somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন-কথাঃ ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন-কথাঃ ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ

১৯৫২-র মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের আন্যতম ছিলেন রফিক উদ্দিন আহমদ। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় শহীদ রফিকের ভগ্নিপতি জনাব মোবারক আলী খান বলেছিলেন, মৃত্যুর সময় রফিক‘র বয়স ছিল ১৯-২০ বছর। এ তথ্য সঠিক নয়। কারন ১৯৪৫ এর ৫ নভেম্বর-এ ইস্যুকৃত প্রবেশিকা পরীক্ষার সার্টিফিকেট অনুযায়ী বয়স ১৯ বছর ১ মাস। মোবারক আলী খান পরে অবশ্য বলেছিলেন যে, ‘‘ রফিক ১৯২৬ সালে ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহন করেন।’’ রফিকের মা রাফিজা খাতুন (১৯০৫-১৯৮৮) রফিকের এই জন্ম তারিখ অনুমোদন করে ছিলেন। ফলে শহীদ হবার সময় রফিকের বয়স ছিল ২৬ বছর। শহীদ রফিকের জন্ম তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমার সিংগাইর থানার বলধারা ইউনিয়নের পারিল বলধারা গ্রামে। পারিল বলধারা এখন মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার একটি গ্রাম। তাঁর পিতার নাম আবদুল লতিফ ও মাতা রাফিজা খাতুন। রফিকরা ছিল পাঁচ ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে রফিক ছিল সবার বড়। চার ভাই, ১.আবদুর রশীদ (১৯৩১-১৯৮৭),২. আবদুল খালেক (১৯৩৪), ৩.বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম (১৯৪৩-১৯৭২), ৪.খোরশেদ আলম (১৯৪৭) এবং বোন ১.আলেয়া বেগম (১৯৩৮) ও ২.জাহানারা বেগম (১৯৪৫)।
রফিক ছিল পিতা-মাতার প্রথম সন্তান। শৈশবে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া করেন। মরহুম আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী ও বীরেন্দ্রমোহন দত্তগুপ্ত শিক্ষকদ্বয়ের সুযোগ্য ছাত্র হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন।
রফিক বাল্যকালে কিছুটা ডানপিটে ছিলেন। তাই গাছ থেকে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে চিকিৎসার জন্য কোলকাতা যান। কোলকাতা আবস্থানের সময়মিত্র ইনিস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। দেশ বিভাগের কয়েক বছর পর তিনি পুনরায় দেশে ফিরে আসেন ও বায়রা স্কুলে ভর্তি হয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। শহীদ রফিক সাহিত্যাঙ্গনে ছড়া রচনায় পটু ছিলেন এবং সেলাই ও সূচী শিল্পেও বেশ দক্ষ ছিলেন। সমাজকল্যানেও তিনি গভীর আগ্রহী ছিলেন। কোলকাতা থাকাকালীন পারিল বলধারা যুবক সমিতি’র কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
২১ ফেব্রুয়ারী বেলা ২ টার সময় জানা গেল ঢাকা মেডিকেলে পুলিশ গুলি চালাচ্ছিল এবং তিন জন মারা যান। বেলা তিনটায় ফুলবাড়িয়া রেলগেইট এবং নওয়াবপুরেও গোলাগুলি চলছিল।
রেলগেইটে ছোট একজন শিশু মারা গেছেন, এইভাবে চারদিক থেকে গোলাগুলির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল। সারা শহর জুড়ে ছিল আতঙ্ক। মোবারক আলী খান ঐ দিন সন্ধ্যা সাতটার সময় তার ঘরের কর্মচারীর মাধ্যমে জানলেন, রফিকের মাথায় গুলি লেগেছে ও তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন। এ সময় ঐ এলাকায় ১৪৪ ধারা ও কারফিউ বলবৎ ছিল। কোন কোন সূত্রে জানা গেল রাত্রেই মিলিটারীর লোকেরা এ লাশ এখান থেকে সরিয়ে ফেলবে। কারন, ছাত্ররা উক্ত লাশ নিয়ে যাবার জন্য বিশ্ব বিদ্যালয়ে জটলা পাকাচ্ছে এবং তুমুল হট্টগোল করছে। ভোর হলেই মেডিকেল হাসপাতালে প্রবেশ করে বলপূর্বক তারা উক্ত লাশগুলি নিয়ে মিছিল বের করবে। তাই ছাত্রদের এখানে আসার পূর্বেই মিলিটারীরা লাস এখান থেকে সরিয়ে ফেলবে। দৈনিক মিল্লাতের প্রথম পাতায় রফিকের মাথার খুলি উরে যাওয়ার ছবিও ছাপা হয়েছিল।শহীদ রফিকের পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণআন্দোলনে নিজেদের গভীরভাবে যুক্ত করেছেন এবং নিজেদের জীবনকে কখনোই দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় মনে করেননি। তাইতো ১৬৬৯ এর গণআন্দোলনেও জীবন দিয়েছেন এই পরিবারের সদস্য জনাব ইসহাক। রফিকের ভাই আবদুস সালাম ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দুর্ভাগ্যের বিষয় তিনি গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন। মহান ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদকে বাংলাদেশ সরকার মরনোত্তর একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×