somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চটপটে বা এজাইল মানসিকতা যেভাবে গড়ে উঠে

২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দর্শনশাস্ত্রে পুরোনো একটি কৌতুক আছে। একবার, দুটি মাছ সমুদ্রে সাঁতার কাটছে। তাদের একজন বলে উঠলো- 'আজ পানিটা বেশ ঘোলা মনে হচ্ছে।' তা শুনে অন্য একজন বললো- 'আমি তো কোন পানিই দেখছি না!' এই মজার কৌতুকটি আমাদের এটা বুঝতে শেখায় যে, আমরা যেভাবে কাজ করি, তা মাঝে মাঝে আমাদের বাস্তবতার অংশ হয়ে যায়। এটা আসলে 'পানি কি' তা চিন্তা না করেই তাতে ভেসে থাকার মতো।

জীবনের চলার পথে, আমরা কিভাবে চলতে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলি না। বরং, যেভাবে চলছি সেটাই একমাত্র চলার পথ বলে মনে করে বসি। আসলে, আমরা যেভাবে কোন কিছুকে কাজে পরিণত করি, সেই ধরণটা আমাদের মানসিকতার পরিচায়ক। আপনার কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকতে পারে যা আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলে। হতে পারে আপনি একজন প্রকল্প পরিচালক বা ডাটাবেজ ইঞ্জিনিয়ার, আপনি যখন কোণ কাজে জড়িয়ে পড়েন, তখন আপনি শুধুই এই সম্পর্কিত দক্ষতাগুলোর উপর জোর দেন। সেই পর্যায়ে, বিশেষ কোন পরিকল্পনা করা আপনার জন্যে স্বাভাবিক মনে হতে পারে। অন্যথায়, পুরো কাজটা আপনাকে দ্বিতীয়বার করতে হতে পারে যা আপনার জন্যে ব্যয়বহুল হয়ে উঠে। এরফলে, আপনি যে পানিতে সাঁতার কাটছেন তা ঘোলা মনে হতেই পারে!

অনেক সময়, একজন বিশেষজ্ঞের চেয়ে একসাথে বহু কাজে পারদর্শী কর্মীকে কাজে নিয়োগ করলে বেশি ফল পাওয়া যায়। এতে করে, কোন মানুষ বিশেষ কোন জ্ঞান গভীর ভাবে জানার চেয়ে একটি দলের সবাই-ই সেই জ্ঞানের কিছু কিছু অংশ জানবে। এমন নীতি একটি দল বা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।



'স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা' একটি সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। এই ধরণের পরিকল্পনা আমাদের বারংবার কোন কাজ বন্ধ করার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার চেয়ে অনিশ্চয়তা আলিঙ্গনের দিকে নিয়ে গিয়ে কোন কাজকে আরো ফলপ্রসূ করে তুলে। এই ধরণের আইডিয়াগুলোকে এখনকার সময়ে 'এজাইল বা চটপটে মানসিকতা' নামে অভিহিত করা হয়। এভাবেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে। এরকম মানসিকতাই গড়ে তোলা জরুরী। একই কাজ বিভিন্ন পদ্ধতিতে করার ব্যাপারে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না। বরং, কাজটা কোন ভাবে কিভাবে করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করাই যথেষ্ট হবে।

বর্তমান বিশবের অনেক প্রতিষ্ঠানই এজাইল পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে। তারা হয়তো তাদের প্রকল্প পরিচালককে 'স্ক্রাম মাস্টার' নামে ডাকে। হতে পারে তাদের রিকোয়ারমেন্টগুলোকে এজাইল স্টাইলে 'ইউজার স্টোরি' ভাগ করতে পারে। এইসব ধরণের এজাইল নীতিই ঠিক আছে। তবে, এইসব কিছু আপনাকে উঁচু স্তরের উৎপাদনশীলতা বা প্রোডাক্টিভিটি অর্জন করতে সাহায্য করবে না।

এজাইলের আসল উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার টিম বা দলের মানসিকতা বুঝতে হবে। আপনার দল কিভাবে কাজ করে আপনাকে সেগুলোর আসল বাস্তবতা খুজে বের করতে হবে। আপনার দল তখনই ভালো করবে, যখন এজাইল চর্চার করার সাথে সাথে আপনি আপনার দলের সদস্যদের মানসিকতা বুঝতে পারবেন।

একটি ভালো এজাইল দলের দুটি গুণ থাকবে-
১) তারা তাদের কাজের ব্যাপারে কঠিন প্রশ্ন করবে,
২) তারা তাদের নিজেদের গুণগত উন্নতির ব্যাপারে সব সময় রাজি থাকবে।



আপনি যদি এজাইলকে শুধুই একটি নতুন সংস্করণের কোন সরঞ্জাম ভেবে থাকেন, তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। আপনি আপনার দলকে শুধুই এজাইল নীতি অনুসরণ করাতে চাইবেন না যতক্ষণ না তারা এজাইল মানসিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

সেজন্যে, কোন কাজ 'কেন' করতে হবে সেই প্রশ্নের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা জরুরী। আপনাকে এই কারণে এজাইল নীতিগুলো অনুসরণ করার সময় সেগুলোর পিছনের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এখন থেকে এভাবেই চিন্তা করতে শিখুন। পরবর্তীতে, আমরা কিভাবে ছোট ছোট ভাগে একই কাজের পুনরাবৃত্তি বা 'স্প্রিন্ট' কেন করতে হবে তাঁর গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

এই স্প্রিন্টগুলো সাধারণতঃ দুই সপ্তাহব্যাপী হয়। এগুলো যখন আপনার সামনে এসে উপস্থিত হবে, তখন সেগুলো কিভাবে করবে সেই চিন্তা করার চেয়ে স্প্রিন্টগুলোর পিছনের কারণ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকুন। 'কেন সংক্ষিপ্ত স্প্রিন্ট আপনার দলের ক্ষিপ্রতা বা এজিলিটি উন্নতি করে'- এই ধরণের প্রশ্নগুলো আপনার দলের মানসিকতা পরিবর্তনের সময়ে আপনাকে সাহায্য করবে।

আপনি যখন অল্প সময়ের জন্যে একই ভাবে কোন কাজ করে যান, তখন খুব আপনি খুব একটা উন্নতির দেখা পাবেন না। বরং, আপনি যদি কোন কাজ কেন অন্য ভাবে করতে হবে তা বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি একটি ভালো এজাইল দলের অংশ হয়ে উঠতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×