১৩ মাসেও একটা চিঠি লেখার ফুরসত পায়নি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া বিষয়ক যুগ্ম সচিব (ক্রীড়া) মোস্তাফিজুর রহমান! তার রহস্যজনক ভুমিকায় ইন্টারন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক কমিটি বহিস্কার করেছে বাংলাদেশকে! অভিযোগ উঠেছে, বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন না জানিয়ে অভিযুক্ত যুগ্ম সচিব, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব, পরিচালক (উন্নয়ন) ও পরিচালক (ক্রীড়া) এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তাদের নিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় নাম পরিবর্তিত প্যারা অলিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশকে সরকারি অনুমোদন দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন জানিয়েছেন মূল সংগঠন ন্যাশনাল গেমস ফর ডিজঅ্যাবালড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম খান।
২৭ জুন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দেয়া চিঠির মাধ্যমে জানা গেছে, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের স্বার্থ রক্ষায় শারীরিক প্রতিবন্ধী কর্ণেল (অব.) খান গোলাপকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট সিগমা হুদাকে সাধারণ সম্পাদককে করে ১৯৮১ সালে ন্যাশনাল গেমস ফর ডিজঅ্যাবালড অ্যাসোসিয়েশনের (এনজিডিএ) যাত্রা শুরু। সে বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন (রেজি ঢা-০১১৫১/১৯৮১) নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক কমিটি (আইপিসি) ও এশিয়া প্যারা অলিম্পিক কমিটির (এপিসি) বিভিন্ন গেমসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। ২০০৪র নভেম্বর কায়রোতে আইপিসির অতিরিক্ত বার্ষিক সাধারণ সভায় এনজিডিএকে অ্যাজ দ্যা প্যারা অলিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ স্বীকৃতি দেয়া হয়। ২০০৫এ বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের ‘সেরা সংগঠন’ পুরস্কায় পায়। কিন্তু ২০০৩-০৫ মেয়াদে প্রয়াত আ.শ.ম মোফাজ্জল হোসেন সভাপতি ও মাকসুদুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সংগঠনের মাধ্যমে আদম পাচার করার অভিযোগ ওঠে। ২০০৫র ১৬ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হলেও তারা অবৈধ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় থেকে সরকার অনুমোদিত ন্যাশনাল গেমস ফর ডিজঅ্যাবালড অ্যাসোসিয়েশনের নাম পরিবর্তন করে ন্যাশনাল প্যারা অলিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ। অনুমোদন নেয়া হয় জয়েন্ট স্টক কোম্পানী অ্যান্ড ফার্মসের। পরিবর্তন হয় লোগোতেও। তবে জালিয়াতি ধরা পড়ে ২০০৭ সালে আইপিসি সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানতে চান মূল সংগঠনের নাম। দুই মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণ হয় ন্যাশনাল গেমস ফর ডিজঅ্যাবলড অ্যাসোসিয়েশন মূল সংগঠন। ২০০৯র ২৮ জুন সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় ও ২৭ অক্টোবর ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আইপিসিকে চিঠিও দেয়। ফলশ্রুতিতে গত বছর ২৯ মে আইপিসি আ.শ.ম. মোফাজ্জল হোসেন ও মাকসুদুর রহমানের নাম পরিবর্তনের ভুয়া চিঠি ও রেজুলেশন সহ যাবতীয় তথ্য খোদ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. আহাদ আলী সরকারকে ইমেলে পাঠায়। জানায় ২৯ মের মধ্যে বৈধ সংগঠনের। কিন্তু এক বছর পেরোলেও রহস্যজনক কারণে ১৩ মাস পরও সে চিঠির জবাব পাঠায়নি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এমনকি যোগাযোগও নাকি করা হয়নি। ফলে গত ১৪ জুন আইপিসি বাংলাদেশকে সাসপেন্ড করে। ফলে আসন্ন লন্ডন প্যারা অলিম্পিকে অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
তবে জোর গুঞ্জন রয়েছে, অবৈধ প্রক্রিয়ায় নাম পরিবর্তিত সংগঠনটিকে পূনগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া বিষয়ক যুগ্ম সচিব। সভাপতি পদে তার মতো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সচিব শফিক আনোয়ারের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে প্রস্তাবিত কমিটিতে বিওএর মহাপরিচালক কর্ণেল (অব.) ওয়ালী উল্লাহকে সহসভাপতি, এনএসসি পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আবদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা জেলা ক্রীড়া অফিসার তারিকুজ্জামান নান্নুকে কোষাধ্যক্ষ রাখা হয়েছে। একমাত্র প্রতিবন্ধী বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম খানকে প্রথম ও বিতর্কিত মাকসুদুর রহমানকে দ্বিতীয় যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে। তালিকাটা নাকি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. আহাদ আলী সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অথচ তিনি প্যারা অলিম্পিক কমিটির পুরো বিষয়টাই জানেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



