somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ডাহুক’ ও আমাদের সমাজ এবং বাস্তবতা!!!

১০ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সত্যের ছায়া: নিজেদের অসতর্কতার কারণে গ্রাম-বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ‘ডাহুক’ পাখি।
“ডাহুক” নামটি অনেক সুন্দর হওয়ায় পল্লী কবি জসিম উদ্দিনসহ অসংখ্য লেখকের গান, গল্প, কবিতা ও নাটকে বহুবার উঠে এসেছে এই পাখির নামটি।
নিসর্গের কবি জীবনানন্দ লিখেছেন,
"মালঞ্চে পুষ্পিতা অবনতামুখী
নিদাঘের রৌদ্রতাপে একা সে ডাহুকী
বিজন তরুণ শাখে ডাকে ধীরে ধীরে
বনচ্ছায়া-অন্তরালে তরল তিমিরে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এই পাখির নামে নিরবধি বয়ে চলেছে ডাহুক নদী। কিন্তু গামের পুকুর, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় জলাভূমি ও নদীরকাছে ঝোপে-ঝাড়ে থাকা এই পাখিটি এখন দিনে দিনেই হারিয়ে যাচ্ছে।
মনের কথা: এবার শীতকালীন অবকাশের ছুটি কাটাতে বাড়িতে গেছিলাম। দুপুর বেলা উঠানের মাঝখানে চেয়ারে হেলান দিয়ে সূর্যের তা নিচ্ছি। এমন সময় ছোট ভাতিজি এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আগে যেখানটায় আমাদের পুকুর/জলাশয় ছিল(সেখানে এখন বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে)। আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গেলাম এবং বললাম কি হয়েছে। সে বলল, ধরে দিতে হবে! আমি বললাম কি? উত্তরে জানাল কালো মুরগের ছ্যাও (মুরগের বাচ্ছা)।মনে মনে ভাবলাম এ আবার কেমন আবদার। পোলাপাইন চকলেট, জুস, চিপস খাওয়ার বায়না ধরে তাই বলে মুরগের বাচ্ছা ধরে দিতে হবে। আমি কিছু ক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। পরে সে আমাকে হাতের ইশিরায় দেখিয়ে দিল। আমি সেখানে তাকিয়ে দেখি গাছের উপরে কতগুলো কাক ডাকা ডাকি করছে। মনে খটকা লাগল। ছোট বেলার অভিজ্ঞতার আলোকে বুঝলাম মুরগির বাচ্ছা ধরার জন্য কাকের এমন করে থাকে। সামনে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি বাঁশ ঝাড়ে একটি মা ডাহুক কান খাড়া করে গাছের শিকড়ের আড়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। আমারে দেখে তার অস্বস্তিবোধ ও উত্তেজনা বেড়ে গেছে। আমি শিকড়ের নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ডাহুক ছানা এমনভাবে মাটির গর্তের ভিতর গাছের শিকড়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে কাকেরা চাইলেও তার নাগালপাবে না। এই ডাহুকের আদি পুরুষেরা অনেক আগে থেকেই আমাদের হ্যাজা-মাজা পুকুরে বংশ বিস্তারে করে চলেছে।(আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন তার আদি পুরুষের ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙত। সারা বছর চুপচাপ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে কুক্ কুক্ ডাকা-ডাকিতে পরিবেশের চারপাশ মুখরিত করে তুলত। ওদের গলার স্বর বেশ চড়া। ডাহুকরা বেশি ডাকতো বাসা বেঁধে ডিম পাড়ার জন্য। রাতভর একটানা ডাকতো। মনে হতো ওরা হয়তো দুঃখে বিলাপ করছে। । এখন পুকুরটি ভরাট করার কারণে তার অস্তিত্ব বিপর্ণ হতে চলেছে। হয়ত তাদের পূর্ব পুরুষের আবাস্থল হারিয়ে ফেলে এখন কোন রকম জীবন বাচার সংগ্রাম করেছে।) আমি এগিয়ে গিয়ে কাকের দিকে তাকালাম এবং তাদের কে দূরে সরিয়ে দিলাম। তারপর ভিতর থেকে টেনে বের করে আনলাম। এতে ছোট ভাতিজির কিযে আনন্দ, বলল চাচ্চু দেন। আমি তার হাতে কিছুক্ষণ দিয়ে তারপর হাতের কাছে এনে আবার বাঁশঝাড়ে ছেড়ে দিলাম।
এতে মা ডাহুক পাখিটি ‘কোয়াক’ কোয়াক ডাক দিয়ে আমার প্রতি কৃতজ্ঞ জানাল।
পরিচিতি:https://bn.wikipedia.org/s/2pwp ঘেটে দেখলাম ডাহুকের ইংরেজি নাম White Breasted Waterhen এবং বৈজ্ঞানিক নাম Amaurornis phoenicurus। ধলাবুক ডাহুক ও পান-পায়রা নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। এরা প্রচণ্ড লড়াকু ধরনের পাখি।
ডাহুক আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এরা প্রচণ্ড গতিতে ছুটতে পারে। দৈর্ঘ্য ৩২ সেমি. ও ওজন ১৯০ গ্রাম। এদের পিঠের দিক কালচে ও দেহের নিচের দিক সাদা। পুরো ঠোঁট হলদে সবুজ হলেও এর উপরের অংশ লাল।তাকে। ডাহুকের লেজছোট, লেজের নিচের অংশ লালচে আভাসমৃদ্ধ। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরী-কালো, মাথা ও বুক সাদা। পা লম্বা। ঠোঁট হলুদ, ঠোঁটের উপরে লাল রঙের একটি ছোট দাগ আছে। দেহ কালচে। মুখমণ্ডল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা।
খাদ্য: খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গ। অর্থাৎ শাপলা-পদ্ম ফুলের নরম অংশ, কচি পানিফল, জলজ শেওলা, লতাগুল্মের নরম অংশ, ধান, কাউন, ডাল, সর্ষে, শামুক, কেঁচো, জোঁক, মাছ, ছোট মাছ প্রভৃতি।
সংসার:পৃথিবীর বুকে অনেক প্রাণীর মতো ডাহুকও বর্ষা মৌসুমেই ভালোবাসার সঙ্গীকে খুঁজে বেড়ায়। সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ডাহুকের বিরামহীম ডাকে। এতে স্ত্রী ডাহুক আকর্ষণ বোধ করে একসঙ্গে থাকার সন্ধি করে এবং সংসার পাতে। আর নিজের জীবন সঙ্গীকে নিয়ে অন্য জলচর পাখির মতো ডাহুকও তার ভালোবাসার সঙ্গী নিয়ে ছুটে বেড়ায় এদিক-ওদিক। তখন নির্জন জলজ প্রান্তর ভরে ওঠে ভালোবাসামুখর।মাটিতে ঝোপের তলায় এরা বাসা বাধে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। ৬/৭ টি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপী মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকী উভয়েই ডিমে তা দেয়।ডিম পাড়ে ছয়টি থেকে সাতটি। একুশ থেকে চব্বিশ দিন পর ছানা বের হয়। ছানাগুলো হয় কুচকুচে কালো বর্ণের।
তবে প্রজননের সময় একটি পুরুষ ডাহুক অন্য একটি পুরুষ ডাহুককে সহ্য করতে পারে না। দেখলেই লড়াই বাঁধিয়ে দেয়।
বর্ষা মৌসুমে গোসাইরহাটের খালে-বিলে, ঝোপঝাড়ে ডাহুকের দৌড়ঝাঁপ দেখে বহুদিন আমি মুগ্ধ হয়েছি।
সমসাময়িক অবস্থা: সারাদেশের প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো বেদখল হচ্ছে ধীরে ধীরে। প্রাকৃতিক হাওর-বিলগুলোর এই দখলবাজি প্রতিবেশ ও প্রাণিবৈচিত্র্যকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জলাভূমি ঘিরে বেড়ে ওঠা জলজ উদ্ভিদসহ ঝোঁপ-ঝাড়গুলো। অধিকাংশ জলাভূমিতে এখন চলছে মাছের খামার করার প্রাকৃতিক পরিবেশধ্বংসকারী প্রতিযোগিতা।
এক সময় বুনো ডাহুকও ছিল অনেক। এর প্রধান কারণ তাদের বিচরণভূমি ও আবাসস্থল ধ্বংস। ওরা যে গোপন জায়গায় বাসা বাঁধবে এমন গোপন জায়গা অর্থাৎ ঝোঁপঝাড় এখন আর নেই। এদের খাবার সংকট না থাকলেও মারাত্মক নিরাপত্তার সংকট রয়েছে। এরা যে নিরিবিলি থাকবে সে অবস্থা আর নেই!
পদক্ষেপ: আমাদের সমাজ থেকে যাতে কোনভাবেই বন্য পশু-পাখি হারিয়ে না যায়, সেদিকে সকলের প্রতি দৃষ্টি রাখার জন্য আহবান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।ডাহুক সহ অন্যন্য নিরীহ প্রাণীরা যাতে অবাধে বংশ বিস্তার করতে পারে সেজন্য আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২০
৪০টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×