নবী মোহাম্মদকে বলা হয় বিশ্ব নবী এবং দাবী করা হয় আল-কোরান সমগ্র মানবজাতির জন্য নাযিলকৃত দিক নির্দেশনামূলক ধর্মীয় গ্রন্থ!! তবে এমন দাবী করা হলেও এর যৌক্তিক ভিত্তি যথেষ্ট দুর্বল! এবং তাদের এই দাবী ও বিশ্বাস যে অনেকটাই অমূলক ভ্রান্ত সেটা প্রমাণ করতে আলাদা কোনো যুক্তি তথ্যর আমদানি করতে হয় না বরং স্বয়ং কোরান থেকেই প্রমাণ করে দেয়া যায় যে, কোরান শুধুমাত্র নির্দিষ্ট আরব জাতীর জন্যই নাজিল হয়েছে!! এবং নবী মোহাম্মদ নির্দিষ্ট আরব অঞ্চলেরই নবী, সমগ্র মানবজাতির জন্য নয়!!
এবিষয়ে কোরানের কিছু সূরা থেকে কয়েকটি আয়াত পেশ করছি।
আর-রাদ- ১৩.৩০: এমনিভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন *এক জাতির নিকট,* যার পূর্বে অনেক জাতি গত হয়েছে, যেন আমি তোমার প্রতি যে ওহী প্রেরণ করেছি, তা তাদের নিকট তিলাওয়াত কর। অথচ তারা রহমানকে অস্বীকার করে। বল, ‘তিনি আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই দিকে আমার প্রত্যাবর্তন’।
সুরা সাজদা ৩২:৩: তারা কি বলে, এটা সে মিথ্যা রচনা করেছে? বরং এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে সত্য, যাতে আপনি এমন *এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন,* যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। সম্ভবতঃ এরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।
ইয়াসীন: ৩৬.৫ (এ কুরআন) মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়াময় (আল্লাহ) কর্তৃক নাযিলকৃত।
৩৬.৬ যাতে তুমি এমন এক কওমকে (জাতিকে) সতর্ক কর, যাদের পিতৃপুরুষদেরকে সতর্ক
করা হয়নি, কাজেই তারা উদাসীন।
লক্ষ্য করুণ এখানে স্বয়ং আল্লাহ্ নবীর উদ্দেশ্যে স্পষ্ট করে বলছে যে তাকে পাঠানো হয়েছে "এক জাতির" বা সম্প্রদায়ের নিকট যাদের কাছে পূর্বে কোনো সতর্ককারী বা নবী আসে নাই এবং কোরান নাজিল হয়েছে যাতে নবী "এক কওম (জাতি) বা সম্প্রদায়কে" সতর্ক করতে পারে!!
উপরুক্ত আয়াত গুলায় এত স্পষ্ট করে বলার পড়েও এর বিরুদ্ধে তেনা পেঁচানোটা অবশ্যই কোরান পরিপন্থী হবে!!
এছাড়াও কোরান পরকাল সম্বন্ধে জান্নাত ও জাহান্নামের যে ধারণা দেয় তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে একটি নির্দিষ্ট আরবিয় জাতিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে! এবং তাদের জাতিগত রুচি, চাহিদা, আশা, আকাঙ্ক্ষা, লোভ, ভয়ের প্রতিফলন ঘটেছে!!
যেমন কোরানে অসংখ্য সূরায় জান্নাতের বর্ণনায় অসংখ্যবার বলা হয়েছে জান্নাতের পাদদেশে নদী প্রবাহিত হয়েছে!! এবং সেখানে থাকবে আরামদায়ক মেঘ ও গাছের শীতল ছায়া!! নদী, মেঘ ও গাছের শীতল ছায়া এসবই আরবের রুক্ষ প্রখর রৌদ্র উত্তপ্ত মরুভূমি অঞ্চলের মানুষদের কাছে অতি আকাঙ্ক্ষার জিনিস!! এবং বেহেস্তি যত ফলমূলের নাম কোরানে পাওয়া যায় সবগুলাই সেই আরবিয় মরুভূমি অঞ্চলেরই!! ভারতীয় উপমহাদেশের কোনো ফলমূলের নাম গন্ধ নাই!! শুধুমাত্র ফলমূলই নয় বরং কোরানে যত উদহারণ উপমা পাওয়া যায় সবই আরবিয় অঞ্চল থেকেই নেয়া যেমন জাহান্নামীরা উত্তপ্ত পানি পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়!! (সূরা সুরা ওয়াক্বিয়া-৫৫!!), বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট রেখে আল্লাহ্ কসম করছে সিনাই’ পর্বতের (৯৫.২)!! এবং "যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে।"!! (সূরা নুর, আয়াত-৩৯,)
দেখা যাচ্ছে উপমা, উদহারণ দেয়ার বা বুঝানোর ক্ষেত্রে আল্লাহ্ দুনিয়ায় আর কিছু খুঁজে পান নাই!! নির্দিষ্ট অঞ্চল ও পরিবেশেই আটকে ছিলেন!! দোযখের কোথায়ও হাড় কাঁপানো তীব্র হিম-শীতল কোনো শাস্তির উল্লেখ পাওয়া যায় না!! আর সবচেয়ে বড় কথা কোরান নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়! এক্ষেত্রে সূরা ৪৩ এর ২নং আয়াতে আল্লাহ্ নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন " আমি একে আরবি ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা (নবী ও আরবি ভাষাভাষীর লোকজন) বুঝতে পার!!
এর পড়েও যারা বিশ্বাস করে নবী মোহাম্মদ ও আল-কোরান সমগ্র বিশ্বের মানবজাতির জন্যই এসেছে তারা অবশ্যই মোহগ্রস্ত অবস্থায় আছে!! তবে কোরানে বেশ কিছু আয়াত আছে যে গুলা "হে মানব সম্প্রদায়" "মানব মণ্ডলী" এমনভাবে বলা! এবং মনে হয় যে সমগ্র মানবজাতির জন্যই বলা হয়েছে! এক্ষেত্রে এগুলার সাথে উপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহ স্পষ্ট স্ববিরোধী!! আর প্রমাণ হিসাবেও এখানের উল্লেখিত আয়ত গুলার বক্তব্য ঐ সমস্ত আয়াত থেকে অনেক স্পষ্ট!!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪১