somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৯৩ সালে আমি শাম্মী-দেলোয়ারের কেলেঙ্কারির কারণে তাদের সাফ গেমসের ক্যাম্প থেকে বের করে দিয়েছিলাম : ইব্রাহিম চেঙ্গিস

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(শুরুতে একটা কথা বলা খুব জরুরি। ইব্রাহিম চেঙ্গিস’র সাক্ষাতকার ছাপানোয় অনেকে বাঁকাচোখে তাকাবেন নিশ্চিত। কারণ, তাকে সবাই পরিবহন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ হিসাবে চেনে-জানে। কিন্তু তিনি এক সময় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। হয়েছিলেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তার ক্রীড়ানৈপূণ্য জানতে পুরো সাক্ষাতকারটা পড়–ন দয়া করে। তারপর পরিবহন সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজ হিসাবে যতোই গালাগাল করুন, কিন্তু ক্রীড়াজগতের দক্ষতার জন্য ক্রীড়াঙ্গনে অন্তত সহমর্মী হবেন।)

অ্যাথলেট মাহবুবুল আলম মারা যাওয়ার পর অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনে শূণ্য পদে কো-অপ্ট করা হয়েছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিসকে। ধারণা করা হচ্ছে, ফেডারেশনের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন তিনি-ই। এই পদে নির্বাচন করার আগাম ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন তিনি। অ্যাথলেটিক্সের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো হতবাক-ক্ষুব্ধ সাবেক এই অ্যাথলেট। তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

ডেসটিনি : অনেক দিন পর ফেডারেশনে ফিরলেন। ভেতরের পরিবেশ কেমন মনে হচ্ছে?
ইব্রাহিম চেঙ্গিস : শুরুতে আমার মনে হয়েছে ফেডারেশন কর্মকর্তা-কোচ-অ্যাথলেটদের মধ্যে যে সমন্বয়, সুন্দর ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন, সেই জিনিসটা এখন নেই। সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে। নয়তো অ্যাথলেটিক্সের সুদিন ফিরবে না।
ডেসটিনি : শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফেডারেশনে সরকারের ক্ষমতার প্রভাব খাটাচ্ছেন?
ইব্রাহিম চেঙ্গিস : যারা এটা বলছে, তারা আসলে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক সচেতনতাবোধ তো সবারই থাকে; যার যে-টা ভালো লাগে, সে তার অনুসারী হবেই। আমি ক্রীড়াবিদ ছিলাম, এখন সংগঠক। এই পরিচয়েই বেঁচে থাকতে চাই। আমি মনে করি, ক্রীড়াঙ্গনে কোন দলাদলি থাকা উচিত না। দেখুন, সরকার ক্ষমতায় আসার কমিটি কিন্তু ভাঙ্গেনি। ১৮ জন সদস্য পদত্যাগ করার পরও সরকার হস্তক্ষেপ না করে নির্বাচিত কমিটির ওপরই আস্থা রেখে গনতন্ত্র চর্চার নজীর গড়েছে।
ডেসটিনি : কিন্তু মাঝে মাঝে যে আপনার ‘উচ্চকন্ঠ’ শোনা যায়?
ইব্রাহিম চেঙ্গিস : ফেডারেশনে কিছু অনিয়ম আছে। সে সব আলোচনায় আসলেই আমি প্রতিবাদী হয়ে উঠি। এতে অনেকে মনঃক্ষুন্ন হন, আমার বিপক্ষে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। দৃঢ়ভাবে বলতে পারবো, আমি কখনো অন্যায় কিছু করি না। ১৯৯৩ সালে আমি শাম্মী-দেলোয়ারের কেলেঙ্কারির কারণে তাদের সাফ গেমসের ক্যাম্প থেকে বের করে দিয়েছিলাম। অথচ তারা সে সময় ফর্মে ছিলো। গত এসএ গেমসেও বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে। এটা যেকোন সময় বিস্ফোরন ঘটাতে পারে। কিন্তু এর প্রতিকার না করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে তো আসলে আমরা অপরাধীকে উৎসাহ দিচ্ছি।
ডেসটিনি : অনেকের ধারনা আপনার স্পোর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। রাজনৈতিক প্রভাবে ফেডারেশনে এসেছেন।
ইব্রাহিম চেঙ্গিস : যারা এ ধরনের কথা ছড়াচ্ছেন, তারাই আসলে ক্রীড়াঙ্গনের লোক না। অ্যাথলেটিক্সের অনেক কিছু তারা জানেন না। আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ অ্যাথলেটিক্সের ¯িপ্রন্টে কোনদিন দ্বিতীয় হইনি। সব সার্টিফিকেট আছে। লংজাম্পার ছিলাম। ইন্টারমিডিয়েট লেবেলে ২২ ফুট লাফিয়ে রেকর্ড গড়েছিলাম। পরে বিজেএমসিতে যোগ দেই। ১০০ ও ২০০ মিটার ¯িপ্রন্টার ছিলাম। ১৯৮৪-৮৫ সালে অ্যাথলেটিক্স ছাড়লেও ট্র্যাক ছাড়িনি। ১৯৯৩ সালে ফেডারেশনের নির্বাচনে কার্যকরী সদস্য হই। ‘৯৭ সালে পূণঃনির্বাচিত হই। ২০০০ সালে নির্বাচিত হই সাধারণ সম্পাদক। শুধু অ্যাথলেটিক্স না, আমার ক্রীড়া রেকর্ড অনেক বড়। যা অনেকেরই নেই। ১৯৭৬ সালে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় আমি ঢাকা মোহামেডানের হয়ে প্রথম বিভাগ হকি লিগ খেলেছি। পরের বছর ফরাশগঞ্জে খেলেছি। ১৯৭৯এ সাধারণ বীমাকে প্রথম বিভাগে তুলেছি। আন্তঃকলেজ, আন্তঃবোর্ড হকি খেলেছি বেশ কয়েকটা ঢাকা বোর্ডের হয়ে। ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলেছি মুসলিম ইনস্টিটিউট, শান্তিনগর ক্লাবের পক্ষে। নারায়ণগঞ্জে শুকতারা যুব সংসদকে ১৯৭৭ সালে লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছি। সে বছর সেলিম ভাই, নান্নু ভাই, সালাম ভাই, মহসিন ভাই, বাবলুর সঙ্গে ব্রাদার্সের ফুটবল ক্যাম্পে ছিলাম ওয়াপদা মাঠে। ১৯৭৯ সালে নটরডেম কলেজে ভর্তির পর সকালে ক্লাশ হওয়ায় সেটা আর চালিয়ে যেতে পারিনি। ভিক্টোরিয়া ও ব্রাদার্সের হয়ে প্রথম বিভাগ বাস্কেটবল লিগ খেলেছি। আন্তঃকলেজ বাস্কেটবল খেলতাম নটরডেমের হয়ে। দেশে হ্যান্ডবল চর্চা শুরু হলে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলেছি।
ডেসটিনি : আপনার ও বর্তমান সময়ের অ্যাথলেটিক্স কেমন?
ইব্রাহিম চেঙ্গিস : আমাদের সময়ে আন্তঃস্কুল ও আন্তঃকলেজ মিটগুলো হতো খুব ধুমধাম করে। বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। ওখান থেকে বাছাই করে অ্যাথলেটদের ক্যাম্পে রাখা হতো। লিপি, লিটিরা কিন্তু স্কুল লেবেল থেকেই উঠেছে। এখন তার কিছুই তো হচ্ছে না। তাই ভালো অ্যাথলেটও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন স্পোর্টসম্যানই তো পাওয়া যায় না। কিন্তু শারীরিক শিক্ষা কলেজের প্রতিনিধিদের ফেডারেশনকে কাউন্সিলর করা হয়েছে! একটা ছেলে বা মেয়ে বিএড করে কলেজে চাকরি নিচ্ছে। তারা ফেডারেশনের সদস্যও হচ্ছে। এরা অ্যাথলেটিক্সকে কি দিবে? এটা আসলে ফেডারেশনের কিছু ব্যক্তি অনিয়ম করে করেছে।
ডেসটিনি : এক সময় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের বেশ ভালো অবস্থান ছিলো। এখন অধঃপতনের চুড়ায় ঠেকেছে। কারণটা আসলে কি?
ইব্রাহিম চেঙ্গিস : আমাদের সময় নিয়মিত খেলা হওয়ায় অনেক অ্যাথলেট বেরোত। বিভিন্ন সংস্থা-প্রতিষ্ঠান ইভেন্ট আয়োজন করতো। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ গেমসে অনেক অ্যাথলেট দেখা গেছে। তারা কিন্তু অধিকাংশই ছিলো শিক্ষিত-সম্ভ্রান্ত পরিবারের। এখন অনেকাংশে কম। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাথলেট কোটা থাকতো, এখন সেটা নেই। বিভিন্ন সংস্থা, সার্ভিসেস দলে চাকরি হতো। অভিভাবকরাও অনিশ্চিত ভেবে এ পথে দেন না। এই পথ থেকে বেরোতে হবে। ধরুন, বিউটির কথা। ওর বয়স হয়েছে, কিন্তু তাকে হটাবে কে? এখন তো পাইপ লাইনেই অ্যাথলেট নেই। উচ্চতা দেখে ২০/৩০ টা স্কুলের শিক্ষার্থীকে বাছাই করে ক্যাম্প করতে হবে। আরেকটা সমস্যা, যারা ভালো করে তাদের বিদেশে পাঠালেই পালিয়ে যায়। এর কিন্তু দায়টা ফেডারেশনেরই। বিদেশে ভালো ফল করার আশা জাতীয় মিটগুলো করলে প্রত্যাশা পূরণ হবে। কিন্তু প্রতিযোগিতাগুলো হয় দায়সারাভাবে।
ডেসটিনি : আপনার ‘চেঙ্গিস’ নামের পেছনে নাকি মজার ঘটনা আছে?
ইব্রাহিম চেঙ্গিস : চেঙ্গিস আমার নাম না, টাইটেল ফ্রম রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ১৯৭২ সালের কথা। আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে গ্রুপ ভিত্তিক উচ্চতা অনুসারে বার্ষিক ক্রীড়াটা হতো। খুব লিকলিকে, পাতলা আর ফর্সা গড়নের ছিলাম। বড়দের সঙ্গে ১০০ ও ২০০ মিটার ¯িপ্রন্টে প্রথম হতাম। কলেজের এক বড় ভাই সালাহউদ্দিন ব্যঙ্গ করে মঙ্গোলিয়ান বীর চেঙ্গিসের নাম যোগ করে আমাকে ‘চেঙ্গিস’ ডাকত। এরপর থেকে নামের পেছনে চেঙ্গিস বসিয়ে দিলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×