somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেইজিঙে কুরবানি পালন

০১ লা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব ভোরে উঠে কাবাব , চপ ,ফ্লাস্ক ভর্তি চা তৈরি হল । মেয়েকে তৈরি করতে আর নিজেরা তৈরি হতে হতে সামস ভাইয়ের গাড়ি এসে গেল । শীতের পোশাক পড়ে আমরা লিফটে নিচে নামলাম । গাড়িতে অদিতি , তানিয়া ও ওর মা হাসিমুখে ১ বছর বয়সের ঐশীকে কোলে নিলেন। আমি তানিয়াকে নিয়ে সামনে । সামস ভাই ড্রাইভিঙে । ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভএর আমাদের বাসা ছেড়ে মুল রাস্তায় নামলাম। বাইরে শীত আছে তবে তীব্র নয়।গাড়িতে হিটিং চালু। থার্ড রিং রোডে গিয়ে আমরা সোজা পুবের রাস্তা ধরলাম। আধা ঘণ্টায় আমরা মুসলিমদের গ্রামে পৌঁছলাম । যে বাড়িতে কোরবানি হবে সেই বাড়ির ড্রইং রুমে আমাদের খাবার দাবার রেখে পাশের মসজিদে পৌঁছে গেলাম। প্রায় সবাই চীনা মুসলিম। নামাজ শেষে বাইরের উঠানে গ্রামবাসীর তৈরি নানারকম খাবার টেবিলে সাজানো আছে। খেলাম। এই খাবার সব নামাজীদের জন্য ।মুলত ওটা চীনাদের নিজেদের মধ্যকার ঈদ আনন্দ পালন। কারন সবাই সবার বাড়িতে গিয়ে ঈদ আনন্দর থেকে নামাজের পরই সবার আনা খাবার সবাই মিলে খেলো। অনেকে আমাদের হাত ধরে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন। এবার সেই বাড়িতে। আমাদের কোরবানির গরুটাকে ইমাম এসে এক পোঁচে জবাই করলেন। তার ছুরি দুবার পোঁচ দেয়নি, বেশ অবাক চোখে দেখলাম। আমরা এবার আয়েশ করে বারান্দায় বসে চা খেতে লাগলাম। ঐশী ঘুমিয়ে।অদিতি আর তানিয়া সাথে আনা পুতুল খেলছে। আরও গরু, ছাগল, ভেড়া বাধা। অপেক্ষায় আমাদেরই বেইজিং প্রতিবেশী সব মুসলিম দেশের কূটনীতিকদের জন্য। ওরা শহরে নামাজ পড়ে তারপর আসবে। আমরা নাস্তা খেলাম আমাদের সাথে আনা নানারকম খাবার দিয়ে।
এলাকায় বসবাস করা মুসলিমদের প্রায় সবাই গরু, ছাগল, ভেড়া পালে।তাদের বাড়ির মধ্যেই খোঁয়াড় । খোলা উঠানে চলে জবাই আর মাংস বানানোর পালা। বেইজিঙের কাছে এই একমাত্র জায়গা যেখান থেকে আমরা তাজা মাংস নিয়ে যাই দল বেধে ছুটির দিনে।আরবরা ছাগল আর দুম্বা পছন্দ করে। পাকিস্তানীরা ভেড়া বেশ খায় । বাঙ্গালিরা গরুতে খুব সন্তুষ্ট । ছাগলও নেই আমরা। তিন ভাগের একভাগ মসজিদে দেই আর সাথে চামড়া। সবাই তাই করে। ১০টার পরে আরবদের আসা শুরু হল , আরও এলো আফ্রিকান মুসলিমরা। আরও বেশ কটা বাড়িতে একই ব্যাপার চলছে। ১২ টা নাগাদ লোকে ভর্তি হয়ে গেল। আমরা সপ্তাহ আগে এসে গরুর বুকিং দিয়ে গেছি । আমরা রুমের মধ্যে আশ্রয় নিলাম। মেয়ে খেলছে তার দুই আপুর সাথে । ও পেটে আসতেই তানিয়াদের বাসায় কিছুকাল ছিলাম কারন তখনও আমরা এপার্টমেন্ট পাইনি।থাকতাম হোটেলের বড় একটা রুমে। কাজেই জন্মের পর ও দেখছে এই দুটো মুখ।জন্মের ১৫ দিনের মাথায় ঝকঝকে নতুন এপার্টমেন্ট তাও সামস ভাইয়ের কাছাকাছি । ওরা ৬ নাম্বারে আর আমরা ১ নাম্বার বিল্ডিঙে। ভাবির আনা খিচুড়ি খেয়ে আমরা তৈরি হওয়া মাংস ব্যাগে পুরে গাড়ির পিছনে ভরে ফেললাম। প্রায় ২৪০ কে জি । অন্যান্য বাঙ্গালিরাও তাদের গরু তদারকি করছেন। একদল চীনা খুব ব্যাস্ততার সাথে দক্ষ হাতে ছাগল গরু বানিয়ে দিচ্ছেন।দেরিতে আসা সবাই বেশ ব্যাস্ত তাদের জবাই হওয়া ছাগল নিয়ে। একটি লোক একটা জ্যান্ত ছাগলকে টেনে তার পা কাটতে শুরুর আগেই একজন বাধা দিয়ে সরিয়ে দিলেন কারন ওটা সব জবাই হওয়া ছাগলের মাঝে পড়ে ছিল আর ব্যাটা বেশ মদ খেয়ে চুর হয়ে আছে। হাসি ছড়িয়ে পড়ল সব বিদেশির মুখে। আমাদের দেওয়া মাংস মসজিদের একটা রেস্টুরেন্টে বিক্রি হবে আর বাকিটা ফ্রিজে থাকবে। এর পরিপূর্ণ হিসাব থাকে এবং কমিটিকে দিতে হয়। অনেকেই মসজিদে আলাদা বড় অংকের টাকাও দিতেন ওই সময়। আমরা ক্লান্ত হয়ে ৩টার দিকে বাসায় পৌছুলাম । রাতে সামস ভাইয়ের বাসায় পার্টি । আগামিকাল থেকে শুধু খাওয়ার পালা। নাস্তা একজনের বাসায়, দুপুরে একজনের তো রাতে আরেকজনের বাসায়। সবাই বাংলাদুতের কূটনীতিক । দুতাবাসে ছাত্রদের নিয়ে বিরাট অনুষ্ঠান হয় । আগে থেকেছি এখন ঈদে থাকি কিন্তু এবার ঠিক করলাম এক ঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি চাই। তাছাড়া আমি আর সামস ভাই চলে গেলে ওরাও খুব মিস করে তাই এবার দুই পরিবার চাইলাম একসাথে পুরোদিনটা একসাথে কাটাই। সন্ধ্যায় পলি প্যাকে মাংস বিলি , রাষ্ট্রদূত সহ। অফিসে দুদিন ছুটি কিন্তু এই দুটি দিন খুব আনন্দে কাটিয়েছি । সম্ভবত বেইজিঙে ঈদে যে আনন্দ করতাম তা আর কখনো পাবনা।তবে ছাত্রজীবনে খুব কষ্ট লাগতো একাকী ঈদ কাটাতে । যদিও পরে দুতাবাসে আয়োজন হতো । একটি বা দুটি পরিবারের সাথে সখ্যতা আমার ও স্ত্রীর ঈদ সন্ধ্যার আনন্দ ফিরিয়ে দিত। চাকুরীজীবনে ছাত্ররা আসত দল বেধে । ওদের জন্য রান্না বান্না করে একটা জমজমাট ঈদ পালন হতো। দুরের শহরে থাকা বাঙ্গালী ছাত্র চলে আসত বেইজিঙে দলবলের সাথে ঈদ করবে, নিজেদের হিটারে লোকাল মিট শপ থেকে হিমায়িত মাংস দিয়ে ঈদ উদযাপন।আমার বেইজিঙের শেষ জীবনে আরবদের সাথে ঈদ ও কুরবানি দুটোই পালন করেছি।ওটা একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আরবীয় রীতিতে রোস্ট করা মাংসর ব্যাপারই আলাদা সাথে বাসমতি চাল আর ফরাসী সালাদ।
দেশে আন্তরিকতা হারিয়ে গেছে।
বেইজিঙই ভালো ছিল ।
---------------------------------------------
উপরের বর্ণনা ১৯৮৮/৮৯ সালের । আমার মেয়ে কোরবানি দিচ্ছে এবং দেয় নিয়মিত। জামাই আসবে আজ সন্ধ্যায় , করোনায় দুজন দুদিকে আটকে গেছে । তানিয়া জামাই সহ অস্ট্রেলিয়ায় ঘাটি গেড়েছে । ওরা দুজনই ফারমাসিতে পি এইচ ডি করেছে , এক ছেলের মা । অদিতি সংসার করছে ঢাকায় , দুই সন্তানের মা । শামস ভাই , ভাবী ডি ও এইচ এসে বাড়ি করে ভাল আছেন। আমাদের খুব আনন্দময় সময় কাটিয়েছি বেইজিঙ্গে , ১৪ বছর ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×