somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে মাত্র ৫ বছরে বাংলাদেশের যে কোন সরকার ২২ লক্ষ বস্তিবাসী'র জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)-এর তথ্যমতে বাংলাদেশে যতগুলো শহর আছে সেগুলোতে প্রায় ৯ কোটি ৩৬ লক্ষ ৭০ হাজার দরিদ্র মানুষ স্লাম বা বস্তিতে বসবাস করে। বিরাট বিরাট অট্টালিকার খুব কাছেই গড়ে উঠা এই বস্তিবাসীদের জীবন কেমন যায়? ঝড়-বৃষ্টি-বাদলা দিনে ঘরের টিনের ফাঁক গলে যখন মেঝেতে পানি পড়ে তখন সেই অট্টালিকার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়ে কি তারা? কখনো মনে হয় কি- ইস, এমনতরো কোন প্রাসাদপম বিল্ডিং-এর কোন বাসায় আমি যদি থাকতে পারতেম!

খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান- মানুষের তিনটি মৌলিক চাহিদা। বর্তমানে, শিক্ষা ও চিকিৎসাও এখন মৌলিক চাহিদার অন্তর্গত। তবে, প্রথম তিনটি সবার আগে। এই তিন চাহিদা'র মাঝে বাসস্থান অতি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, দেশের ৪০% মানুষের সঠিক আবাসন ব্যবস্থা খুবই নিম্ন মানের। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের ৬ কোটি ৮০ লক্ষ (৪০%) মানুষ দারিদ্র সীমা'র নিচে বাস করে। আর, অতি দরিদ্রতার জীবন পার করছে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ বাংলাদেশী।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্তিবাসীদের অবদানঃ

২০১৫ সালের সরকারী আদম সূমারী'র রিপোর্ট অনুযায়ী পুরো দেশ জুড়ে গড়ে উঠা ১৩ হাজার ৯৩৮টি বস্তিতে বসবাসকারীর সংখ্যা সাড়ে ২২ লক্ষ। যদিও এ,ডি,বি'ত তথ্যমতে তা অনেক বেশি। একটি বেসরকারী গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই বস্তিগুলোতে বসবাসকারীদের প্রত্যেকের গড় আয় দিনে ৭০-১৫০ টাকা, মাসে ২,১০০-৪,৫০০ টাকা। বছরে যা গিয়ে দাঁড়ায় ২৫,২০০ - ৫৪,০০০ টাকা। সেই হিসেবে, বাংলাদেশের মোট অর্থনীতিতে প্রতি বছরে বস্তিবাসীদের অবদান ৫,৬৭০ কোটি থেকে ১২,১৫০ কোটি টাকা!


বস্তিবাসীদের জীবনঃ

যেসব মানুষ বস্তিতে বসবাস করে তাদের আবাসন ব্যবস্থা মান-সম্মত নয়। যদিও থাকার জন্যে বস্তিবাসীদের প্রতি ১০০-১২০ বর্গ ফুটের জন্যে খরচ করতে হয় মাসে ১৫০০-২০০০ টাকা। প্রতি বর্গফুটের এই হিসেবে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত মানুষগুলোও একই হারে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকে। এই বস্তিগুলোতে টয়লেটগুলোর অবস্থা খুবই সঙ্গিন। বসবাসকারীদের ৭৩.৭৫% অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া, রান্নার ব্যবস্থাও খুবই অপ্রতুল। প্রতি ৮টি পরিবারের জন্যে রয়েছে ২টি ওভেন।

রান্না এবং টয়লেটের ক্ষেত্রে কষ্ট করতে হলেও বস্তিবাসীদের ৪৮%-এর ঘরে রয়েছে টেলিভিশন, ৭%-এর ঘরে আছে ফ্রিজ। এছাড়া ৮৪ শতাংশ বস্তিবাসীর ঘরে মোবাইলফোন রয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, দেশের বস্তিবাসীদের আয় কম থাকলেও ব্যয়ও ভালো ভালোই হয়ে থাকে। হয়তো মাস শেষ হলে পকেটে কোন টাকা থাকে না। কিন্তু, নিজেদের চাহিদা পূরণে পিছু পা নয় তারা।




একটি স্বপ্নঃ

পূর্বেই উল্লেখ করে হয়েছে যে, বস্তির অধিবাসীরা আবাসনের জন্যে ১৫০০-২০০০টাকা দিয়ে থাকেন। সেই ছোট্ট ঘরেই বসবাস করে একেকটি পরিবার। যদি সর্বোচ্চ ২০০০ টাকাকে ধরে নেওয়া যায় সেই ঘরগুলোর ভাড়া, তাহলে ৩০ বছরে একেকটি পরিবার ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ করে শুধু বাড়ি ভাড়ার পিছনে। অথচ, এই একই পরিমাণ টাকা এই মানুষগুলোর কাছ থেকে নিয়ে তাদেরকে একটি ৬০০ বর্গফুটের বাসা করে দিতে পারে সরকার যাতে ৫ জনের একটি পরিবার থাকতে পারবে। সেজন্যে, সরকারকে ২২ লক্ষ বস্তিবাসী'র জন্যে ৪ লক্ষ ৪০ হাজারটি ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট করে দিতে হবে।

কিভাবে সম্ভব এই স্বপনকে বাস্তবায়ন?ঃ

প্রথমেই হিসেব করে নেওয়া যায় একেকটি ফ্ল্যাট বানাতে কত খরচ করতে হবে। বর্তমানে একেকটি ফ্ল্যাট তৈরী করতে প্রতি বর্গফুটে ১২০০ টাকা খরচ হয়। সেই মোতাবেক, ৬০০ বর্গফুটের জন্যে খরচ হবে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এখন, এই ফ্ল্যাট যদি হায়ার পার্চেজ ভিত্তিতে ৩০ বছরের জন্যে বস্তিবাসীদেরকে প্রতি মাসে ২০০০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে বস্তিবাসীদের আবাসনের জন্যে বর্তমান ব্যয় সীমার মাঝেই পড়ে। কারণ, ৩০ বছরে বস্তিতে থাকার জন্যে ঐ একই পরিমাণ টাকাই খরচ করতে হবে।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, দেশে সরকারের মালিকানায় থাকা অব্যবহৃত খাস জমির পরিমাণ ১২,০০০ একর। এই সরকারী জমিতে প্রতি ২০ কাঠায় যদি একেকটি ফ্লোরে ৪ ইউনিট করে ২০ তলার ভবন বানানো যায়, সেই হিসেবে ৪ লক্ষ ৪০ হাজারটি বাসার জন্যে ৫,৫০০টি মাল্টি-স্টরিড ভবন লাগবে। আর, এই ভবনগুলোর জন্যে দরকার হবে ১ লক্ষ ১০ হাজার কাঠা বা ১৮১৮.১৮ একর জমি।

এই ফ্ল্যাটগুলো'র জন্যে সরকারকে ৩১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে যা ৩০ বছরে উঠে আসবে। সরকার পারবে কি এই পরিমাণ টাকা খরচ করতে?

ছবিসূত্রঃ Rampant childhood -_Shamim Tirmizi, wikimedia, 9 March 2014, Click This Link

=====
২য় প্রকাশ
========

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫২
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×