somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট-ছোট ঘর! (১)

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক সময় গ্রাম-গঞ্জে তুলনামূলক অনেক বড় বড় অপরাধ সংগঠিত হয়ে গেলেও সেই তুলনায় শাস্তি খুব একটা হয়না। তার কারণ সম্ভবত অশিক্ষিত-চালবাজ সর্দার শ্রেনীর ব্যক্তিবর্গের গ্রাম্য-রাজনীতি। প্রত্যেক গ্রামেই আদালতের আদলে বিচার-সভার প্রচলন আছে। সেই বিচার সভা নিয়ন্ত্রন করে গ্রামের মাতবর শ্রেনীর প্রতিনিধিরা। তাদের মধ্যে কেউ-কেউ স্থানীয় ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কেউ-কেউ সাধারণ মানুষ থেকে উঠে আসা চতুর প্রকৃতির মানুষ।
গ্রামীণ সমাজে জাত-গোষ্ঠি, ধনি-গরিব, দুর্বল-সবলের বৈষম্য প্রবল থাকার ফলে সেখানকার বিচার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই স্বচ্ছ হয়না। স্বজন-প্রীতি, ঘুষ গ্রহণ করে প্রায়ই বিচারের রায় পাল্টে ফেলা হয়।
ধর্ষণের মত প্রধান একটি অপরাধকে আজও গ্রামের বিচারসভায় ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়না। অপরাধীর কাছ থেকে সামান্য কিছু অর্থ জরিমানা আদায় করেই সেই বিচার নিষ্পত্তি করে ফেলা হয়। সেই সামান্য অর্থও অনেক সময় ধর্ষিতার পরিবার পায়না। জরিমানার সেই অর্থ বেশ কয়েকটি ভাগ হয়ে খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্থরা পায়।
একটা গল্পঃ আমাদের গ্রামের এক কিশোরী মেয়ে তাদেরই পাড়ার একটি পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। এই খবর জানাজানি হলে মান-সম্মান সব ধূলোয় মিশে যাবে এই চিন্তায় মেয়ের পরিবার কোন ঝামেলায় না গিয়ে ধর্ষকের পরিবারের কাছে ধর্ষিতার বিয়ের প্রস্তাব দিল। ছেলে যেহেতু অপরাধী সেহেতু তারাও রাজি হল। কিন্তু, সন্ধ্যা পাড় হতে না হতেই ধর্ষকের পরিবার তাদের মত পাল্টে ফেলল। কারণ কী?
তারা কোন কারণ দেখাতে পারছেনা। ধর্ষিতার অসহায় পরিবারের কোন কাকতি-মিনতিই তারা শুনতে রাজি না। অবশেষে ধর্ষিতার পরিবার বাধ্য হয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে সু-বিচার চাইল। তথাকথিত গণ্যমান্যরাও সু-বিচার করে দেবার আশা দিয়ে ধর্ষিতার পরিবারকে আশ্বস্ত করল।
"সু-বিচার করে দিব। আমাদের কিছু খরচ লাগবে। খরচ ছাড়া আমরা কেন কষ্ট করতে যাব।"
সেই খরচের পরিমানও বিশাল। লক্ষ টাকা! উপায়ান্তর না দেখে ধর্ষিতার পরিবার এতে রাজি হল। কলঙ্কের দাগ মুছতে টাকা পয়সা কিছু খরচ হলে হবে। তাছাড়া উপায়তো নাই।
যথা সময়ে সালিশ বসল। উভয় পক্ষের সর্দারগণ উপস্থিত। যুক্তি পাল্টা যুক্তি চলছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেনা। গ্রামের মানুষও বিচার দেখতে এসেছে। গ্রামের প্রায় সকল মানুষই মনে মনে ধর্ষকের শাস্তি চায়। ধর্ষিতার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ও সহানুভতি।
হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে গেল। বিচারকদের মধ্য থেকে একজন চতুর ধান্দাবাজ লোকের একটা কথায়। সে বলল "আপনাদের সবার কথা শুনলাম। ছেলে যে অপরাধী তাও বুঝলাম। কিন্তু আমার একটা কথা আছে। মনে করেন আমার হাতে একটা সুই আছে। আপনি সেই সুইয়ে সূতা পড়াবেন। এখন আমি যদি আমার হাতটা নাড়তে থাকি তাহলে আপনি কিভাবে সূতাটা পড়াবেন?"
সবাই নিরব। যেই গ্রামবাসি এতক্ষণ ধর্ষককে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে ছিল তারাও এখন নড়ে-চড়ে বসেছে। ফিসফিস করে একজন অন্যজনকে বলছে "ছিঃ কি কলঙ্কিনী মেয়ে!"
বিচার শেষ। রায় দেওয়ার পালা। যদিও ধর্ষকের দোষ একার না, যেহেতু ধর্ষকের কারণে মেয়ের একটা দুর্নাম রটে গেছে সেই জন্য ধর্ষক মেয়ের ক্ষতিপূরণ হিসাবে এক লক্ষ টাকা দিয়ে দেবে!
সঙ্গে-সঙ্গেই সর্দারদের হাতে এক লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ধর্ষক বীরের বেশে বিচারের মঞ্চ থেকে বের হয়ে এল।
আর এদিকে সর্দারগণ মেয়ের বাপের হাতে সেই টাকা তুলে দিয়ে বলল "দেখছ তুমারে কেমনে জিতাই দিলাম! এবার আমাদের পাওনা টাকা দিয়ে দাও।"
অসহায়-বিপর্যস্ত বাবা সেই টাকাগুলোই বিচারকদের হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষিতাকে নিয়ে মাথা নিচু করে ঘরে ফিরে গেল। গ্রামবাসীও যে যার কাজে চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই জেনে গেল অমুকের মেয়ে অসতী-নষ্টা-কলঙ্কিনী

(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×