somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত অপ্রয়োজনীয়, অবাস্তব এবং হঠকারী

২৮ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষা নিয়ে অস্থিরতা এখন চরমে পৌঁচেছে। যার চুড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে পঞ্চম শ্রেণিতে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়া না-নেয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে।
এর আগে সরকার ২০১০ সালে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। এই নীতিতে সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে পাঁচ বছরের পরিবর্তে আট বছরে উন্নীত করে। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের বিস্তার এতটা হওয়া প্রয়োজন যাতে করে একজন শিশু তার জীবন যাপনের জন্য এবং রাষ্ট্রের একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। একজন সুস্থ্য ও স্বাভাবিক শিশুর জন্য ‘পর্যাপ্ত এবং প্রয়োজনীয়’ শিক্ষা পাঁচ বছরে অর্জন করা কঠিন বলে প্রতীয়মান হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষাস্তর আটে উন্নীত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের এই পুনবিন্যাস প্রয়োজনীয় এবং যুগোপযোগী। কিন্তু শিক্ষার স্তর পুনবিন্যাসের সাথে অনেকগুলো জটিল বিষয় সংশ্লিষ্ট। [সে বিষয়ে অন্য আরেক লেখায় আলোচনা করা যাবে।] সরকার এ জটিল বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে, কিংবা বলা যায় এর গুরুত্ব বুঝতে না পেরে, শিক্ষানীতি প্রণয়নের এক বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরের মধ্যে শিক্ষাস্তর পুনবিন্যাসের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে। যা একেবারেই অবাস্তব এবং অসম্ভব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষানীতিতেই এ বিষয়ে স্ববিরোধীতা লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষানীতিতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে ‘ ২০১১-১২ অর্থ বছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চাল করার জন্য অনতিবিলম্বে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
১) প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার নতুন শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক এবং শিক্ষক নির্দেশিকা প্রণয়ন করা
২) প্রাথমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষকের জন্য শিক্ষাক্রম বিস্তারসহ শিখন শেখানো কার্যক্রমের ওপর ফলপ্রসু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
৩) শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় পুনর্বিন্যাস করা।
এরপরে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার এই পুনর্বিন্যাসের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের সকল বিদ্যালয়ের ভৌত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আট বছরব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ২০১৮ এর মধ্যে ছেলে-মেয়ে, আর্থ সামাজিক অবস্থা এবং জাতিসত্তা নির্বিশেষে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সকল শিশুর জন্য নিশ্চিত করা হবে।
প্রশ্ন হলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই কি করে প্রাথমিক শিক্ষাস্তর পুনর্বিন্যাস সম্ভব? যদি এসকল পদক্ষেপ যথাযথভাবে গ্রহণ করা হয়েও থাকে তাহলেও শিক্ষানীতির প্রস্তাবনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির পরে কেন্দ্রীভাবে কোনো পরীক্ষা নেয়া আবস্তাব, অপ্রয়োজনীয় এবং শিক্ষানীতির বিরোধী। তাহলে কি কারণে, কাদের পরামর্শে সরকার পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষার নামে একটি অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগীতা শিশুদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে? এই সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কি কোনো সুপারিশ ছিল? শিক্ষা গবেষকদের কি কোনো সুপারিশ ছিল? তেমন কোনো সুপারিশের কথা আমাদের জানা নেই। এই অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাটি নিয়ে যখন দেশ জুড়ে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির খবরে দেশব্যাপী আলোড়ন ওঠে তখন এই পরীক্ষাটি বন্ধ/বাতিল করার একটা উদ্যোগ নেয়া হয়। বাতিলের অল্প সময়ের ব্যবধানে মন্ত্রীপরিষদ তা আবার পুনর্বহলা করে। কোনো রকম আলোচনা না করেই মন্ত্রী পরিষদ এই সিদ্ধান্ত পুনর্বহাল করে।
মন্ত্রী পরিষদের মহাপণ্ডিত সদস্যরা শিশুদের কথা ভাবলেন না, শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করলেন না (করলেও আমরা জানি না), অভিভাবকদের কথা শুনলেন না। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলেন। মন্ত্রী পরিষদের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে কোমলমতি শিশুদের মনোজগতে যে প্রবল নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, শিশুদের মধ্যেযে অপ-প্রতিযোগীতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে যা শিশুদের ছাপিয়ে শিশুদের অভিভাবক ও শিক্ষকমহলেও ছড়িয়ে পড়ে তার খবর কি মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা রাখেন ?
তাই অবিলম্বে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করুন। পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করুন। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শিশুদের মূল্যায়নের ভার সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর উপরেই ন্যস্ত করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×