জীবনের মূল্য কী? এ প্রশ্নের সোজা সাপটা উত্তর দেওয়া কঠিন। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে এই প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর পাওয়া যাবে। নিশ্চিতভাবেই একজনের উত্তর আরেক জনের থেকে আলাদা হবে। এমনকি কারো উত্তর অন্য কারো উত্তরের বিপরীতও হতে পারে। কেউ বলবে জীবনের মূল্য অপরিসীম। কেউ হয়তো বলবে জীবন অমূল্য। কেউ বলবে জীবনের মূল্য এক পৃথিবী। কেউ হয়তো রসিকতা করে বলবে, ‘জীবনের মূল্য এক কোটি টাকা।’ এই উত্তরের কারণ জানতে চাইলে গণিতের হিসেব দেখিয়ে সে বলবে, ‘সাত কোটি টাকায় যদি সাত জনের জীবন নেওয়া যায়, তবে একজন মানুষের জীবনের মূল্য হবে এক কোটি টাকা।’ খুবই খাঁটি গণিত! সন্দেহ নেই! কেউ আরো উত্তেজিত হয়ে বলবে, ‘কেন ভাই, কয়েক বছর আগে মাত্র কুড়ি হাজার টাকার জন্য একটা জীবন খুন হল, সেটা চোখে দেখেন না?’ উত্তেজিত ব্যক্তিটি তখন জীবনের মূল্য দেখাবে কুড়ি হাজার টাকা। কেউ হয়তো বাংলাদেশের কোন নিভৃতকোণে সংঘটিত কোন ঘটনার বরাত দিয়ে দেখিয়ে দিবে জীবনের মূল্য আরো কত কম! এই রকম তর্ক-বিতর্কে এই প্রশ্নের মূল উদ্দেশ্যই হারিয়ে যাবে প্রশ্নের উত্তর না বোঝার কারণে।
তাই প্রশ্নটিকে কিছুটা বদল করে যদি জিজ্ঞেস করা হয় জীবনের উদ্দেশ্য কি? তবে হয়তো এতক্ষণ যারা তর্ক করছিলেন তাদের মুখে কুলুপ এটে যাবে। কারণ এই প্রশ্নের উত্তর খুব সোজা নয়। এই প্রশ্নের উত্তর জানাও নয়। এই প্রশ্নেরও রয়েছে অনেক অনেক উত্তর। ব্যক্তির জীবনদর্শনের সাথে এই প্রশ্নের উত্তর জড়িত। প্রতিটি ব্যক্তিই যেহেতু আলাদা, তাই ব্যক্তির জীবনদর্শনও আলাদা। এটাই স্বাভাবিক। তাই একেক জনের জীবনের উদ্দেশ্য এক এক রকমের হবে। তাই এবারেও সঠিক উত্তর পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
এইবার প্রশ্নটিকে আরো একটু ঘুড়িয়ে জিজ্ঞেস করুন, জীবনের কাছে আপনার চাওয়া কি? এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই এক বাক্যেই বলবে, একটু সুখ চাই। জীবনে সুখী হতে চাই। কেউ হয়তো একটু আগ বাড়িয়ে বলবে পরকালেও সুখ চাই। যারা পরকালের সুখ চান তারাও এইকালেও একটু সুখ চান। যদি এইকালে সুখ পাওয়া নাও যায় তবুও তারা পরকালে সুখ চান। আর যারা পরকালের আশা করেন না তাদের কাছেতো এই জীবনই সব। সুখের জন্য এরা সব কিছু করতে প্রস্তুত। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, আস্তিক-নাস্তিক, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সকলেই আসলে সুখ চায়।
কিন্তু সুখ কী? কীসে সুখ?