আমাদের সবার প্রিয় একজন মানুষ। আমার মায়ের কাছে শোন ভাইয়া খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করে এই পর্যন্ত পৌছেছিলেন। আমি ভাইয়াকে বেশ ভয় পেতাম। কিন্তু ভাইয়া আমাদের খুব আদর করতেন।
আমার বয়স যখন ১০/১২ তখন ঢাকা থেকে ভাইয়া আমার জন্য একটা লাল রং-এর জ্যাকেট এনে দিয়েছিল। আমি জ্যাকেটটি অনেক দিন ব্যবহার করেছি। জ্যাকেট -টির কথা এখন আমার খুব মনে পড়ে। কারন ভাইয়া আজ আর আমাদের মাঝে নেই। সে আমাদের ছেড়ে অ-নে-ক অ-নে-ক দুরে। আমারা ইচ্ছা করলেই আর ভাইয়ার কাছে যেতে পারিনা।
২০০৫ সালের ২৯ শে জানুয়ারী ততকালিন বিরোধী দল আওয়ামীলিগের ডাকে হরতালের দিন ভাইয়া তার কল্যানপুর বাসা থেকে সচিবালয়ে রিক্সা যেগে যাওয়ার পথে তার বাসার ১০০০ গজ দুরে কল্যানপুর বাস ষ্ট্যন্ডের কাছে একটি দ্রুতগামী বাস এসে ভাইয়ার রিক্সার পিছনে ধাক্কা দেয়। ভাইয়া রিক্সা থেকে মাটিতে পড়ে য়ায় এবং সে মাথায় আঘাত পায়। স্হানীয় লোক জন হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই ভাইয়া মারা যায়।
আমি প্রায় ৩ ঘন্টা পর আমার অন্য এক ভাইয়া আমাকে বলে যে, বাবলু ভাইয়া মারা গেছে। যখন ঘটনাটি শুনি আমি বিশ্বাস-ই করতে পারিনি। আজও বিশ্বাস হয় না যে, ভাইয়া মারা গেছে।
ভাইয়ার ২টি মেয়ে ও ১টি ছেলে। ছেলের নাম রোহান। মেয়ে দুটির নাম বাঁধন ও রশ্মী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে ভাইয়ার লাশ নিয়ে এম্বুলেন্সে করে আমাদের গ্রামের বাড়ী বগুড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভাইয়ার লাশের গাড়ীতে আমি ও ভাইয়ার দুই শ্যালক সুমন ও মিলন ভাইয়া ছিল। ভাইয়ার লাশ যখন গ্রামের বাড়ী পৌছার পরের প্রায় ১ ঘন্টায় গ্রামে কি হয়েছে আমি বলতে পারি না। প্রায় ১ ঘন্টা পর বুঝতে পারি আমি বিছানার মধ্যে শুয়ে আছি।
এরপর বাবলু ভাইয়ার বড় মেয়ে বাঁধন আমাকে শান্তনা দেয় যে কাকু তুমি এমন করছো কেন । দেখ আমি তো কাঁদছি না, তাহলে তুমি কেন কাঁদছো।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আজ আমরা এতটাই ব্যস্ত যে ভাইয়ার পরিবারের কোন খবর নিতে পারি না। ভাইয়ার অকাল মৃত্যুতে ততকালীন প্রধানমন্ত্রী ভাবীকে একটি সরকারী চকুরীর ব্যবস্থা করে দেন এবং কিছু টাকা অনুদান দেন। এখন সেইটা দিয়েই চলছে আমার প্রিয় মানুষের সংসার।
আর এভাবেই জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় আমার প্রিয় একজন মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




