somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘শিক্ষকতা পেশায় চোর ঢুকেছে'- মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর উদ্বেগ এবং কিছু প্রশ্ন

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সম্প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী একটি ভাষণে বলিয়াছেন শিক্ষকদের মধ্যে কিছু চোর ঢুকিয়া গিয়াছে। এই চোরেরা প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা রকমের অপকর্ম করে। ইহারাই আবার ক্লাসে না পড়াইয়া প্রাইভেট পড়ান--- ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সকল চোরদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রীবর আহ্বান করিয়াছেন শিক্ষকতা পেশা ছাড়িয়া চোর পেশায় যুক্ত হইতে।
শিক্ষা এবং শিক্ষকদের নিয়া মন্তব্য করিবার অধিকার সকলেরই রহিয়াছে। দেশের সবচাইতে দুষ্ট লোকও চাইলে শিক্ষকদের সম্পর্কে যাহা খুশি বলিতে পারেন। ইহাতে আমার জানা মতে আইনগত কোন বাঁধা নাই। তাহার উপরে উনি আবার মহামান্য শিক্ষামন্ত্রী। উনিতো চাইলেতো কথাই নাই। উনি বলিতেও পারেন, করিতেও পারেন। তাহার উপরে বাজারে শোনা যায় উনি নাকি এক সময়ে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতাও করিতেন। ফলে শিক্ষকতার গোষ্ঠিসুদ্ধ উদ্ধার করা উনার দায়িত্বের মধ্যেই বর্তায়।
তাই শিক্ষকদের নিয়া কে কি বলিলেন তাহা মনে ধরিয়া গোস্বা করিবার প্রয়োজন বোধ করি না। তবে চুরি পেশায় কেহ যোগদানের আহ্বান জানাইতে পারেন তাহা আমার জানা ছিল না। কারণ চুরি পেশা সমাজে কোনো স্বীকৃত পেশা নয়। তাহা ছাড়া এই পেশায় একবার ধরা পড়িলে গণধোলাই খাইবার সম্ভাবনা থাকে। তাহার উপরে আবার পুলিশের ভয়ও রহিয়াছে। কোন কারণে একবার ধরা খাইলেতো আর রক্ষা নাই। লাল দালানের ভাত খাইতে হইবে। তাই মাননীয় মন্ত্রী বাহাদুরের এই আহ্বান সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা ভালোভাবে নেন নাই।
আপনি ভাবিতেছেন আমি কি করিয়া জানিলাম যে সাধারণ মানুষ তাহার এই কথা ভালোভাবে নেন নাই? মন্ত্রী বাহাদুরের এই আহবান শুনিয়া একটি চায়ের দোকানে দুইজন রিক্সা চালক কি বলিতেছিলেন তাহা শুনুন। তবেই বুঝিবেন-
একজন রিক্সাচালক বলিলেন, ‘উনি অন্তত এই সকল চোরদের রাজনীতিতে যোগদানের কথা কইতে পারতেন। কারণ রাজনীতিই বাংলাদেশের সবচাইতে লাভজনক পেশা। পৃথিবীতে এমন লাভজনক পেশা আর আছে বইলাতো মনেয় হয় না। আহ্বান জানাইলে ভালোটাই জানানো উচিত। তাহার উপরে ইহাতে আবার তাহাদের মন্ত্রী হইবার সম্ভাবনাও থাকে এবং একই সাথে তাহারা বিচারের উর্ধ্বেও থাকিতে পারিতেন।’
অপরজন বলিলেন, ‘ব্যাটা তুই মন্ত্রীকে এত বোকা ভাবিতেছিস ক্যান ? উনি তো সেই কারণেই তাহাদের এই পেশায় যোগদান করিতে বলেন নাই। ইহাতে তাহাদের ভাগ কমিয়া যাইবে না?’
তবে আমি ভাবিতেছি অন্য কথা। মন্ত্রী বলিয়াছেন শিক্ষকদের মধ্যে চোর ঢুকিয়া গিয়াছে। কিন্তু ইহাদের শিক্ষকতা পেশায় ঢুকাইলেন কাহারা?
ইহার উত্তর পাইতে হইলে কয়েকটি ধাপে আগাইতে হইবে। কারণ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি ধাপ রহিয়াছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। শুনিয়াছি সকল পর্যায়েই প্রশ্নপত্র ফাঁস হইয়া থাকে। তাই সকল ধাপের কথাই বলা প্রয়োজন।
প্রথমত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথায় আসা যাউক। কাহারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দিয়া থাকেন?
প্রত্যেকটি জেলায় মহামান্য আমলাকুল ইহাদের নিয়োগ কর্তা। চোর যদি প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে থাকিয়া থাকেন তাহা হইলে ইহার দায়ভার মহামান্য আমলাকুল এড়াইতে পারেন না। কারণ তাহারাই এই সকল সকল চোরদের বাছিয়া বাছিয়া নিয়োগ দিয়াছেন। অবশ্য আমলাকুলদের এককভাবে দোষ দেওয়া যাইবে না। প্রায়শই শোনা যায় অমুক মন্ত্রী, তমুক ন্যাতা এত্তো-এত্তো টাকা উৎকোচ লইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ দিয়াছেন। তাই মহামান্য আমলাকুলের সাথে মহামান্য মন্ত্রী ও নানা স্তরের ন্যাতা-ফ্যাতারাও জড়িত।
দ্বিতীয়ত মাধ্যমিক স্তুরের শিক্ষকদের প্রসঙ্গে দেখা যাউক। এই স্তরের একটি বড় অংশ এলাকার মহামান্য গণমান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়োগ দিয়া থাকেন। কারণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ছাড়া কেহ ঢুকিতে পারেন না। এই কথা সকলেই জানেন বাংলাদেশের গণমান্য লোক কাহারা। আপনি যদি মাছ ব্যবসায়ী কিংবা জুতার কারিগরও হউন আর আপনার গায়ে যদি ক্ষমতাসীন দলের সীলমোহর মারা থাকে আর আপনি যদি ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া থাকেন তাহা হইলেই হইল। আপনি গণ্যমান্য হইলেন। জাতে উঠিলেন। কিছু সরকারি স্কুল রহিয়াছে। সরকারি আমলারা ইহাদের নিয়োগকর্তা। ইহাদের জন্য আগের কথাই প্রযোজ্য।
কলেজ স্তরের শিক্ষকদের দুইটি অংশ। একটি অংশ সরকারি অপরটি বেসরকারি। সরকারি অংশের নিয়োগকর্তা তো মহামান্য রাষ্ট্রপতি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবার এই কাজটি সরাসরি করেন না। তিনি পিএসসি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কাজটি করিয়া থাকেন। পিএসসির দায়িত্ব হইল ভালো ভালো যোগ্য ও মেধাবীদের খুঁজিয়া বাহির করিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে তাহাদের তালিকা প্রদান করা। সরকারি কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে যদি চোর লুকাইয়া থাকে তবে বলিতে হয় পিএসসি কেন চোর বাছাই করিয়াছেন তাহা আগে খুজিয়া দেখা দরকার। তবে কি চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। এই খানেও দুইটা কথা আছে। প্রথম কথা পিএসসির এই মাসতুতো ভাইদের আবার নিয়োগ দিয়া থাকেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। আর দ্বিতীয় কথা ইহলো এই মাসতুতো ভাইয়ারা কেবল শিক্ষকতা পেশায়ই নিয়োগ দিয়া থাকেন না। তাহারা রাষ্ট্রের সকল শাখায়ই নিয়োগ দিয়া থাকেন। যাহারা চোর বাছাই করিয়া থাকেন তাহারা আবার রাষ্ট্রের সকল শাখায়ই চোর সাপ্লাই দেন কি না সেই বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া দরকার। অবশ্য বাংলাদেশের সর্বগ্রাসী দুরনীতি ও চৌর্যবৃত্তি দেখিয়া আপনি যদি নিশ্চিত হইয়া যান তাহা হইলে ভিন্ন কথা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জরিপেও এই বিষয়ে কিছু আলামাত পাওয়া গিয়াছে।
আর বেসরকারি কলেজের শিক্ষক নিয়োগ নিয়া খুব বেশি কিছু না বলাই ভালো। কারণ এই কথা সকলেই জানেন যে প্রত্যেকটি বেসরকারি কলেজের সভাপতি হইলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি। রাজনীতি করিয়া এমপি হইয়া পদের ভারে কলেজের সভাপতি বনিয়া যান। যেইখানে এমপি না হইবেন সেইখানে ক্ষমতাশালী কেউ। তিনিও রাজনীতির বলে বলীয়ান। আর বাংলাদেশে ক্ষমতাশালীরাই বলীয়ান এই কথা কানায়ও জানে।
সবার উপরে রহিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককূল। প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবার হয় প্রধানমন্ত্রী না হয় রাষ্ট্রপতি। তাহারা যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো মানুষ উপাচর্য নিয়োগ করিয়া থাকেন তাহা হইলে তাহাদের দ্বারা চোর নিযুক্ত হইবার সম্ভাবনা কম। কিন্তু তাহারাও যদি চোরবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ দিয়া থাকেন তাহা হইলেতো আর রক্ষা নাই। চোরে চোরে সয়লাব। তাহা হইলে মাসতুতো ভাইয়ের সেই এনালজিটা কোথায় গিয়া দাড়াইবে তাহা ভাবিতেও গা শিহরিয়া উঠে।
এইবার ভাবুন, সিংগারার মইধ্যে আলু ঢুকলো ক্যামনে?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×