তি) মহা পেরেশানিতে পড়ে যান। তখন বুড়ো সাব হাতে তসবিহ নিয়ে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করে আত্মাকে দমনন করেন।
অপর দিকে বুড়ার অর্জিত অবৈধ টাকা নিয়ে দুলাল কিংবা দুলালীরা মদের বারে, গাড়িতে বা নিষিদ্ধ যায়গায় গ্লাসে গ্লাস মিলিয়ে চিয়ার্স করেন। ইয়াবা নামক বড়িতে বিলাসিতায় মত্ত হন। কেউ কেউ বয় কিং গার্ল ফ্রেন্ড নামক আজব প্রাণী নিয়ে হইহুল্লুর করেন। বুড়ো চোখের সামনে এভাবে টাকাতে উড়াতে দেখে মনে কষ্ট পেলেও শান্তনা দেন এই বলে যে,.. আমারই তো সন্তান, তাদের জন্যি তো সবকিছু। তারা নষ্ট না করলে করবে কে!
বাহ্ কত চমেৎকার শান্তনা!
অবশেষে বুড়ো সাব জনকল্যাণ মূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। যাকাতের নামে কাপড় বিতরণ করেন। শরীয়াহ অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ টাকার যাকাত আসলেও চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার মোটা কাপড় কিনে এলাকায় "যাকাতের কাপড় বিতরণ কর্মসূচী" পালন করেন। এই কাপড় আনতে গিয়ে অনেকে জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দেন। এভাবে পর পর কয়েক বছর যাকাতের কাপড় বিতরণ সহ দান সদকা করার ফলে এলাকায় তার একটা গ্রহণ যোগ্যতা সৃষ্টি হয়, নাম দাম বাড়ে, লোকে হাজী সাহেব বলে তোয়াজ করে! আর এই সুযোগ নিয়ে বুড়ো সাব জন-প্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। স্হানীয় পত্রিকায় ঈদ ও নব বর্ষের শুভেচ্ছার বাণী ছাপান। তারপর একদিন সাহস কারে পোষ্টার ছাপেন " আগামী মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কিংবা এমপি হিসেবে হাজী মকবুল আপনাদের দোয়াপ্রার্থী।
"
তবে ছোটখাটো পোষ্টে বা পাতি পর্যায়ে যারা থাকেন তারা বিশাল অংক কামাতে না পাড়িলেও মোটামুটি ভালোমানের টাকা ইনকাম করেন। এখন বলতে পারেন তাদের জন্য কোন ভালো ব্যবস্হা নেই? আছে আছে, তাদের জন্য ভালো ব্যবস্হা হলো তাব্লিগ জামায়েতের চিল্লা! তিন চিল্লা দিয়ে দাড়ি বড় করে আর লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পড়ে এলাকায় নূরানি ভাব নিয়ে চলাফেরা করা [( কেউ ভাববেন না যেন, আমি এজমালি তাব্লিগের বিরোধিতা করছি)]। তারা সব সময় মসজিদে একটি জায়নামাজ বুকিং দিয়ে রাখে। অসৎ পথের কামাই থেকে মাঝেমধ্যে ভালো অংকের টাকা মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা ওয়াজ মাহফিলে দান করেন। সে সময় সাধারণ মুসুল্লিরা বে-হক পথের টাকা জেনেও মারহাবা কিংবা আলহামদুলিল্লাহ বলে চিৎকার দিয়ে উঠেন! ইমাম সাহেব বিগত দিনের গোনাহ মাফ হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে ব্যর্থ কান্নাকাটি করে চোখ ভিজাতে চেষ্টা করেন! সাধারণ মুসুল্লিরা এবং ইমামের এই চিৎকার আরশে আজীমে কম্পণ সৃষ্টি হয় কিনা কে জানে! কেউ কেউ মসজিদ কমিটির সভাপতির পদ অলংকৃত করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। অনেকে স্হানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে দলের মাঝে কোন্দল সৃষ্টি করেন। ছেলেকে লীগে কিংবা দলে পদ দেওয়ার জন্য বিভিন্নজন জায়গায় দৌড়ঝাপ কিংবা লম্পজম্প করেন। ছেলের হাতে মটর সাইকেল এবং টাকার বান্ডিল তুলে দেন ছাত্র কিংবা যুব রাজনীতি করার জন্য। ছেলে সে টাকায় গ্যাং স্টার গ্রুপ গড়ে তোলে এলাকায় নানা অপকর্মে জড়ায়। তাদের অপর্কম মাঝেমাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
এভাবেই আমাদের দেশে রাজনীতির চর্চা এবং হজ্জ ও যাকাত নামক ইবাদত পালন করা হচ্ছে। হতে থাকুক.... এতে আমার কিছু যায় আসেনা। আফসোস এই জন্যে যে এদেশের অধিকাংশ ধর্মভীরু গরীব জনগণ সব সময় হজ্জ এবং সোনার মদিনা স্পর্শ করার জন্য ছটফট করে মরে, অধিকাংশ মেধাবী ছেলেরা রাজনীতি নামে অপরাজীনীতির স্বীকার হয়ে ক্যাডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এখন অনেকে বলবেন, অবৈধ টাকায় হজ্জ এবং যাকাত হয়না, হজ্জের ছোঁয়াব তমুক ইবাদতে পাওয়া যায়! এবং রাজনীতির শিক্ষা এই নয়. ব্লা ব্লা........। কিন্তু... অপরাজনীতির স্বীকার এই ছেলেগুলো একদিন সত্যি সত্যি মাথার উপর বসবে, আমরা তখন তাদের জি-হুজুর বলে ডাকব। এবং অবৈধ টাকায় ধার্মিক সাজা লোকগুলো থেকে যাবে সব কিছুর উর্দ্ধে।
রাজনীতি ও ইবাদত কোন পথে?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:১১