মেয়েটাকে চারদিকে দিয়ে ঘিরে ধরেছে একদল হায়েনারুপী মানুষ। টেনে-হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ঝোপের ভিতরে। মেয়েটি কি করবে বুঝতে পারছে না। সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার প্রচন্ড ইচ্ছায় মেয়েটি হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলো- 'বাঁচাও!'
মুহুর্তে তার হাত থেকে ছিটকে পড়া মোবাইলফোনটির একটি বিশেষ এপ সেই চিৎকারটি সনাক্ত করতে পারলো। সজীব হয়ে উঠলো মোবাইলফোনের স্ক্রীন। এপটি থেকে একটি বিশেষ সিগন্যাল চলে গেলো সবচেয়ে কাছের মোবাইল টাওয়ারে। সেখান থেকে মূহুর্তে জেলার 'কমান্ডো এগেইন্সট রেপ (কার)' বাহিনীতে।
এই বাহিনীটি সম্প্রতি গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার। ধর্ষন ঠেকাতে সেনা-নৌ-বিমান আর পুলিশ বাহিনী থেকে নির্বাচিত বিশেষ সদস্যদের নিয়ে গঠিত এটি। ৬৪ জেলায় রয়েছে ৬৪টি দল এই কাজে জড়িত। তাঁদেরকে দেওয়া হয়েছে ৬৪টি এপাচি হেলিকপ্টার যা মাত্র ১ মিনিটের মধ্যে জেলার যে কোন প্রান্তে যেতে পারে, তা যতই দূর্গম হোম না কেন।
'কমান্ডো এগেইন্সট রেপ (কোর)'-এর প্রধান ক্যাপ্টেন সাজিদের রুমের ইমার্জেন্সী বাতিগুলো সশব্দে বেজে উঠলো। পুরো অফিসে পাগলাঘণ্টী বাজছে। কোথাও ধর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে! চঞ্চল হয়ে উঠলো সাজিদের চোখ। তার সামনের ইলেক্ট্রনিক ম্যাপের একটি এলাকা নির্দেশ করে লাল বাতি জ্বলছে। ঐখানেই ঘটনা ঘটছে। খুব দ্রুত হিসাব করলেন সাজিদ। এপাচি দিয়ে যেতে ৪০ সেকেন্ড লাগবে। আর যন্ত্র ফড়িংটিকে চালু করে আকাশে উঠাতে লাগবে ১ মিনিট। এই ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে মেয়েটিকে বাঁচানো সম্ভব?
নিজের নাইন এম এম পিস্তলটিকে হলস্টারে ভরতে ভরতে রুম থেকে দৌড়ে বেরুলেন সাজিদ। ইতিমধ্যে সার্জেন্ট অতনু'র নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি ছোট্ট দল তাঁর অপেক্ষায় বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে যেতে যেতে সাজিদ জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন হেলিকপ্টারের পাখাগুলো ঘুরা শুরু করেছে। যখন তাঁরা তাতে চড়ে বসলেন, ১ মিনিটও পার হয়নি। মুহুর্তে আকাশে উঠে গেলো এপাচি।
হেলিকপ্টারে বসেই হাতের জিপিএস সিগনাল মেশিনে ট্রেস করলেন জায়গাটা কোথায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২-এর পাঠানো ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। দুর্বৃত্তরা ৬ জন। একটি শ্যামলা মেয়েকে মাটিতে শুইয়ে চারজন চার হাত পা ধরে রেখেছে। আরেকজন মেয়েটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
দাঁতে দাঁত চাপলেন সাজিদ। একটি সবুর করো, বোন। মনে মনে বললেন ক্যাপ্টেন। ঘাড়ে একটি হাত পড়তেই পিছনে তাকালেন তিনি। কঠিন মুখে অতনু তাঁর দিকে চেয়ে আছেন।
'আমরা আর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে স্পটে পৌঁছে যাবো, লিডার।'
আকাশ ভেদ করে ক্রাইম স্পটের দিকে ধেয়ে চললো ছোট্ট সেই দলটি।
এরপর? এরপর কি হলো? তাঁরা কি বাঁচাতে পেরেছিলেন মেয়েটির সম্ভ্রম?
আমার কেন যেন বার বার মনে হয়, আমার কল্পনার সেই ছোট্ট দলটি পেরেছিলো সেই জায়গায় পৌঁছাতে। পেরেছিলো সেই বোনটির সম্ভ্রম বাঁচাতে। এরপরে, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলো সেই হায়েনারুপী মানুষগুলোকে।
আমার আরো মনে হয়, বন্ধু কোন দেশের সহযোগিতায় নেচারাল লেঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এন,এল,পি) ব্যবহার করে তৈরী মোবাইল এপ এবং কমান্ডো দল খুব শীঘ্রই গঠন করবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশ যেখানে দিনে গড়ে ৩টি শিশু নির্যাতিত হয়।
সেই দিন বদলের অপেক্ষাতেই আমি।
====
২য় প্রকাশ
=======
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩০