.
কোন স্কুল, কলেজের ভাইভা বোর্ড না এটি। এ ভাইভা বোর্ড ছিলো ভয়ংকর নির্যাতনের দলিল। যেখানে একবার গেলে বেশীরভাগ মুক্তিযোদ্ধার শেষ গন্তব্য হতো শহীদ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া । যারা ফিরে আসতে পেরেছেন তাঁরাই কেবল বলেছেন এই ভাইভা বোর্ড কতোটা ভয়ংকর এবং পৈশাচিক!
.
পাকিস্তানী হানাদার ও রাজাকারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে ভাইভা বোর্ড নামে এমন অজস্র কুঠুরির মধ্যে তুলে এলে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালাতো ভয়ংকর, পৈশাচিক, নির্মম নির্যাতন। প্রতিটি নির্যাতনের কৌশলের জন্য ছিলো ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার। টর্চার করার সময় এগুলো এক একটি নিযার্তনের কৌশল হিসেবে এক এক কাজে লাগতো।
.
ছবির বড় হাতুড়ি ব্যবহার হতো মুক্তিযোদ্ধাদের হাত পায়ের গিরার হাড় ভাঙ্গার জন্য, চিমটা ব্যবহার হতো নখ টেনে উঠিয়ে নির্যাতনের জন্য, কাটিং প্লাস ব্যবহার হতো আঙ্গুল কাটার জন্য, কাঁচি ব্যবহার হতো মানব দেহের পাতলা চামড়া কাটার জন্য, প্লাস ব্যবহার হতো দাঁত উঠানোর জন্য। স্ক্রু ড্রাইভার ও বড় আংটা ওয়ালা সূচটি ব্যবহার হতো চোখ উঠানো, নখের ভিতরে দিয়ে নখ ভেঙে ফেলা আর সংবেদনশীল অঙ্গে ফোটানোর জন্য। এছাড়া শরীরে আলপিন ফোটানো হতো।
.
হানাদার ও রাজাকারদের টর্চার সেল ছিলো এমনই ভয়ংকর। এতো নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর ও মুখ খুলতেন না মুক্তিযোদ্ধারা। প্রয়োজনে নিজের উপর দিয়ে হোক শত নির্যাতন, অত্যাচার করতে করতে পিষে ফেলা হোক তবুও মুখ খোলা যাবেনা; প্রকাশ করা যাবেনা মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন একটি তথ্য ও। মুক্তিযোদ্ধারা অস্বীকার করতে নির্যাতনের সীমা ছাড়াতো কয়েকগুণ।
.
যারা সেই ভাইভা বোর্ড থেকে ভাগ্যক্রমে ফিরে এসেছেন কেবল তাঁরাই জানেন ভাইভা বোর্ড নামের একটি কক্ষ কতোটা তান্ডবলীলা চালাতে পারে তারা।
.
ভাইভা বোর্ড থেকে ভাগ্যক্রমে ফিরে আসা ক্র্যাকপ্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধা আবুল বারাক আলভী ও লিনু বিল্লাহ আমাকে বলেছিলেন ভাইভা বোর্ড কতোটা ভয়ংকর।
.
ছবি- খুলনার গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে আছে এই ভাইবা বোর্ডের নির্যাতন ও পৈশাচিকতার নমুনাটি।
----------------------------------------------------------------------------
আবুল বারাক আলভি আমাদের ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষক ছিলেন । ছাত্র অবস্থায় একদিন সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম । ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় দাড়িয়ে তিনি আমায় বলেছিলেন সেই নির্মম কাহিনী । সেলে থাকা অবস্থায় আই ডি কার্ড থেকে আলভী নামটা নখ দিয়ে খুচিয়ে উঠিয়ে ফেললেন । কারন পাক হানাদাররা তাকে আলভী নামেই ডাকছিল । প্রথম দফার মারধোরের পর দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় আলভী বললেন আপনারা ভুল করছেন , আমি আলভী নই , তারা প্রমান চাইল , স্যার আই ডি বের করে দিলেন । ব্যাস স্যার ছাড়া পেয়ে গেলেন । লিনু ভাইয়ের সাথে এতো জানা শোনা কিন্তু ভুলেও কখনো পাকিদের নির্যাতন কাহিনী বলেননি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩২