বড় জিমন্যাস্ট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিল যশোরের মেয়ে রানী (ছদ্মনাম)। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া শিশুর লালিত স্বপ্ন ভোর না হতেই ভেঙ্গে দিয়েছেন কোচ নামধারী ‘নবপশু’ সানোয়ার আলম শানু। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে মফস্বলের শিশু জিমনেস্টকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের টেবলেট খাইয়ে বেহুশ করে যশোরেরই কোচের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় গোটা ক্রীড়াঙ্গনে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, জিমনেস্টিক্স ফেডারেশন বা এনএসসি থেকে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। অপরাধীর বিপক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে এনএসসি ভবনে গ্রাম্য সালিশের আদলে কান ধরে ওঠ-বস করানো (মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে), জুতাপেটা, চুল কেটে ছেড়ে দিয়েছে! শিশুটির বাবা-মাকে ডেকে এনে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জিমনেস্টিক্স কোচ ইকবালের বিপক্ষে কৌশলে ধর্ষনের ঘটনা ধাপাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনএনসির কর্মকর্তারা ঘটনা শুনেও ক্যাম্প কমান্ডারকে চার্জ বা কোন পদক্ষেপ নেননি।
বিশ্বস্ত সুত্র জানান, এনএসসির প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচীর আওতায় জিমনেস্টিক্সে যশোরের চতুর্থ শ্রেণীর এক শিশু বাছাই হয়ে ২১ দিনের আবাসিক ক্যাম্পে অংশ নিতে ৩১ মে ঢাকায় আসে। তাকে ও প্রথম শ্রেণীর আরেক খুদে জিমনেস্টকে রাখা হয় এনএসসির পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায়। ‘বয়স কম’ বিধায় তাদের কক্ষেই থাকেন সঙ্গে আসা কোচ শানু। পরদিনই পাষ- রুপে আভির্ভূত হয় সে। খাবারের সঙ্গে ঘুমের টেবলেট খাইয়ে বেহুশ করে চতুর্থ শ্রেণীর শিশুটির ওপর যৌন নির্যাতন করে শানু। যন্ত্রণায় অস্থির শিশুটির চিৎকারে পাশের কক্ষে থাকা অন্য ক্রীড়াবিদরা ছুটে আসলে ‘অকান্ড‘ প্রকাশ পায়। শানুর হাত থেকে বাঁচতে শিশুটি পাশের কক্ষের তায়কোয়ান্দোর মেয়েদের ঘটনা জানিয়ে আশ্রয় চায়। মেয়েরা তাৎক্ষনিকভাবে ক্যাম্প কমান্ডার কাজল ও এনএসসির জিমনেস্টিক্স কোচ ইকবালকে ঘটনা জানালে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। কিন্তু মেয়েদের ক্ষোভের মুখে ক্যাম্প কমান্ডার ও এনএসসির আরো কয়েকজন কোচের উপস্থিতিতে তিনদিন পর শালিস ডাকা হয়! সেখানে শানু সত্যতা স্বীকার করে। সালিশে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএসসির অন্য ইভেন্টের এক কোচ জানান, ক্যাম্প কমান্ডার ও কোচদের উপস্থিতিতে ক্যাম্পের মেয়েরা শানুকে জুতা-পেটা করে, চুল কেটে দেয়। সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে ক্যাম্প থেকে বহিস্কার করা হয়।
শিশুটির মা ঘটনা শুনে ঢাকায় এসে লম্পটের শানুর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে ‘ঘটনা প্রকাশ হলে ভবিষ্যতে ক্ষতি হবে’ বলে নানাভাবে প্রভাবিত করে চিকিৎসা বাবদ কিছু টাকা দিয়ে শিশুটি ও তার বাবা-মাকে যশোর পাঠিয়ে দেন এনএসসির কোচ ইকবাল ও ছোট নজরুল, অভিযোগ এমনটাই। অবশ্য ইকবাল জানান, মেয়ের ভাল চিন্তা করে ঘটনা বেশি না বাড়িয়ে শানুকে শাস্তি দিয়েছি। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুর রহমান বলেছেন তিনি বিষয়টি শুনে অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ আসলে ও তদন্তে প্রমাণিত হলে স্থায়ী ব্যবস্থা নিবেন! কিন্তু যশোরে চিহ্নিত অপরাধী শানুর বিপক্ষে অতীতেও ধর্ষণের অভিযোগ থাকলেও প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পে কোচ করা প্রসঙ্গে বলেন, সে যে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত জানতাম না। তাছাড়া ফেডারেশন না, দায়িত্বটা তাকে দিয়েছে এনএসসি।
শালিসে উপস্থিত থাকা ক্যাম্প কমান্ডার ও ভারোত্তোলন কোচ কাজল শানুর অপকর্ম ও শাস্তিস্বরুপ চুল কেটে দেয়া ও জুতা-পেটা করে ক্যাম্প থেকে বহিস্কারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কঠিন কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি এনএনসির পরিচালক (ক্রীড়া) হাইয়ুল কাইযুমকে মৌখিকভাবে জানান। ক্রীড়াঙ্গনের ‘ইমেজ’ নষ্ট হওয়ার দোহাই দিয়ে জিমনেস্টিক্স ফেডারেশন ও এনএসসির কযেকজন কর্মকর্তা বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন।
যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, শানু ছোট শিশুটির সঙ্গে জঘন্য আচরণ করেছে বলে শুনেছি। তার চরিত্র জানি বলে তাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোথাও দায়িত্ব দেয়া হয় না। এনএসসি ও ফেডারেশন আমাদের না জানিয়ে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে।’
ক্যাম্প কমান্ডার কাজলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও কল রিসিভ করেননি তিনি। অন্যদিকে এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) হাইয়্যুল কাইয়ুমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ফোনে ই বিষয়ে কিছু বলতে চাইনা। অফিসে আসেন কথা হবে।’

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



