somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একথোকা কৃষ্ণচূড়ার উল্কাপতন / আ তা তু র্ক কা মা ল পা শা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একথোকা কৃষ্ণচূড়ার উল্কাপতন
আ তা তু র্ক কা মা ল পা শা
--------------------------------
কুড়ি জন তরুণ কবির ছয়টি করে কবিতা নিয়ে এই ‘তৃতীয় বাংলার কবি ও কবিতা’র আয়োজন। কবিরা হচ্ছেন- আতাউর রহমান মিলাদ, আনোয়ারুল ইসলাম অভি, আবদুল কাইয়ুম, আবু মকসুদ, আহমদ ময়েজ, ইকবাল হোসেন বুলবুল, ওয়ালি মাহমুদ, কাজল রশীদ, খাতুনে জান্নাত, তাবাসসুম ফেরদৌস, ফারুক আহমেদ রনি, মাসুদা ভাট্টি, মিল্টন রহমান, মুজিব ইরম, মুজিব রহমান, রেজওয়ান মারুফ, শাহ শামীম আহমেদ, শাহনাজ সুলতানা, সৈয়দ আফসার, সৈয়দ রুম্মান।
তৃতীয় বাংলার কবি বলতে এখানে প্রবাসে বিভিন্ন সংগঠিত বাঙালির সংস্কৃতিচর্চার প্রয়াসকে বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশকে প্রথম, পশ্চিমবঙ্গকে দ্বিতীয় এবং প্রবাসীদের তারা তৃতীয় বাংলার কবি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কুড়ি জন কবির মধ্যে সতের জনেরই সিলেটে জন্ম। তাবাসসুম ফেরদৌসের জন্ম বগুড়া জেলায়, মাসুদা ভাট্টির জন্ম ফরিদপুরে, মিল্টন রহমানের চট্টগ্রামে। এ বইয়ের প্রায় সব কবিরই নিজস্ব কাব্যগ্রন্থ ও অন্যান্য বইও প্রকাশ হয়েছে।
তবুও প্রবাসের এ কুড়ি জন কবি একসূত্রে গাঁথা হতে পেরেছেন তাদের নিজস্ব পেলব কবিতা-কলিতে। আতাউর রহমান মিলাদ লিখেছেন গদ্যের আদলে ছয়টি কবিতা। প্রতিটি কবিতাই বিষন্নতায় নিমগ্ন হলেও একজন কবির কবিতায় প্রাথমিক রূপকল্প ও নৈবেদ্য থাকা জরুরি তা আতাউর রহমান মিলাদ আত্মস্থ করতে পেরেছেন।
‘তৃতীয় বাংলার কবি ও কবিতা’ বইটির প্রকাশক কাজল রশীদের লেখা জলের শিকড়ে, নীলাঞ্জনার নীল স্বপ্ন, পুরীষভাঙার নদী, পাখির মেলায়, ব্রাকেটে বন্দি গাছ, লাজ প্রভৃতি নামের ছোট আকারের কবিতাগুলো গ্রন্থনে, শব্দ প্রয়োগে, কাব্যময়তায় বেশ কাব্যিক হয়ে ওঠে বৈকি।
খাতুনে জান্নাত কবিতাচর্চায় মনোযোগী বলে মনে হয়, অন্তত এ সংকলনের কবিতাগুলো পড়লে। তবে এ সংহিতার অন্যান্য কবিদের মতো তার কবিতাগুলোয়ও ভাষাগত দুর্বলতা ও শব্দের ভ্রান্ত প্রয়োগ দেখা যায় বেশ। তিনি ‘কাঁপন’ নামে সম্ভবত একটি সনেট লিখতে চেষ্টা করেছেন, যার শেষ দুটি চরণ হচ্ছে- ‘খাদ্যের অভাবে মা’র তিলে তিলে শুকায় গতর/কামের তাড়নে মাতা নুয়ে পড়ে, প্রেমেতে কাতর।’ এখানে দ্বিমাতৃক বক্তব্যে সনেটের পরিচয় অপরিচিত হয়ে যায়।
ফারুক আহমেদ রনি লিখেছেন বিদ্রোহ, অলৌকিক ভ্রম, মাধবী তোমার জন্য, ব্যবচ্ছেদ, অযান্ত্রিক, অবাস্তব। তার কবিতাগুলোয় বহুমাতৃক চিন্তাচেতনা আছে, তবে তা আরও চর্চা করে সাবলীল করে নেয়া প্রয়োজন।
মাসুদা ভাট্টি লিখেছেন ‘একথোকা রাত্রির জন্য’ শিরোনামে ছয়টি স্তবক। গদ্যের আকারে লেখা সব। মূলত সব লেখায়ই নস্টালজিয়া প্রবহমান। তবে গদ্যের ঢঙে লেখা কবিতাগুলোর শব্দ নির্বাচন বেশ সাযুজ্য ও কাব্যিক। তবে আধুনিক কবিতা পড়ার প্রয়োজন আছে তার।
মিল্টন রহমান লিখেছেন ছটি কবিতা, যা মোটামুটি সুখপাঠ্য এবং একই সঙ্গে আধুনিক জীবন ও গ্রামের সবুজাভতা ধারণ করে। তবে কখনও কখনও গদ্যের ভাষা কবিতায় ঢুকে পড়েছে।
মুজিব ইরম তার নিজস্ব লোকজ ভাষায় সাং, নালিহুরী, পারিন্দা, সুরের দয়াল, শ্রীমালা, শ্রীরাই নগর, শ্রীচরিতামৃত লিখেছেন। কবিতাগুলো মূলত প্রাণের আবেগ ও আকুতি হয়ে উঠেছে।
মুজিব রহমানের কবিতাগুলোয় মানুষের অন্তর্লীন আবেগ, ধূসর অতীত, বর্তমানের দৈনন্দিন পাওয়া না-পাওয়ার কথা ভেসে ওঠে। তবে কবিতার নিজস্ব কিছু রচনাশৈলী থাকে। তা কখনও কখনও অনুপস্থিত দেখা যায় যেমন- ‘পটভূমি দাঁড়িয়ে আছে সম্মুখেতে/পারবে না স্মৃতিগুলো কেড়ে নিতে।’ (চিত্রপট-৬৭)। কখনও কখনও ভাষা এসে বিঘ্ন সৃষ্টি করে, যেমন- ‘বৃষ্টি ছড়ালো যন্ত্রণাকে জন্ম দিতে,/বৃষ্টি এসে নিশ্চিন্তে আমার ঘরে শোয়ে থাকে। (পৃ-৬৯)।
রেজওয়ানা মারুফের কবিতাগুলোয় কথা আছে, ভাব আছে, প্রকাশের আকুতি আছে প্রচুর। কিন্তু প্রকাশের আকুতিতে আরও সুশীল ও পরিচর্যার প্রয়োজন ছিল।
শাহ শামীম আহমেদের কবিতাগুলো বেশ সুখপাঠ্য। এখানে কবি যা বলতে চেয়েছেন, তা লিখতে পেরেছেন, প্রকাশ করতে পেরেছেন। ভাষা এবং প্রকাশের কোন বাগাড়ম্বর জটিলতায় তিনি ভোগেননি।
সৈয়দ রুম্মানের কবিতায় অজস্র শব্দসম্ভারের সন্তরণ বেশ আনন্দ দেয়। কিন্তু কবিতার কাব্যময়তা স্থানে স্থানে শ্লথ হয়ে পড়ে যেমন- ‘থেমে যেতে দেখে তার প্রাত্যহিক ধনাÍক হিশেবের খাতা’, ‘সুখ বিচরণে মহাআনন্দ সঙ্গীত তোলে গগন কাঁপায়” (পৃ-৮৬),। ‘কালপুরুষের রাতে দিয়েছে চিবুক ছুঁয়ে করপদ্মে জ্যোতির্ময় ষড়ৈশ্বর্য গুঁজে’ (পৃ-৮৭), ‘আও আও বলে তুমি হারিয়ে যাবার কালে’ (পৃ-৮৮) ইত্যাদি।
‘তৃতীয় বাংলার নির্বাচিত কবি ও কবিতা’ প্রকাশনার আকুতি আমাদের মুগ্ধ করে নিঃসন্দেহে। নতুন এ লিখিয়েদের শব্দভাণ্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রবাসে বসে যদি এত লোকজ শব্দ নিয়ে কোন প্রবাসী লেখক কবিতা লেখেন তাতে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। সঙ্গে বেশ আধুনিক শব্দ আর আধুনিক পরিবেশের চিত্রও প্রায়ই উঁকি দেয়। এ হিসাবে এ সংহিতার লেখকদের কবিতা-লিপ্সুতা আশার বন্যা আনে। তবে নতুন লিখিয়েদের কবিতা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। ভালো কবিদের কবিতা লেখার শৈলী, কবিতায় তারা কিভাবে বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগ করেন- এসব গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঠোদ্ধার করতে হবে। এর সঙ্গে অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, সরবৃত্তে কবিতা লেখার কিছুটা অভ্যাস করে নিলে ভালো হয়। পরে ছন্দ থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলেও অভ্যাসের কারণে কবিতার কাব্যময়তা ক্ষুণ্ন হবে না। রবীন্দ্রনাথ চাঁদকে কী রূপকল্পে ব্যবহার করেছেন, কাজী নজরুল ইসলাম কিভাবে ব্যবহার করেছেন, সুকান্ত কিভাবে কল্পনা করেছেন, বিষ্ণু দে এই চাঁদকে কী প্রতীকে ব্যবহার করেছেন, শামসুর রাহমান, রফিক আজাদ, আহমদ রফিক এই চাঁদকে নিয়ে কী রূপকল্পের সৃষ্টি করেন- এজাতীয় তুলনামূলক আলোচনা নিজেদের মধ্যে থাকা দরকার। নদীকে নিয়ে বিভিন্ন লেখক- তা সে টেনিসন, বায়রন, নেরুদা থেকে একালের ফারুক মাহমুদ- কিভাবে তাদের চিন্তা-চেতনাকে প্রলম্বিত করেন- এসব গভীরভাবে সন্দর্শন করা, একজন নিবেদিত কবির আত্মস্থ করা অবশ্য কর্তব্য। তাহলেই তৃতীয় বাংলার কাব্যচর্চীরা কোন এক সময়ে নতুন প্রজন্মের নান্দনিক পৃথিবীর হাল ধরতে পারবেন আশা করি।
তৃতীয় বাংলার নির্বাচিত কবি ও কবিতা ।। সম্পাদনা : আবু মকসুদ ।। প্রকাশক : কাজল রশীদ ।। প্রকাশনা : প্রবাস প্রকাশনী, ঢাকা ।। প্রচ্ছদ : নাজিব তারেক ।। মূল্য : ১০০ টাকা

দৈনিক যুগান্তর / ৩২ জানুয়ারি ২০১০

২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×