
কেওড়া দক্ষিনাঞ্চলের নোনা পানিতে জন্মানো গাছের ফল । সুন্দরবন এর উৎকৃষ্ট উৎপাদন ক্ষেত্র । হরিনের প্রধান খাদ্য কেওড়া পাতা । বোধ করি এজন্য হরিনের মাংস এত সুস্বাদু । আমি জ্ঞান হওয়ার পর ৯০ দশকের পর হরিনের মাংস খাইনি । কেওড়া ফল পশুর নদীর পানিতে ভাসে জোয়ারে এবং ভাটায় নেমে যায় । গ্রামে স্কুল জীবনের শেষ দুবছর কাটিয়েছি । এসময় বাড়ির পাশের পশুর নদী থেকে জোয়ারে ভেসে আসা কেওড়া ফলের টক যা খাট্টার মত টক খেতাম পরান ভরে । বিনা পয়সায় ভিটামিন সি'র ফ্যাক্টরি যেন । বানর সবচে বেশি কেওড়া ফল আর পাতা ছেড়ে বন্ধু হরিনের জন্য । আমার এক বন্ধু ( প্রয়াত) কেওড়া ফলের আচার বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিল । হয়নি বা পারেনি । এখন কেওড়া ফল খুব দামি একটা বিষয় । গত বছর কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে একটি খালের পাড় দিয়ে কেওড়া গাছ দেখে আশ্চর্য হয়েছি । ড্রাইভার বলল স্থানীয় চেয়ারম্যান সুন্দরবন থেকে ফেরার সময় কয়টা গাছ এনে লাগিয়েছিল যা এখন জঙ্গলের ভাব এনেছে । ভাল লাগলো পরিবেশ উন্নয়নে তৎপর এক চেয়ারম্যানের উদ্যোগের গল্প শুনে । পটুয়াখালীর চরাঞ্চলে এই কেওড়া গাছ এমনিতেই বেড়েছে ভেসে আসা ফল এর বীজ থেকে । নোনা পানি ছাড়া কেওড়া গাছ বাচে না । কেওড়ার টক খেলে সাথে অল্প ঝোলা গুড় মিশিয়ে দেবেন খাট্টায় , অপূর্ব হবে স্বাদ । সাথে ডঃ শেখ জুলফিকারের গবেষণা পত্রের অংশবিশেষ রইল অধিক জ্ঞানের জন্য । কেওড়ার আচার বানাচ্ছে কেউ কেউ , জানলাম ঐ লেখা খুজতে গিয়ে ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. শেখ জুলফিকার হোসেনের গবেষণালব্ধ প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, কেওড়া ফলে রয়েছে প্রায় ১২ ভাগ শর্করা, ৪ ভাগ আমিষ, ১.৫ ভাগ ফ্যাট, প্রচুর ভিটামিন বিশেষত ভিটামিন সি এবং এর ডেরিভেটিভসমূহ।
কেওড়া ফল পলিফেনল, ফ্লাভানয়েড, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও আনস্যাচুরেটেড ওমেগা ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে লিনোলেয়িক এসিডে পরিপূর্ণ। তাই মনে করা হয়, ফলটি শরীর ও মনকে সতেজ রাখার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী। চা-এর মত এ ফলটিতে ক্যাটেকিনসহ বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
এদেশে পাওয়া ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলিফেনল রয়েছে আমলকীতে, তারপরই হল কেওড়া ফলের অবস্থান। কেওড়া ফলে সমপরিমাণ আপেল ও কমলা ফলের তুলনায় অনেক বেশি পলিফেনল ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পলিফেনল শরীরে ডায়াবেটিক, ক্যান্সার, আথ্রাইটিস, হৃদরোগ, এলার্জি, চোখের ছানি, বিভিন্ন ধরনের প্রদাহসহ প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করে।
ফলটিতে আমলকী, আপেল ও কমলার তুলনায় বেশি পরিমাণ পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক রয়েছে। এ ফলের রয়েছে ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিক প্রতিরোধী এবং ব্যথা নাশক গুণাগুণ। ফলটি ডায়রিয়া, আমাশয় ও পেটেরপীড়ার জন্যে দায়ী ব্যাক্টেরিয়াকে কার্যকরীভাবে দমন করতে পারে।
তাছাড়া, কেওড়া ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পালমিটিক এসিড, অ্যাস্করবাইল পালমিটেট ও স্টিয়ারিক এসিড যা খাদ্য শিল্পে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে এবং তৈরি খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।

ছবি - নেট থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



