আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্র একটি সর্বজন স্বীকৃত শাসন ব্যবস্থা। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশেই বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। গণতন্ত্র মানে হল জনগণের শাসন ব্যবস্থা। আব্রাহাম লিংকনের দেয়া গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আমরা সকলেই জানি। সেখানে তিনি বলেছেন " Democracy is the Government of the people, for the people & by the people".
আর এটি তখনই সফল হবে যখন জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন কার্যক্রমের মধ্যে জনমতের প্রতিফলন ঘটে।
কিন্তু এটি যদি এমন হয় যে আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রে সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় য "Democracy is the Government "off" the people "far" the people & "bye" the people". তাহলে এখানে কোন জনমতের প্রতিফলনতো থাকবেই না বরং তৈরী সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র, সৃষ্টি হবে রাজা-প্রজার সম্পর্ক।
কিন্তু আমরা যদি গণতন্ত্রের সফলতার কথা চিন্তা করি তাহলে বিশ্লেষণ করতে হবে অন্যভাবে। গণতন্ত্রের সফলতার জন্য প্রয়োজন একদিকে যেমন Equality, পাশাপাশি প্রয়োজন Liberty।
Equality মানে হল "সমতা"। অর্থাৎ গণতন্ত্র তখনই সফলতার পথে এগিয়ে যাবে যখন একটি দেশে অবস্থানরত সকল মানুষের মধ্যে সমতা রক্ষা হয়।
অন্যদিকে Liberty মানে হল "স্বাধীনতা"। অর্থাৎ এরূপ শাসন ব্যবস্থায় দেশের সকল জনগণের দেশের আইন মেনে চলে সকল ধরনের স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে।
এবার আসা যাক আমদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথায়। আমরা দেখি আমাদের দেশের স্বাধীনতার এই ৩৮ বছরে অনেক বার সামরিক বাহিনী কর্তৃক ক্ষমতা দখল হয়েছে। এর মূল কারণ হলে আমাদের দেশের নিম্নমানের রাজনৈতকি সংস্কৃতি। যে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যত বেশি নিম্ন মানের হয় থাকে সেখানে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা ততবেশী থাকে। পাশাপাশি এখানে আরো কিছু বিষয় কাজ করে যেমন কোন শক্তিশালি রাজনৈতিক দল না থাকা, রাজনৈতিক দল থাকলেও তাদের মধ্যে আন্ত:কোন্দল, দল গুলো ভিতরে আন্ত:কোন্দল, বিদেশী শক্তির মদদ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের সচেতন জনগণ কখনো কোন জবরদস্তিমূলক শাসনব্যবস্থাকে মেনে নেয়নি। তারা প্রতিবাদ করেছে এই সকল সামরিক বাহিনীর অবৈধ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে এদশের মানুষ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসে। আমারা ১৯৯১ সালে একটি নির্বাচন পাই । কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়ায় আমাদের নিম্ন মানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রথম নির্বাচনে বিরোধী দল অভিযোগ করে নির্বাচেন সুহ্ম কারচুপি হয়েছে। এর ধারাবহিকতায় ১৯৯৬, ২০০১ এবং সর্বশেষ ২০০৮-এর নবম জাতীয সংসদ নির্বাচেনও আমরা দেখি যে দল নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে তারা অভিযোগ করেছে যে নির্বাচনে কারচুচি হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে সুহ্ম আবার কখনো বলা হয়েছে স্থুল। আর এবার নতুন শব্দ যোগ হয়েছে "ডিজিটাল কারচুপি"।
এগুলো দেখে মনে তারা যেন নিশ্চিত জয় জেনেই নির্বাচন করতে আসেন। পরাজয়কে তারা মেনে নিতে পারেন না। এর কারণ হল তাদের ক্ষমতাপ্রীতি। নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে তারা দেশের জনগণের সেবার পরিবর্তে দূনীতি, স্বজনপ্রীতি, দেশীয় কোষাগার খালি করা, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি কিছু। ফলে নির্বাচনে যদি তারা পরাজিত হয় এগুলো করার আর সুযোগ থাকে না। আর এখানেই তাদের পরাজয় মেনে নিতে কুণ্ঠা হয়।
একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো প্রধান বাধা হয়ে দাড়ায়। কেননা বিরোধী দল তখন সংসদ বর্জন করে থাকে তখন সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকারি দলের কাজের জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার কোন কার্যকর ব্যবস্থা সৃষ্টি হয় না। সংসদীয যে কমিটিগুলো থাকে সেগুলোও অকার্যকর হয়ে যায়। এদিক থেকে বলা যায় সংসদ সরকারি দলের অফিসে রূপ নেয়।
এক্ষেত্রে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন নির্বাচনে ফলাফলকে মেনে নিয়ে নির্বাচন দলকে স্বাগতম জানিয়ে সংসদে যোগাদান করা। পরস্পরের উদ্দেশ্যে কাদা ছোড়াছোড়ী না করে একে অপরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেশ গঠনে এগিয়ে আসা। এক্ষেত্রে আমরা দুটি উদাহরণ দিতে পারি একটি পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের মহাজোটের বিজয়ী প্রার্থী দিপংকর তালুকদারকে দেয়া চারদলীয় জোট প্রার্থী মৈত্রী চাকমা ফুলেল শুভেচ্ছ, এবং কুমিল্লার সদর আসনে নির্বাচিত মহাজোট প্রার্থী বাহারকে চারদলীয় জোট প্রার্থী হাজী ইয়াছিন ফুলের শুভেচ্ছ। এটি সারা দেশের সকল প্রাথীদের করা উচিত দেশের স্বাথে জনগণের স্বার্থে। তবে এটি শুধু মাত্র ফলের শুভেচ্ছার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, প্রয়োজন সকল ক্ষেত্রে একে আপরের সহযোহিতায় এগিয়ে আসা। এক্ষেত্রে বিরোধী দলকে ছায়া সরকারের ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমন অর্থমন্ত্রীর বিপরীতে বিরোধী দলের একজন থাকবেন যিনি অর্থমন্ত্রীর কার্যক্রমের যৌক্তিক সমালোচনা করে তার কাজকে গতিশীল করবে। এভাবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিরোধী দলের একেক জনকে ভূমিকা রাখতে হবে। তহালে আমাদের দেশের জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারে বর্তমান নির্বাচিত সরকার।
নির্বাচনে পরাজিত হলে বিএনপি সহ চারদলীয় জোট দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই আমরা আশা করবো বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ সহ মহাজোট অভনন্দন জানিয়ে সরকারকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এগিয়ে আসবেন। আর এটাই এখন এদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




