somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগের গণজারণের মঞ্চ, বর্তমান ও আগামীর স্বপ্ন

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগ একটি নাম, শপথের দিপ্ত উচ্চারণ, প্রদীপ্ত তরুণ, লাখ মানুষের ঢল, শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর প্রান্তর, প্রজন্ম চত্বর, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন, জয় বাংলা ধ্বণি, সকল অন্যায় আর অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবোধ আর ৭১ এর সকল যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবাদী অপরাধীদের বিচার এবং ফাঁসির দাবির নাম। শাহবাগ একটি ইতিহাস। সোনালী স্বপ্নের বাংলাদেশের নাম। গোটা জাতি আজ তাকিয়ে আছে শাহবাগের দিকে, তাদের আগামীর দিকে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে প্রজন্ম চত্তর বা শাহবাগ স্কয়ার নিয়ে, বাবা স্বপ্ন দেখছেন সন্তানের নিশ্চিত ভবিষ্যতের, কৃষক স্বপ্ন দেখছে সোনালী ফসল আর সমৃদ্ধ গৃহস্থালির, শ্রমিক দেখছে শ্রমের নায্য মজুরির, তুরণের স্বপ্ন নতুন দেশ গড়ার, নির্যাতিত দেখেছে ন্যায় বিচারের, গোটা বাংলাদেশটা স্বপ্ন দেখছে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবাদীদের বিচার এবং সবোর্চ্চ শাস্তি কার্যকর। তাইতো আমরা আজ শাহবাগে আর প্রজন্ম চত্তর মানেই বাংলাদেশ। শাহবাগের দাবি, বাংলাদেশের দাবি আজ সকল মানবতাবাদী অপরাধীদের ফাসিঁ। তুরণ প্রজন্মের শাহবাগের আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে গত ৫ তারিখে যখন ৭১ এর মানবতাবদী অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতি অপরাধ ট্রায়বুনাল ২ এর একটি রায়কে কেন্দ্র করে। অভিযুক্ত অপরাধী রাজাকার কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত হওয়ার পরও যখন ট্রায়বুনাল সবোর্চ্চ সাজা না দিয়ে জাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন যা সম্পূর্ণ রূপে অপ্রত্যাশিত ছিল এ জাতির কাছে। তাই তারা মানে এই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা তা প্রত্যাক্ষান করে শাহবাগ মোড়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ ও বিক্ষোভ প্রর্দশন করতে থাকে। এই ক্ষোভ শুধু গুটিকত অনলাইন ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যেই ছিল না ক্ষোভ ও হতাশা ছিল গোটা জাতির মুক্তিকামী সব শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে। তাইতো মুহুর্তের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে জনে জনে আর মানুষ আসতে থাকে শাহবাগের দিকে। শহরের সকল রাস্তা মিলে যায় শাহবাগের প্রজন্ম চত্তরে। ৫ তারিখে শাহবাগে যে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে তা আজ ১১ তারিখ (এখন দুপুর ৩টা) পর্যন্ত চলছে আর যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হচ্ছে ততক্ষণ বা ততদিন এই আন্দোলন চলবে এটা জনতার দাবি।
যে চেতনায় বাংলাদেশে আজ উজ্জিবীত, সোনালী স্বপ্নে বলিয়ান, মানবতাবাদী ও যুদ্ধাপরাধমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর সেই গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে আশার পাশাপাশি অপপ্রচারও কম হচ্ছে না। তাই সাবধান থাকতে হবে সকল প্রকার বিভেদ ও অপপ্রচার থেকে। এই গণজাগরণ মঞ্চ পরিচালনাকারী সূর্য সন্তানদের অনেক প্রজ্ঞা ও ধৈর্য়ের সাথে সামনে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। একটি দুটি বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলেই সকল অপপ্রচার রোধ করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রথম বিষয়টি হলো কেন এই আনন্দোলন? কার বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ? কি চায় এদেশের মানুষ?
প্রথমত এটি জনগণের ক্ষোভ, হতাশা, দু:খ বেদনা, আশা স্বপ্ন প্রকাশের গণমঞ্চ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জনগণের কিসের ক্ষোভ, কেন হতাশ আর স্বপ্ন ভঙ্গই বা কি? ঐতিহাসিক ভাবে এই বঙ্গের মানুষ বার বার স্বপ্ন দেখেছে আর আমাদের ব্যক্তিক, রাজনৈতিক, সামাজিক স্বার্থপরতা জনমানুষের আকাঙ্খা পূরণ করতে না পারার কারণে বার বার মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। মানূষ হয়েছে আশাহত, ব্যথিত, দু:খিত। মানুষের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেদনা থেকে, ক্ষোভ থেকেই মূলত এই গণজাগরণের সৃষ্টি। সর্বশেষ মানুষ আশায় বুক বেধেছে এটা ভেবে যে, এই মাটিতে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবাদীদের বিচার হবে আর বাংলাদেশ হেব কলঙ্ক মুক্ত। এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তাতে তার সবোর্চ্চ শাস্তি এ জাতি প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু প্রথম আসামীর বিরুদ্ধে যে রায় আদালত দিয়েছে তার থেকে গুরুতর অভিযোগ প্রমান হওয়ার পরও কেন আদালত সবোর্চ্চ শাস্তি না দিয়ে জাবজ্জীবন কারাদন্ড দিল সেটা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে কি আবার আশাহত হতে যাচ্ছে বাঙালিসহ এদেশের বেশিরভাগ মুক্তিকামী মানুষ? কি সেই অদৃশ্য কারণ, যার কারণে এমনটি হলো? এমন ধারণা জন্মের পিছনে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক এবং সমকালীন ঘটনা প্রবাহ মানুষের এই ধারণাকে আরো শক্তিশালী করেছে। মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রায়বুনাল গঠনের পর থেকেই জামাত- শিবির চক্র এর বিরোধিতা করে আসছে। সর্বশেষ যখন তাদের দলের অন্যতম নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার কেসেরে রায় ঘোষণার আগমুহুর্তে জামাত এবং শিবির প্রকাশ্যে বিদ্রহ ঘোষণা করলো এই বিচারের বিরুদ্ধে এমনকি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বসল। এমনতর পরিস্থিতিতে কাদের মোল্লার কেসের রায় হলো এবং যথারীতি এই রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হলো না। জনমনে যে হতাশা ছিল তা ক্ষোভে রূপ নিল। তৈরি হলো নতুন ইতিহাস। আর আজকের এই ইতিহাসকে কেন্দ্র করে মানূষ আশায় বুক বাধতে শুরু করেছে। সকল অন্যায় ও আপোষকামীতা ধুয়ে যাবে এই গণজোয়ারে।এটা জনগণের আন্দোলন, কোন রাজনৈতিক দলের না। এই গণ আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার নানা চেষ্টা হচ্ছে এবং হবে সেগুলো থেকে সজাগ থাকতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। এটা ঠিক যে এটি কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন না কিন্তু অবশ্যই রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি সচেতন গণমানুষের আন্দোলন। মানবতাবাদী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার আন্দোলন, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, জাতিকে কলঙ্ক মোচনের আন্দোলন, স্বামী হত্যার বিচারের আন্দোলন, ভাই হত্যার বিচারের আন্দোলন, বাবা হত্যার বিচারের আন্দোলন, মা-বোন ধর্ষনের বিচার নিশ্চিত করার আন্দোলন, এই আন্দোলন গণমানুষের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আন্দোলন। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের যা অর্জন:
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবাদী অপরাধীদের শাস্তি বাংলার মাটিতে হতেই হবে।
জনগণের আশা-আকাঙ্খা নিয়ে বাংলার মাটিতে আর কেউ কোন দিন ক্ষমতা ও স্বার্থের রাজনীতি করা চলবে না।
শুধু যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবাদী অপরাধ নয় যে কোন ধরণের অপরাধীদের জন্য সর্তক বার্তা এই যে অপরাধ করলে রক্ষা নেই। শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অত্ম শুদ্ধির প্রাথমিক সুযোগ এটা গতানুগতিক ক্ষমতা অস্বচ্ছ রাজণীতি করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
জনগণ রাজনীতি না করলেও রাজনীতি সচেতন।
জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কোন শক্তিই টিকে থাকতে পারেনা। জনগণই সকল শক্তির মূল তা শাহবাগ স্কয়ারের গণজাগরণ আরো একবার প্রমান করলো।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×