
আমি যে এলাকায় থাকি, সেখানে লোডশেডিং কম হোয়। তার উপর রয়েছে ২৪ ঘণ্টার জেনারেটর ব্যাকআপ। তাই, লোডশেডিং-এর ভয়াবহতা খুব একটা বুঝছি না। কিন্তু, অন্যান্য এলাকায় তা ভয়াবহ ভাবে আঘাত করছে। যাদের কল-কারখানা আছে, সেখানে লোডশেডিং পণ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে- পারমানবিক বিদ্যুৎ ছাড়া উপায় নেই। রূপপুরের চুল্লি যত তাড়াতাড়ি নির্মাণ হবে, তত তাড়াতাড়ি দেশ এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু, এর আগ পর্যন্ত কি করা যায়?
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯৬.২% মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে ৪৮৭৯.৮৫ গিগাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হোয়। সেই সাথে, ২২৫৬ গিগাওয়াট-ঘণ্টা পরিমাণ বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানী করা হোয় ২০২০-২০২১ সালে। ২০৩০ সালের দিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা গিয়ে দাঁড়াবে ৩০,০০০ মেগা ওয়াট। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ২৫,৫১৪ মেগাওয়াট।
বিদ্যুতের চাহিদা মিটাতে যা করতে হবেঃ
প্রথমেই যা করতে হবে, তা হচ্ছে, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কতটুকু তা সঠিক ভাবে বের করা। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিভাগ যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তা-ই জনগণের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু, এমন যদি হোয় যে, জনগণের চাহিদা যতটুকু হবে, ততটুকুই বিদ্যূৎ বিভাগ উৎপাদন করবে, তাহলে বিদ্যুৎ ঘাটতি আর থাকবে কি? থাকবে না।
সেজন্যে, যা করতে হবে তা হচ্ছে, যেসব পণ্যে বিদ্যুৎ লাগে, সেগুলো কতটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আছে, তা আগে বের করে হবে। আবাসিক, বাণিজ্যিক, পরিবহন এবং শিল্প - আমরা আমাদের বিদ্যুৎ শক্তি মূলত এই চারটি অর্থনৈতিক খাতে ব্যবহার করি। আমাদের ঘর গরম এবং শীতল করা, অফিস ভবনে আলো জ্বালানো, গাড়ি চালানো, মালবাহী পরিবহনে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে পণ্যগুলির উপর নির্ভর করি সেগুলোর জন্যে শক্তি প্রয়োজন। টিভি-ফ্রিজ, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশন, এসব গৃহস্থালি পণ্যে বিদ্যুৎ খরচ হোয়।

বিদ্যুৎ খরচের হিসাব বের করতে হবেঃ
এখন, কার কাছে কতগুলো এসব পণ্য আছে তা যদি আমরা বের করতে পারি, তাহলে, বিদ্যুতের চাহিদা বের করা সম্ভব। এক হিসেবে দেখা গিয়েছে, যেখানে ২০১২ সালে এয়ার কন্ডিশনের চাহিদা ছিলো ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ইউনিট, সেখানে ২০১৮ সালে তা ২ লক্ষ ২ হাজার ইউনিটে এসে দাঁড়ায়। এখন যদি এসি কোম্পানিগুলোর কাছে থেকে সঠিক ডাটা পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের দেশের গৃহস্থালি কাজে কতটুকু বিদ্যুৎ খরচ হোয়, তার একটি গড় হিসেব বের করা যাবে। কারণ, ঘর গরম ও ঠাণ্ডা করার কাজে প্রায় ৪০% আবাসিক বিদ্যুৎ খরচ হোয়। এর সাথে আছে কলকারখানার হিসাব, পরিবহন তথা বাস-ট্রাক-গাড়ির হিসাব।
এই চাহিদা বের করার পরে কি হবেঃ
যদি প্রত্যেকটি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ইউনিটকে প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে অগ্রিম ১-৩ মাসের কার্ড কিনে ফেলতে বলা হোয়, তাতে দূর্ভোগে থাকা মানুষ খুশি মনেই কার্ডগুলো কিনে নিবে। এতে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের হাতে অগ্রিম কাঁচা টাকা এসে যাবে। সেই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কোম্পানীকে বিদ্যুতের দাম অগ্রিম পরিশোধ করে দিলে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে আর ঘাটতি থাকবে না।
বিদ্যুৎ অগ্রিম কেনার জন্যে জনগণকে উৎসাহিত করতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ইনফ্লুয়েন্সার আছেন, তাঁদের মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহিত করার ব্যবস্থা করলে পাবলিক সেন্টিমেন্ট সরকারের সাথে থাকবে সব সময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




