চবিতে ফেরেননি ছুটিতে থাকা ৭৭ শিক্ষক, উদ্ধার হচ্ছে না ৩ কোটি টাকা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা ছুটিতে গিয়ে ছুটির মেয়াদ পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন নি ৭৭ জন শিক্ষক। তাঁরা উচ্চশিক্ষা ও অর্জিত ছুটি নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, এ ৭৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৫৪ জন বিদেশে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭ জন, কানাডায় ১১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৩ জন এবং যুক্তরাজ্যে গেছেন ৩ জন । বাকিরা দেশেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠানে আছেন।এসব শিক্ষকদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাওনার পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও এই পাওনা আদায় করতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষাছুটিসহ এসব ছুটিতে গিয়ে না ফেরা শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান অনুষদের পদার্থবিদ্যা বিভাগে। এ বিভাগের ১০ জন শিক্ষক কর্মক্ষেত্রে আর ফেরেননি। এছাড়াও রসায়নে ছয়জন, গণিত পাঁচজন, বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পাঁচজন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের চার, সামুদ্রিক বিজ্ঞান ও ফিশারিজ ইনস্টিটিউটে তিনজন এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের এক জন। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে সমাজতত্ত্বে নয়জন, অর্থনীতিতে আটজন, ইতিহাস,রাজনীতিবিজ্ঞানে পাঁচজন করে, লোকপ্রশাসনে তিনজন এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ১ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেননি।কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে দর্শন বিভাগ ও ইংরেজিতে দুজন করে এবং বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ফিরে আসেননি। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ব্যবস্থাপনায় তিনজন, মার্কেটিং স্টাডিজ বিভাগের একজন এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দুজন শিক্ষকও ফিরে আসেননি একইভাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র আরো জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধির ৮’র ২ ধারা ভঙ্গ করায় কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে ৭৫ জন শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করেছে। অপর দু’জন নিজ থেকেই অব্যাহতি নিয়েছেন। নিয়ম অনুসারে ছুটিতে থাকা শিক্ষকদের প্রথম তিন বছর বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তবে শর্তানুসারে তিন বছর পর ওই শিক্ষককে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে হবে। আর না ফিরলে সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা ফেরত দিতে হবে ।
চাকুরিচ্যুত ১০ জন শিক্ষক তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা প্রায় ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৩১৬ টাকা পরিশোধ করেছেন। অন্যদের কাছে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি ৯৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭ টাকা পাওনা আছে বলে সূত্র জানায়।
দেশের মেধা পাচার হচ্ছে উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছুটি নিয়ে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না আসার বিষয়টি একেবারেই উচিত না।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ‘উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে প্রত্যেক শিক্ষক দেশে ফিরে সেখানকার অর্জিত জ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো শিক্ষক নির্ধারিত ছুটি শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান না করার বিষয়টি অবশ্যই নীতিহীন ও গর্হিত কাজ। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র, বিদেশে থাকা শিক্ষকেরা সর্বশেষ যে দেশে অবস্থান করেছিলেন, সেখানকার দূতাবাসগুলোতে টাকার পরিমাণ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছিল। এছাড়া সংশ্লিষ্ঠদের দিয়ে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষ নোটিশ দেয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সফিউল আলম মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছুটি শেষে কর্মক্ষেত্রে যোগ না দেওয়া শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া এগিয়েছে। অল্প সময়ে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



